বিএনপির মহাসমাবেশে হামলা এবং দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলীয় নেতাকর্মীকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে বিএনপির ডাকা তিনদিনের অবরোধ কর্মসূচির প্রথমদিন কুষ্টিয়ায় চলছে।
আজ মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) ভোর ৬টা থেকে এ অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। এরফলে দূর পাল্লার যাত্রীবাহি পরিবহন বন্ধ রয়েছে। যাত্রীদের ভোগান্তী বেড়েছে চরমে। তারা ইজিবাইক ও সিএনজিতে চলাচল করছে।
দূরপাল্লার পরিবহন বন্ধ থাকায় কিছুটা বিপাকে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। অধিক ভাড়া দিয়ে সিএনজি বা অন্যান্য পরিবহনে উপজেলা শহরগুলোতে যাতায়াত করতে দেখা গেছে অফিসগামী লোকজন সহ সাধারণ যাত্রীদের।
এদিকে জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী, কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, কুষ্টিয়া জেলা বিএনপি’র সিনিয়র সহ-সভাপতি ও দৌলতপুর উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি, সাবেক সংসদ সদস্য, আলহাজ্ব রেজা আহম্মেদ বাচ্চু মোল্লা ও জেলা যুবদলের সহসভাপতি মেজবাউর রহমানকে আটক করেছে পুলিশ।
আজ মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে শহরের আলফামোড় এলাকার নিজ বাড়ি থেকে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য সোহরাব উদ্দিনকে একটি মাইক্রোবাসে করে নিয়ে যান জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
একই সময় জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ মেহেদী আহমেদ ও জেলা যুবদলের সহসভাপতি মেজবাউর রহমানকে জেলা বিএনপি কার্যালয় থেকে আটক করে নিয়ে যায় সদর মডেল থানার পুলিশ। এছাড়াও দৌলতপুর থেকে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপি’র সিনিয়র সহ-সভাপতি ও দৌলতপুর উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি, সাবেক সংসদ সদস্য, আলহাজ্ব রেজা আহম্মেদ বাচ্চু মোল্লাকে আটক করে।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আশিকুর রহমান জানান, সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী, অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন ও মেজবাউর রহমানকে নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
বিএনপির অবরোধ কর্মসূচিতে নাশকতার প্রস্তুতিকালে হাত বোমা,লোহার রড লাঠিসহ তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই দুই নেতার বিরুদ্ধে নাশকতার একাধিক মামলাও রয়েছে। তবে কোন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে জানতে চাইলে পারে জানানো হবে বলে জানান ওসি।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সোহরাব উদ্দিনের বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক আবদুল আলিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সাদাপোশাকধারী দু-তিনজন পুলিশ সদস্য এসে খোঁজখবর নেন। এরপর ওপরে উঠে সাহেবের কক্ষে যান। স্যারকে জানালে স্যার বেরিয়ে আসেন। ওই সময় ডিবি সদস্যরা রুম এবং পুরো বাড়ি তল্লাশি চালান।’
দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ডিবি পুলিশের সদস্যরা সোহরাব উদ্দিনকে বাড়ি থেকে বের করে একটি মাইক্রোবাসে করে কুষ্টিয়া শহরে পুলিশ লাইনসের দিকে নিয়ে যান। এ সময় হাস্যোজ্জ্বল মুখে হাত নাড়েন সোহরাব।
এরআগে রোববার দুপুরে কুষ্টিয়ায় বিএনপির ২১৬ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা করেছে পুলিশ। মামলায় ১৬ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা ১৫০ থেকে ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
গত রোববার দুপুরে মামলাটি করেন কুষ্টিয়া সদর পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) দিপংকর কুমার দেবনাথ।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, শনিবার রাত সাড়ে সাতটার দিকে কুষ্টিয়া শহরের এনএস রোডের সিঙ্গার মোড়ে বিএনপির মহাসমাবেশের সমর্থনে নেতা-কর্মীরা মিছিল বের করেন। এ সময় বেশ কিছু উচ্ছৃঙ্খল নেতা-কর্মী দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনা, যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের জন্য সমবেত হন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত হলে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের ১৭০ থেকে ২২০ জন উচ্ছৃঙ্খল নেতা-কর্মী দৌড়ে পালিয়ে যান। এ সময় পুলিশ পাঁচজনকে হাতেনাতে আটক করে। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ৪টি অবিস্ফোরিত ককটেল, ১৪টি বাঁশের লাঠি, ৯টি লোহার রড ও ৪০টি ইটের টুকরা উদ্ধার করে।
পুলিশের করা এই মামলার আসামিরা হলেন জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মইদ (৫৩), শামিমুল হাসান (৫২), সদর থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম (৫২), জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মুজ্জাকির রহমান (২৯), সদস্যসচিব খন্দকার তসলিম উদ্দিন (৩৩), জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন (৫১), জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আবদুল হাকিম (৪০), সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ (৪০), শহর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. শাহিন (৪৫), জেলা কৃষক দলের বহিষ্কৃত আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম (৪২) ও ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক আমজাদ হোসেন (৪২)।