গত ২৪ ঘন্টায় ৯৯০ জনের নমুনা সংগ্রহ করে ২৯১ জনের শরীরে কোভিড-১৯ করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়। এছাড়াও ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সোমবার রাতে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের কার্যালয় সুত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এদিকে করোনার ভ্যাকসিন (টিকা) নিতে কুষ্টিয়ার কলকাকলি মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মানুষের উপচে পড়া ভীড় দেখা গেছে। সকাল সাড়ে ৯ টায় টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু হলেও ভোর থেকেই মানুষ কেন্দ্রে ভীড় জমাচ্ছেন।
টিকা প্রদান শুরু হওয়ার আগেই সেখানে হাজার-হাজার মানুষের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। সেখানে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মানার কোন প্রবণতা দেখা যায়নি। মানুষের উপচে পড়া ভীড় সামাল দিতে সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এদিকে ভীড়ের কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই সোমবার বেলা পৌনে ১২ টায় টিকা ফুরিয়ে যায়। টিকা না পেয়ে শেষ পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষ নিজেদের গন্তব্যে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডা: এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম জানান, গত শনিবার থেকে কুষ্টিয়ায় শুধু একটি কেন্দ্রে করোনার টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু হয়। এর আগে গত দু দিন ধরে কুষ্টিয়া আরপিটিআই কার্যালয় কেন্দ্রে এই টিকা প্রদান কার্যক্রম চলছিল। কিন্তু সেখানে মানুষের উপচেপড়া ভীড়ের কারণে স্থান সংকুলন না হওয়ায় রোববার কেন্দ্র পরিবর্তন করে পাশেই কুষ্টিয়ার কলকাকলি মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নেয়া হয়। গতকাল সোমবার টিকা প্রদান কেন্দ্র কলকাকলি মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় , আগের দিনের মতই সেখানে ভীড় উপচে পড়ছে। বিদ্যালয়ের দুটি কক্ষের একটি কক্ষে পুরুষ আর একটি কক্ষে নারীদের টিকা দেওয়া হচ্ছে। কক্ষ থেকে শুরু হওয়া লাইন বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে মাঠ ছাপিয়ে একেবারে প্রধান ফটকের বাইরে চলে গিয়ে রাস্তায় এসে ঠেকেছে। বাইরে ও সামনের সড়কে মানুষের দীর্ঘলাইন। সব মিলিয়ে অন্তত চার থেকে পাঁচ হাজার মানুষ টিকা কেন্দ্রে জড়ো হয়েছেন। টিকা নিতে আসা লাইনে দাঁড়ানো কয়েক জনের সাথে কথা হয়।
তারা জানান, গত চার দিন আগে তারা রেজিস্ট্রেশন করেছেন। কিন্তু কোনো এসএমএস পাননি। তারপরও এসেছেন টিকা নিতে। আবার কয়েকজন জানান, তাঁরা এসএমএস পাওয়ার পর টিকা নিতে এসেছেন। টিকা নিতে আসা কাকলী খাতুন জানান, টিকা নেয়ার জন্য তিনি সকাল ৭ টায় কেন্দ্রে এসেছেন। একটু আগে তিনি টিকা নিতে পেরেছেন। টিকা নিতে এসে ধাক্কাধাক্কি; আর অব্যবস্থাপনা দেখে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
সিভিল সার্জন ডা: এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম জানান, শনিবার টিকা নেয়ার জন্য ৩২৬ জনকে এসএমএস পাঠানো হয়, রোববার ৫শ জন এবং সোমবার ৬শ জনকে এসএম এস পাঠানো হয়। কিন্তু হাজার হাজার মানুষ টিকা নেয়ার জন্য ভীড় জমানোর কারণে শনিবার ১০২৮ জন, রোববার ১০৫৬ জন এবং সোমবার ৬শ জনকে টিকা প্রদান করা হয়েছে। সিভিল সার্জন জানান, যারা এসএমএস পাচ্ছেন কেবল মাত্র তারাই টিকা নিতে পারবেন। কিন্তু কেউই কথা শুনছেন না।
শুধু রেজিস্ট্রেশন কার্ড নিয়েই টিকা নিতে কেন্দ্রে চলে আসছেন। আগের তুলনায় এখন টিকা নিতে ভিড় বাড়ার কারণ কি এ প্রশ্নের জবাবে সিভিল সার্জন জানান, আগে বয়স ছিল ৪০ বছর। এখন বয়স ৩৫ বছর করা হয়েছে। তাছাড়া মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হয়েছে। যে কারণে ব্যাপক সংখ্যক মানুষ টিকা নিতে কেন্দ্রে ভিড় করছেন। এদিকে ভীড়ের কারণে পরিস্থিতি সামাল দিতে টিকা কেন্দ্রে ব্যাপক সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। যারা এসএমএস পাবেন কেবল মাত্র তাদেরকেই টিকা প্রদান করা হবে। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে কুষ্টিয়া শহরে এ সংক্রান্ত মাইকিং করার প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সূত্রে জানা যায়, গত ১৯ জুন থেকে কুষ্টিয়ায় চীনা ভ্যাকসিনের ১ম ডোজ প্রদান শুরু হয়। তবে সেই টিকা সাধারণের জন্য উন্মুক্ত ছিল না। স্বাস্থ্য বিভাগ, মেডিকেল ষ্টুডেন্টসহ দশ ক্যাটাগরির মানুষ এই টিকা নিতে পেরেছেন। আর সাধারণের জন্য যারা অনেক আগে রেজিষ্ট্রেশন করেছিলেন তাদেরকে গত শনিবার থেকে টিকা দেয়া হচ্ছে। মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) থেকে জেলা সদর ও উপজেলায় একযোগে গণটিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু হবে। জেলায় এবার ৩০ হাজার ৪শ টিকা পাওয়া গেছে। সদরের জন্য ১০ হাজার ৪শ এবং বাকি ৫ উপজেলায় ২০ হাজার টিকা প্রদান করা হবে বলে জানা গেছে। এদিকে গত ২৪ ঘন্টায় ৯৯০ জনের নমুনা সংগ্রহ করে ২৯১ জনের শরীরে কোভিড-১৯ করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়। এছাড়াও ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।