কুষ্টিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে অসহযোগ আন্দোলনের প্রথমদিন পুলিশের সঙ্গে ছাত্র–জনতার দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। আজ রোববার বেলা সাড়ে দশটা থেকে শহরজুড়ে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে আন্দোলনকারী, পুলিশ, সাংবাদিকসহ অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন ছররা গুলিতে আহত হয়েছেন।
সংঘর্ষ চলাকালে মজমপুর এলাকায় ট্রাফিক পুলিশের কার্যালয়, এনএস রোডে পাঁচরাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল, থানা মোড়ে মডেল থানার প্রধান ফটক, জেলা পরিষদ ভবনসহ বেশ কিছু স্থাপনায় হামলা–ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধু মার্কেটে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ দফায় দফায় কাদানে গ্যাসের শেল ও ছররা গুলি ছুড়েছে। তবে এ সময় জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ, অঙ্গ–সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীদের কোথাও দেখা যায়নি। এসব ঘটনায় ছয় সংবাদকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ ছাড়া পুলিশ আন্দোলনকারী, পথচারীসহ অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বেলা সাড়ে ১০টার পর থেকে শহরের মজমপুর বাস ডিপো মসজিদের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন শিক্ষার্থীসহ সাধারণ জনতা। পরে বেলা ১১টার দিকে তাঁরা বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। এ সময় কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়কের দুই পাশ থেকে শত শত মানুষ লাঠিসোঁটা নিয়ে মিছিলে যোগ দেন। পরে তাঁরা চৌড়হাস মোড়ে গিয়ে সেখানে মহাসড়ক অবরোধ করেন।
এ সময় কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে থাকা ১০-১২ জন পুলিশ সদস্যের ওপর ইটপাটকেল ছোড়া হয়। এতে সেখানে ছয়-সাতজন পুলিশ সদস্য আহত হন। স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। চৌড়হাস মোড়ে মুক্তিমিত্র স্মৃতিস্তম্ভ ভাঙচুর করা হয়।
চৌড়হাস মোড়ে কিছুক্ষণ অবস্থানের পর ছাত্র-জনতা আবার মিছিল নিয়ে মজমপুর রেলগেটের দিকে রওনা হয়।
পরে রাইফেলস ক্লাবের পাশে ওয়ার্ড ছাত্রলীগ কার্যালয় ভেঙে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। এরপর সাদ্দাম বাজার মোড়ে শেখ রাসেল মার্কেটের দোতলায় কুষ্টিয়া শহর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মানজিয়ার রহমান চঞ্চলের ব্যক্তিগত কার্যালয় ও নিচতলায় সদর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আবু তৈয়ব বাদশার ব্যক্তিগত কার্যালয়ে হামলা, ব্যাপক ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়। এরপর মিছিলকারীরা একে একে মজমপুর রেলগেটে জেলা ট্রাফিক পুলিশের কার্যালয়ে তাণ্ডব চালান; আগুন ধরিয়ে দেন।
পরে বঙ্গবন্ধু সুপার মার্কেটে জেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের অফিসে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কুষ্টিয়া মডেল থানা ও জেলা পরিষদের নবনির্মিত ভবনে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ব্যাপক ক্ষতি করা হয়। হামলার সময় জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে বেশ কয়েক নেতা-কর্মী শান্তি সমাবেশ করছিলেন। এ ছাড়া বড়বাজার রেলগেটের কাছে পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়া হয়।
আন্দোলনকারীরা শহরের বিভিন্ন স্থানে লাগানো সিসি ক্যামেরা ভেঙে ফেলেন। বেলা দুটোর পর আন্দোলনকারীরা পুনরায় মজমপুর বাস ডিপো মসজিদের সামনে জড়ো হন। এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়।
একপর্যায়ে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। এ সময় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ২৪ এর কুষ্টিয়ার নিজস্ব প্রতিবেদক শরীফ বিশ্বাস, ক্যামেরা পারসন এস আই সুমন, একাত্তর টেলিভিশনের প্রতিনিধি শাহিন আলী, স্থানীয় পত্রিকা দৈনিক শিকল এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহফুজুর রহমান, দেশ টিভির ক্যামেরাপারসন ইরফান রানা ছররা গুলিতে আহত হন। এ ছাড়া দফায় দফায় সংঘর্ষে পুলিশ, সাংবাদিকসহ অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ বিকেল সাড়ে চারটার দিকেও চলছিল। এতে পুরো শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। শহরের সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেছে।
এসব বিষয়ে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন বলেন, পুলিশ যথেষ্ট ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে সর্তক অবস্থানে ছিল। কিন্তু পুলিশের ওপর হামলা হয়েছে। আন্দোলনকারীরা পুলিশের স্থাপনাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছোড়েন।