মাঠ পর্যায়ের কর্মস্থলে অনুপস্থিত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তালিকা চেয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। বিভাগীয় কমিশনারের কাছে এই তালিকা চাওয়া হয়েছে। বিভাগীয় কমিশনাররা তালিকা পাঠাতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নির্দেশ দিয়েছেন। সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে যারা কর্মস্থল ত্যাগ করেছেন তাদেরই নাম তালিকাভুক্ত হচ্ছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দেশে ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি শুরু হয়েছে। ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি চলবে। সাধারণ ছুটির মধ্যে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ কর্মস্থলেই উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। তারপরও অনেকেই কর্মস্থলে উপস্থিত নেই। বিশেষ করে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কর্মহীন শ্রমজীবী মানুষের মাঝে ত্রাণ সহায়তা বিতরণের সময় ট্যাগ অফিসার পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে অনুপস্থিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তালিকা চেয়ে পাঠানো হয়।
এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজুর রহমান পিএএ। তিনি শুক্রবার রাতে যুগান্তরকে বলেন, করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ নিজ কর্মস্থলে উপস্থিত থেকে করোনার বিস্তাররোধে সহায়তার নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু মাঠপর্যায়ের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মস্থলে উপস্থিত নেই বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর পর অনুপস্থিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামের তালিকা চেয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এদের নাম পাঠানোর জন্য ডিসিদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বিভাগীয় কমিশনারদের কাছে ৯ এপ্রিল পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়- ‘উপজেলা পর্যায়ের ট্যাগ অফিসারদের ইউনিয়নভিত্তিক সংযুক্ত করে তাদের কাজে লাগাতে হবে। যারা কর্মস্থলে উপস্থিত নেই তাদের তালিকা পাঠাতে হবে। একইভাবে জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের উপজেলাভিত্তিক দায়িত্ব দিয়ে সামগ্রিক বিষয়টি সমন্বয় ও মনিটরিংয়ের কাজ করতে হবে। যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মস্থলে উপস্থিত নেই তাদের নামের তালিকা পাঠাতে হবে।
করোনার কারণে প্রথমে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করে সরকার। পাশাপাশি দেশের বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সার্বক্ষণিক তাদের কর্মস্থলে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
২২ মার্চ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) প্রতিরোধ ও এর প্রাদুর্ভাবজনিত যেকোনো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানের লক্ষ্যে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বিভাগ/জেলা/উপজেলা পর্যায়ের সব সরকারি দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সার্বক্ষণিক কর্মস্থলে উপস্থিতি নিশ্চিতকরণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হল।’
এরপরও ছুটি পাওয়া হাজার হাজার মানুষ কর্মস্থল ছেড়ে গ্রামের বাড়ি যান। পরিস্থিতি সামাল দিতে ২৫ মার্চ থেকে সব ধরনের যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
একাধিক ডিসি ও ইউএনওর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাঠ পর্যায়ের অধিকাংশ দফতরের কর্মকর্তাদের পাওয়া যাচ্ছে না। ত্রাণ বিতরণের সময় সরকারি কর্মকর্তা পাওয়া যায় না। কাউকে দায়িত্ব দেয়া হলে পিপিই, গাড়ি ছাড়া কেউই যেতে চায় না। অনেককে তো কর্মস্থলেই পাওয়া যাচ্ছে না।
ঢাকা বিভাগের একজন ডিসি নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে বলেন, ‘পুলিশ, সিভিল সার্জন, সেনা প্রতিনিধি ছাড়া কাউকে মাঠে পাচ্ছি না। ত্রাণ তৎপরতার সময় ট্যাগ অফিসরদেরও পাওয়া যাচ্ছে না।’
বরিশাল বিভাগের একটি উপজেলার ইউএনও যুগান্তরের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কাজের সময় সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে কাক্সিক্ষত সাড়া পাচ্ছি না। যাকেই বলি তাকে পিপিই ও গাড়ি দিতে হবে। নইলে তারা কাজে যাবে না। এখন আমি ডাক্তারদের পিপিই দিতে পারি না, তাদের দেব কী করে? লকডাউন করা বাড়িতে বিদ্যুতের লাইন দিতে বলায় ইলেকট্রিশিয়ান পিপিই চায়। বিদ্যুতের খুঁটিতে লাইন দিতে কেন পিপিই লাগবে? এই হল মাঠের অবস্থা।
সূত্র-যুগান্তর