কুষ্টিয়া শিল্পকলা একাডেমি মঞ্চে আজ সন্ধ্যায় মঞ্চস্থ হবে গ্রামীণ সাংবাদিকতার পথিকৃৎ কাঙাল হরিনাথের জীবন ও কর্ম নিয়ে নাট্যকার মাসুম রেজার রচনা ও নির্দেশনায় এডিটর মহাশয়’।
কুষ্টিয়ার কুমারখালীর গ্রামীণ জনপদে জন্ম নেয়া কাঙাল হরিনাথ মজুমদার কিভাবে হয়ে উঠেছিলেন নিপীড়িত মানুষের আশা ভরসার আশ্রয়। সেই সত্য ঘটনাবলীই এই নাটকে উঠে আসবে এ নাটকে।
মাসুম রেজার নিজেই নাটকটির রচনা ও নির্দেশনায় রয়েছেন। কয়েক সপ্তাহ ধরে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে চলছে দফায় দফায় রিহার্সাল। সেখানেও তার উপস্থিতির দেখা মেলে।
জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে মঞ্চস্থর জন্য ইতিমধ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। বোধন থিয়েটার কুষ্টিয়া এ নাটকটির প্রযোজনা করেছে। এডিটর মহাশয় বোধন থিয়েটারের ২৮তম প্রযোজনা।
নাটকটির পরিকল্পনা ও সার্বিক বিষয় নিয়ে নাট্যকার মাসুম রেজা বলেন, এ নাট্যের সময়কাল ১৮৬৩ সালের গোড়ার দিক থেকে শুরু। এই সময়কালে কুমারখালী থেকে গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা শিরোনামে একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশ হতে শুরু করে। যার এডিটর কাঙাল হরিনাথ মজুমদার। আঠারোশ’ বাহাত্তর সালে যখন পাবনা ও সিরাজগঞ্জে কৃষক বিদ্রোহের আগুন জ্বলে ওঠে তখন তৎকালীন জমিদাররা বিদ্রোহ সংগঠনের অভিযোগ আনেন গ্রামবার্ত্তার বিরুদ্ধে। কাঙালকে উপুর্যুপরি হত্যাচেষ্টা চালাতে থাকেন তাঁরা। সকল লোভ ও ভয়কে উপেক্ষা করে একজন এডিটর যখন বলে ওঠেন; জমিদার যদি তাঁর ছোবল সঙ্কুচিত না করেন, প্রজাদের যত্ম না নেন, তবে আমার পত্রিকা নীরব থাকবে না। সেই এডিটর তখন আর কেবল এডিটর থাকেন না। মানুষের কাতারে নেমে তিনি সেইসব মানুষেরই একজন হয়ে যান। এ নাট্যের সকল ঘটনাবলীই সত্যনির্ভর। সেইসব ঘটনাকে শব্দ, নিঃশব্দ ও সংলাপে মূর্ত করা হয়েছে।
জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম বলেন, নাটকটি উপস্থাপনার ক্ষেত্রে যে মঞ্চসজ্জা ব্যবহৃত হয়েছে তা বাস্তবতা বা ইতিহাসকে আশ্রয় করে নির্মিত হয়নি, কারণ সেই সময়কে প্রকৃতরূপে মঞ্চে স্থাপন যেমন দুরূহ তেমনি ব্যয়বহুল। ফলে আবহ তৈরীতে ইঙ্গিতবহ মঞ্চনির্মাণ করা হয়েছে। পোশাক পরিকল্পনার ক্ষেত্রে একটা সাধারণীকরণ মাপকাঠি মেনে চলা হয়েছে। যে ধরণের পরিধানে একজন কৃষককে বা জমিদারকে, ইংরেজ সাহেবকে আঁচ করে নেওয়া যায় সে ধরণের পরিচ্ছদেই সজ্জিত হবেন এডিটর মহাশয়ের অভিনয়শিল্পীরা।
মাসুম রেজা আরো বলেন, বোধন থিয়েটার আমার নিজের দল আমি এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। নিজের দলে, নিজের লেখা নাটকের নির্দেশনা দিতে পারার আনন্দে আমি উল্লসিত। ইতিহাসে এমন সাক্ষ্য নেই যে কাঙালের সাথে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাক্ষাত হয়েছিলো, এমন সাক্ষ্যও নেই যে তাঁদের সাক্ষাত হয়নি। ফলে আমি এ নাট্যের অন্তে রবিঠাকুরের সাথে কাঙালের কল্পিত কথপোকথন দেখিয়েছি। ইতিহাসে কল্পনার স্থান না থাকলেও সাহিত্যে তা সিদ্ধ। কোন অভিপ্রায়ে আমি তা করেছি তা এ নাট্য দর্শনে বোধগম্য হবে।
জেলা শিল্পকলা একাডেমির সুত্রে জানা গেছে, এ নাটকটি দেখতে দর্শকদের প্রদর্শনী মুল্য রাখা হয়েছে একশো এবং ৫শ টাকা। ইতিমধ্যে অনেক দর্শক অগ্রিম টিকিট বুক দিয়েছে।