কুষ্টিয়ায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে নৌকার বিপক্ষে লড়বেন সাবেক দুই এমপি কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রেজাউল হক চৌধুরী ও কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রউফ।
তারা দুজনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এবং স্থানীয় নির্বাচন অফিস থেকে মনোনয়ন ফরম উত্তোলন করেছেন।
রেজাউল হক চৌধুরী ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আফাজ উদ্দিন আহমদকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি।
আবদুর রউফ কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসন থেকে ২০১৪ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। আবদুর রউফ কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার বাঁশগ্রাম গ্রামের বাসিন্দা।
তফসিল ঘোষণার পর আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে কুষ্টিয়ার ৪টি সংসদীয় আসন থেকে ৪১ জন মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন।
তাদের মধ্যে বর্তমান সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফ, সেলিম আলতাফ জর্জ, আকাম সরওয়ার জাহান বাদশাহকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তবে কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনের প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি।
কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ, কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনে সংসদ সদস্য ও দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ কা ম সরওয়ার জাহান বাদশাহ, কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ মনোনয়ন পেয়েছেন।
এদিকে কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে মাহাবুব-উল আলম হানিফের আসনটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও পাঁচবারের পৌর মেয়র আনোয়ার আলীর ছেলে পারভেজ আনোয়ার তনু।
গতকাল সোমবার বিকেলে নিজের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. সহিদুর রহমানের কাছ থেকে তিনি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
হানিফ ছাড়া এ আসন থেকে মনোনয়নপত্র তুলেছিলেন বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার খাদ্য প্রতিমন্ত্রী ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ডা. এ এফ এম আমিনুল হক রতন, সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আনজুমান লাইলা বানু এবং ইউকে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মাহাতাবুল হক জয়।
তবে দলীয় নেতা-কর্মীরা কুষ্টিয়া-৩ আসনে হানিফের বিকল্প কাউকে ভাবছিলেন না। কারণ গত ১০ বছরে কুষ্টিয়া সদর আসনে যে উন্নয়ন হয়েছে, তাতে মাহবুব-উল আলম হানিফের প্রতি দলমত-নির্বিশেষে সবাই আস্থা রেখেছেন। এবার তৃতীয়বারের মতো সদর আসন থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি।
কুষ্টিয়া-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রউফ বলেন, আমি কুমারখালী-খোকসা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। সংসদ সদস্য হিসেবে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। আমি দলীয় মনোনয়ন পায়নি। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আসন্ন নির্বাচনে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবো। কুমারখালী-খোকসার মানুষ আমার সঙ্গে আছেন। আমাদের জয় হবে ইনশাআল্লাহ।
কুষ্টিয়া-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রেজাউল হক চৌধুরী বলেন, আমি দলীয় মনোনয়ন পায়নি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবো। আমি এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। দৌলতপুরের অনেক উন্নয়ন আমার সময়ে হয়েছে। দৌলতপুরে মানুষ আমার সঙ্গে আছেন।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব সদর উদ্দীন খান বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে নৌকার জয় হবে। দল যাকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছে তার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নেতাকর্মীরা কাজ করবে। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ের আমি কিছু বলতে চাই না।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী বলেন, ‘নৌকাকে জেতানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। তাই এর বাইরে আমরা কিছু ভাবছি না।’
একাধিক আওয়ামী লীগের নেতা জানিয়েছেন, এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-১ ও কুষ্টিয়া-৪ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য রউফ ও রেজাউল নৌকার বিপক্ষে নির্বাচন করবেন। এক্ষেত্রে দলও খুব একটা কঠোর হবে না। কারণ, বিএনপি ভোটে আসবে না, এটি ধরে নিয়েই ক্ষমতাসীনেরা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন দেখাতে চাইছেন। যাতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউ জিততে না পারেন।
আওয়ামী লীগের লক্ষ্য নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করে তোলা, ভোট উৎসবমুখর করা ও কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করে তুলতে একাধিক বিকল্পের একটি হলো মাঠে স্বতন্ত্র প্রার্থী রাখা।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ আগামী ৩০ নভেম্বর।