মুখের রোগ আমরা অনেক সময়ই গুরুত্ব দিই না। জিহ্বা, দাঁত, মাড়িতে নানান সমস্যা দেখা দেয়। ভিটামিনের ঘাটতি, দাঁত ও জিহ্বার যত্ন সঠিকভাবে না নিলে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। গর্ভাবস্থায় মুখের রোগ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে। নতুবা বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মো. ফারুক হোসেন।
আপনি যদি গর্ভবতী হয়ে থাকেন এবং মাড়ি রোগ থাকে, সে ক্ষেত্রে আপনার শিশু নির্দিষ্ট সময়ের আগে জন্ম নিতে পারে। শুধু তাই নয়, এই শিশু আকার আকৃতিতে স্বাভাবিকের চেয়ে ছোট হবে।
অন্তঃসত্ত্বা নারীর মাড়ি রোগে যথাযথ চিকিৎসা নিতে হবে নির্দিষ্ট সময়ে। মাড়ি রোগের মাধ্যমে যদি ব্যাকটেরিয়া ‘ভিরিড্যান্স স্ট্রেপটোকক্কাই’ রক্ত প্রবাহে সংক্রমিত হয় তাহলে হার্টের ভাল্ব নষ্ট হওয়ার আশংকা থাকে।
হৃদরোগ ইতিমধ্যেই শীর্ষ ঘাতক ব্যাধি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে যা মাড়ি রোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত। মাড়ি রোগের ব্যাকটেরিয়া ইসোফেজিয়াল ক্যান্সার বা টিউমারের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাই গর্ভাবস্থায় মাড়ি রোগ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে।
শুষ্ক মুখ এবং জিহ্বার কারণে মুখের লালার প্রবাহ কমে যায়, ফলে খাদ্যদ্রব্য ঠিকভাবে দ্রবন হয় না। দাঁতে ক্ষয় হয়ে থাকে। স্ট্রেপটোকক্কাস মিউট্যান্স এবং ল্যাকটোব্যাসিলাস ব্যাকটেরিয়া দাঁতের ক্ষয় করে থাকে।
দাঁত শিরশির করলে আমরা ঠাণ্ডা খাবার খাই না। বিশেষ করে আইসক্রিম বা বরফ জাতীয় কিছু। বরফ কখনও চুষবেন না এবং কামড়াবেন না। বরফ চোষা বা কামড়ানো দাঁতের ক্ষতি স্থায়ী করতে পারে, দাঁতের এনামেলে ছোট ছোট ক্র্যাক বা ফাটল সৃষ্টির মাধ্যমে। এই ক্র্যাক বা ফাটল সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বড় হয় এবং সবশেষে পুরো দাঁতটিতে ফ্যাক্চার বা ফাটল সৃষ্টি হয়।
আপনার জিহ্বার রঙ কমলার রঙের মতো হতে পারে যদি ঠিকভাবে মুখ ও জিহ্বার যত্ন না নেওয়া হয়। যেমন জিহ্বা যদি নিয়মিত ব্রাশ বা পরিষ্কার করা না হয়। ভিটামিন ