বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে মধ্যরাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে একবছরের সাজা পাওয়া সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগ্যান জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। অন্যদিকে এই সাংবাদিককে সাজা দেয়ার পেছনে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুলতানা পারভীনের সম্পৃক্ততা ও আচরণের অসঙ্গতির প্রমাণ পাওয়ায় তাকে প্রত্যাহার করে নিচ্ছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
আজ রোববার সকালে বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলামের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেনের আবেদনের পর কুড়িগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. সুজাউদ্দৌলা তাকে জামিন দেন। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর তাকে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
তবে অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেনকে আইনজীবী নিয়োগ নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। আরিফ মুক্ত হওয়ার পর জানিয়েছেন, জেল কর্তৃপক্ষ তার কাছে একটি ওকালতনামা পাঠায়। তাকে বলা হয় পরিবার পাঠিয়েছে। এই কথা বলে স্বাক্ষর নেওয়া হয়। তবে পরিবারের কেউ ওকালতনামায় স্বাক্ষর নেওয়ার জন্য জেল কর্তৃপক্ষের কাছে কোনও কাগজ পাঠাননি।
গত শুক্রবার (১৩ মার্চ) মধ্যরাতে বাড়ির বেড়া ভেঙে ঢুকে স্ত্রী-সন্তানদের সামনে থেকেই তুলে নিয়ে যাওয়া হয় আরিফুল ইসলামকে। তার বাসায় আধা বোতল মদ ও দেড়শ’ গ্রাম গাঁজা পাওয়া গেছে বলে অভিযোগ আনা হয়। এরপর গভীর রাতে জেলা প্রশাসকের অফিসে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে এক বছরের কারাদণ্ড দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। সূত্র-বণিক বার্তা
এ নিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা বলছেন, অবস্থা বেগতিক দেখার পর জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন নিজের লোকজনদের দিয়ে আরিফের পরিবারের সঙ্গে কথা না বলেই কৌশলে তার কাছ থেকে স্বাক্ষর নিয়ে তাকে জামিন দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। যদিও বিষয়টি এখনো নিশ্চিত করা যায়নি।
এদিকে অভিযুক্ত জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুলতানা পারভীনের সম্পৃক্ততা ও আচরণের অসঙ্গতির প্রমাণ পাওয়ায় তাকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
রবিবার (১৫ মার্চ) সচিবালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘শুধু ডিসি নয়, এই ঘটনার সঙ্গে অন্য যেসব কর্মকর্তা জড়িত ছিল নিজ নিজ ভূমিকা বিবেচনায় নিয়ে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জনমনে শনিবার থেকে যত প্রশ্ন উঠেছে সব প্রশ্নের সত্যতা তদন্তে পাওয়া গেছে।’
এসময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এক-দুজন কর্মকর্তার দায় সরকার বা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নেবে না।’
বিভাগীয় কমিশনারের খসড়া প্রতিবেদন হাতে পেয়েছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘স্বাক্ষরযুক্ত প্রতিবেদন কিছুক্ষণের মধ্যে পেয়ে যাবো। খসড়াতে যা দেখেছি সেটাই চূড়ান্ত প্রতিবেদন হবে। যেহেতু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর তাই আদেশে তার স্বাক্ষর লাগবে। ফলে দোষীদের বিরুদ্ধে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে সেটি এখনই বলা ঠিক হবে না।’
আরিফের ক্ষতিপূরণের বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তিনি ইতোমধ্যে জামিনে মুক্ত হয়েছেন। যেহেতু প্রতিবেদনে সব উল্লেখ আছে এবং তার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি সেহেতু একসময় তিনি নির্দোষ প্রমাণ হবেন।’