কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় চারজনকে আটক করেছে পুলিশ। তারা কুষ্টিয়া শহরতলীর জুগিয়া পশ্চিমপাড়া ইবনে মাস্উদ (রাঃ) মাদরাসার দুই ছাত্র ও দুই শিক্ষক।
রোববার (৬ ডিসেম্বর) বিকেলে কুষ্টিয়া পুলিশ লাইন্সে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে খুলনা বিভাগীয় পুলিশ রেঞ্জ ডিআইজি ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য অবমাননার ঘটনায় চারজন মাদরাসা ছাত্র ও শিক্ষক কে আটক করা হয়েছে। এরা হলেন কুষ্টিয়া শহরতলীর জুগিয়া পশ্চিমপাড়া ইব্নে মাস্উদ (রাঃ) মাদরাসার শিক্ষার্থী আবু বকর ওরফে মিঠন (১৯) ও সবুজ ইসলাম ওরফে নাহিদ (২০) এবং মাদ্রাসার শিক্ষক আল আমীন (২৭) ও ইউসুফ আলী(২৬)।
ডিআইজি বলেন, ঘটনার দিন রাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন আবু বক্কর ও নাহিদ দুজনে গোপনে মাদ্রাসা থেকে বের হয়ে পায়ে হেটে মজমপুর রেললাইন ধরে পাঁচ রাস্তা মোড়ে ভাস্কর্যের কাছে এসে সেখানকার নির্মাণকাজের বাঁশের মই দিয়ে উপরে উঠে নাহিদের ব্যাগে থাকা হাতুড়ি বের করে ভাস্কর্যটির বিভিন্ন জায়গায় স্বজোরে আঘাত করে ক্ষত-বিক্ষত করে পুনরায় পায়ে হেটে আবার মাদ্রাসায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
আটককৃত আবু বকর ওরফে মিঠন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার শিংপুর মৃধাপাড়া এলাকার সমশের মৃধার ছেলে ও সবুজ ইসলাম ওরফে নাহিদ দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর গোলাবাড়ীয়া এলাকার সামছুল আলমের ছেলে।
মাদ্রাসার শিক্ষক আল আমীন মিরপুর উপজেলার ধুবাইল এলাকার আব্দুর রহমানের ছেলে ও ইউসুফ আলী পাবনা জেলার আমিনপুর দিয়াড় বামন্দী এলাকার আজিজুল মন্ডলের ছেলে।
ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে আটককৃত চারজনের বিরুদ্ধে (১৯৭৪) সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করেছে।
এ ঘটনার প্রতিবাদে জেলা সম্মিলিত নাগরিক সমাজের উদ্যোগে খণ্ডখণ্ড বিক্ষোভ মিছিল শেষে বিকেল পৌরসভার বিজয় উল্লাস চত্বরে বিশাল সমাবেশে মিলিত হয়।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ সদর আসনের সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফ, কুষ্টিয়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব সদর উদ্দিন খান, সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী, ইবির সাবেক প্রো-ভিসি ড. শাহিনুর রহমান, সাবেক ট্রেজারার ড. সেলিম তোহা, জেলা জাসদ সভাপতি গোলাম মহসিন, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাড. অনুপ কুমার নন্দী, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা জেলা আওয়ামী লীগের ও অঙ্গসহযোগী সংগঠন সব সামাজিক ও পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
এ সময় বক্তারা বলেন, লালন রবীন্দ্রনাথের এই পুণ্যভূমিতে কখনো মৌলবাদীদের মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে দেওয়া হবে না। যারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে নিজেদের অস্তিত্ব প্রকাশ করার যে প্রয়াস চালিয়েছে তা আমরা সম্মিলিত ভাবে রুখে দিয়েছি। ভবিষ্যতে আর কোনদিন কোন মৌলবাদী অপশক্তি এ জেলায় মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না।
অন্যদিকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের পর বিক্ষিপ্ত ঘটনায় জেলা বিএনপির অফিস ভাঙচুর ও পরবর্তী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের ভাইয়ের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার সময় সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে সাংবাদিকরা হামলার শিকার হন।
উল্লেখ্য, শুক্রবার দিবাগত রাতে কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে পৌরসভার উদ্যোগে প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ নিয়ে দেশব্যাপী ইসলামপন্থী বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদের মধ্যেই কুষ্টিয়ায় এ ঘটনা ঘটে।