প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে এখন প্রথমবারের মত হাঁস-মুরগী, কবুতর ও গরু পালন হচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ধান, শাক-সবজি, ফুল-ফল, মধু ও মাছ চাষও হচ্ছে। আর সব কিছুর তদারক করছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণমাধ্যমে তিনি বলেছেন, দেশের প্রতিটি পরিবারকে কৃষিতে উৎসাহ দিতে তাঁর এই উদ্যোগ। তিল-সরিষার মতো পেঁয়াজের মত ফসলের চাষ করেছেন মাটি ও মানুষের কন্যা শেখ হাসিনা।
এরইমধ্যে শেখ হাসিনা দেশের প্রতি ইঞ্চি জমির সদ্ব্যবহারের আহবান জানিয়েছেন। আগেই তাঁর বিশেষ উদ্যোগ ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পে সারাদেশে প্রায় ১ কোটি ৬৫ লাখ দরিদ্র ও অতিদরিদ্র মানুষ উপকৃত হচ্ছে।
চা এলো সমতলে
সিলেট অঞ্চলের টিলায় চায়ের চাষ দেখে অভ্যস্ত বাংলাদেশের মানুষ। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রথম সমতলে চা চাষের যাত্রা শুরু হয়। প্রথমে পঞ্চগড়ে। পাহাড়ি অঞ্চলের পাশাপাশি সমতল ভূমিতে চা চাষের এই যাত্রা শেখ হাসিনার কৃষি বান্ধব কর্মসূচির একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসার পর চা উৎপাদন শুরু হয় পঞ্চগড়ের পাশের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে। বর্তমানে এ জেলার ১ হাজার ৪৫৭ একর জমিতে চা চাষ হচ্ছে, এতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৩ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
২০২২ সালের ২৭ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী চা শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি ১২০ থেকে বাড়িয়ে ১৭০ টাকায় উন্নীত করেন। ভর্তুকি মূল্যে রেশন সুবিধা বাড়ানো হয়। এছাড়া চিকিৎসাসুবিধা, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকদের পেনশন, শ্রমিক পরিবারের ছেলেমেয়েদের শিক্ষা, আবাসনসহ নানামুখী কর্মসূচির পরিকল্পনা করা হয়। সবকিছু মিলিয়ে এখন তাদের দৈনিক মজুরি আসবে সাড়ে চার শ থেকে পাঁচ শ টাকার মতো ।
কৃষিতে প্রযুক্তির ব্যবহার
বর্তমান সরকার কৃষি যান্ত্রিকীকরণে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। ফলে দেশে কৃষি জমি চাষে ৯০%, আগাছা দমনে ৬৫%, কীটনাশক প্রয়োগে ৮০%, সেচকার্যে ৯৫% এবং ফসল মাড়াইয়ের কাজে ৭০% যান্ত্রিকীকরণ সম্ভব হয়েছে। বর্তমান সরকারের আরেকটি বড় সাফল্য হলো কৃষি গবেষণাকে অগ্রাধিকার দেয়া। এর ফলে প্রতিটি কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে ল্যাব উন্নয়নসহ নানামুখী গবেষণা পরিচালনা করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। দেশে প্রথমবারের মতো ডিজিটাল কৃষি তথা ‘ই-কৃষি’র প্রবর্তন করা হয়েছে । মোট ৪৯৯টি কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্র, কৃষি কল সেন্টার-১৬১২৩, কৃষি কমিউনিটি রেডিও, কৃষি তথ্য বাতায়ন তৈরি করা হয়েছে। ফলে দেশের প্রান্তিক কৃষকসমাজ সহজেই কৃষিখাতের আধুনিকায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারছেন।
শেখ হাসিনার সরকার কৃষককে মাত্র ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খোলার সুযোগ করে দেওয়ায় ১ কোটি ১ লাখ ১৯ হাজার ৫৪৮টি ব্যাংক হিসাব খোলা সম্ভব হয়েছে, যেখানে বর্তমান স্থিতি প্রায় ২৮২ কোটি টাকা। দেশের মানুষ শতভাগ বিদ্যুতের আওয়ায় আসায় সেচ ব্যবস্থা নিয়মিত হয়েছে। সেচ মৌসুমে প্রান্তিক অঞ্চলে বিদ্যুতের নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহে সরকারের পক্ষ থেকে মনিটরিং সেল খোলা হয়েছে।
কৃষিপণ্যের আন্তর্জাতিক বাজার সৃষ্টি
