সকালের শিশির ভেজা পথ, যা শীতের আগমনী বার্তাকে জানান দিচ্ছে। দিনে কিছুটা গরম হলেও সন্ধ্যা হলেই বোঝা যায় শীতের আগমন। এরই মধ্যে ঝিনাইদহের গাছিরা খেজুর গাছ তুলতে শুরু করেছে। যারা খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে পারদর্শি তাদেরকে গাছি বলা হয়। আগাম রস পাবার আশায়, কিছু গাছি তাদের গাছের পরিচর্যা শুরু করেছে।
শীতের মৌসুম শুরু হতে না হতেই খেজুরের রস আহরনের জন্য গাছিরা খেজুর গাছ প্রস্তুুত করতে শুরু করেছে। গাছিরা হাতে দা, কোমরে ঠোঙ্গা বেঁধে নিপুন হাতে গাছ চাছা ছোলা করছে। এরই মধ্যে কয়েকজন গাছে নলি মারতে শুরু করেছে। কয়েক দিন পরেই গাছিদের খেজুর গাছ কাটার ধুম পড়ে যাবে। শীতের মৌসুম আসলে দেশের দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলে সর্বত্র খেজুরগাছ কাটার ধুম পড়ে যাই। খেজুরের গুড় তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে গাছিরা। তাদের চোখে মুখে ফুটে ওঠে সোনালী হাসি।
শীতের মৌসুম মানেই নলিন খেজুর গুড়ের মৌ মৌ গন্ধে ভরে ওঠে পুরো গ্রাম। শীতের সকালে খেজুর রসের তৃপ্তি-ই আলাদা আর খেজুর রসের ক্ষীর পায়েসের মজা আছেই। প্রতিদিন গ্রামের কোন না কোন বাড়িতে খেজুর রসের খবারের আয়োজন চলে। খেজুরের শুধু রসই নয়, পাটালি, নলেন গুড় এর সু-স্বাধ নিতে অপেক্ষায় গ্রাম বাংলার মানুষ। এক সময় ঝিনাইদহের কোটচাাঁদপুর, খালিশপুর, কালীগঞ্জ গুড়ের জন্য বিখ্যাত ছিল। এসব এলাকার খেজুর রসের গুড় নদীয়া সহ কোলকাতায় ব্যপক চাহিদা ছিল । সে সময় ব্যবসায়ীরা এসব এলাকা থেকে গুড় সংগ্রহ করে গরু-ঘোড়ার গাড়িতে করে ভারতের মাঝদিয়া বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দিত।
পুরাতন ঐতিহ্য আজ বিলুপ্তের পথে, কারণ আগের মত খেজুর গাছ এখন আর দেখা যায়না। চাষিরা এখন আর জমিতে আলাদা করে খেজুর গাছের চাষ করেনা। শুধু রাস্তার পাশে কিংবা জমির আইলে কম বেশি খেজুর গাছ দেখা যায়। তাছাড়া এক কেজি গুড় তৈরি করতে খরচ ৫০/৬০ টাকা আর বিক্রি করতে হয় ৭০/৮০ টাকা। আর এতে কষ্ঠও অনেক, সে কারণে চাষিরা গুড় বানাতে নিরুৎসাহিত হচ্ছে।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হলিধানীতে, আগাম গাছ তুলছেন নুর ইসলাম, তিনি আগেই গুড় পাটালি তৈরি করার প্রস্তুুতি নিচ্ছেন, কুমড়াবাড়িয়া গ্রামের রুপকুমার জানান আগাম রশ তৈরি করতেই আগাম গাছ প্রস্তুুত করছি। নাটাবাড়িয়া গ্রামের গাছি কালাম জানান বর্ষার কারনে এবার দেরি হয়ে গেছে। আগাম রস বানাতে পারলে দাম ভালো হয় সেই জন্যই আগে থেকেই প্রস্তুুতি নিচ্ছি।