বাংলাদেশ থেকে কৃষিপণ্যের রপ্তানি আয় ১০ বছর আগেও ছিল মাত্র ৪০ কোটি ডলার। গত ৫ বছর ধরে এই খাতে রপ্তানি বাড়ছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে খাতটি ঘুরে দাঁড়ায় এবং রপ্তানি আয় ১৯ শতাংশ বাড়ে। কারণ সরকার কৃষিপণ্য রপ্তানির জন্য ২০ শতাংশ প্রণোদনা দেয়া শুরু করে। কৃষি মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে পূর্বাচলে একটি অ্যাক্রিডিয়েটেড ল্যাবরেটরি নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে।
বাংলাদেশ থেকে যেসব দেশে শাকসবজি রপ্তানি হয় তার মধ্যে অন্যতম হলো- সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, কাতার, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, কুয়েত, সিঙ্গাপুর, শ্রীলংকা ও নেপাল। যেসব দেশে ফল রপ্তানি হচ্ছে তার মধ্যে অন্যতম হলো- কাতার, ভারত, ভিয়েতনাম, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কুয়েত, সৌদি আরব ও অস্ট্রেলিয়া।
বাংলাদেশ থেকে নানাবিধ কৃষিপণ্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে, পাট ও পাটজাত দ্রব্য, চা পাতা, আম, কাঁঠাল, লেবু, লিচু, লটকন, আমড়া, পেয়ারা। এছাড়া আলু, কচু, পটোল, মুখীকচু, লাউ, পেঁপে, শিম, করলা, কাকরুল, চিচিঙ্গা, মিষ্টি কুমড়া, গুঁড়া মসলা, কালিজিরা, হলুদের গুঁড়া, মরিচের গুঁড়া, শুকনা মরিচ, বিরিয়ানির মসলা, কারি মসলা, ড্রিংকস, বিস্কুট, চানাচুর, সেমাই, পটেটো ফ্লেকস, নুডলস, ড্রাই কেক, মুড়ি চিড়া শুকনা বরই এবং হিমায়িত সবজিও রপ্তানি হচ্ছে।
উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থায় কৃষি পেয়েছে নতুন মাত্রা
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় দেশের যোগাযোগব্যবস্থায় দুর্দান্ত উন্নয়ন হয়েছে। যা কৃষি উন্নয়নে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। ফসল পরিবহন সহজ হয়েছে। ফলে ক্ষৃক তার উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন। ২০২২ সালের ৭ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৫ জেলায় একযোগে ১০০ সেতু উদ্ভোধন করেন। একই বছরের ২১ ডিসেম্বর ৫০ জেলায় ১০০ সড়ক-মহাসড়ক উদ্ভোধন করেন।
কৃষিখাতে প্রণোদনা ও প্রশিক্ষণ
শেখ হাসিনার নির্দেশে দেশের যুব সমাজকে কৃষিতে উৎসাহিত করতে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের অধীনে কৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ন্যূনতম ৮ম শ্রেণি পাশ যেকোন যুবক এ প্রশিক্ষণে অংশ নিতে পেরেছেন। অংশগ্রহণকারীদের প্রত্যেককে মাসিক চার হাজার পাঁচশত টাকা প্রশিক্ষণ ভাতা দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রশিক্ষিতদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্যে ৬০ হাজার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেয়া হয়। কৃষি উৎপাদন বাড়াতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কৃষকদের জন্য ৩৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা নেওয়ার ১৩ বছরে সরকার কৃষি খাতে ৯৭ হাজার ৮৭৩ কোটি ৫৫ লক্ষ টাকা ভর্তুকি দিয়েছে । এর মধ্যে সারে ভর্তুকি ছিল ৯৫ হাজার ১৬১ কোটি ৫ লাখ এবং বিদ্যুতে এক হাজার ৯৬২ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
করোনা মোকাবেলায় কৃষকের পাশে সরকার
করোনা দুর্যোগে কৃষকদের পাশে ছিল শেখ হাসিনার সরকার। করোনায় শ্রমিক সংকটে থাকা কৃষকদের জমির পাকা ধান যাতে ঘরে তুলতে সমস্যা না হয়, সে জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সারাদেশে আওয়ামী লীগ ও এর সব সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা স্বেচ্ছাশ্রমে কৃষকদের ধান কাটতে সহায়তা দেন। কৃষকদের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ তহবিল থেকে সহজ শর্তে ৪ শতাংশ সুদে ঋণ নিতে পেরেছিলেন কৃষক। করোনার সময়ে সারের ভর্তুকি বাবদ ৯ হাজার কোটি টাকা, কৃষি যান্ত্রিকীকরণের জন্য ১০০ কোটি টাকা, বীজের জন্য ১৫০ কোটি টাকা এবং কৃষকদের জন্য আরও ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল।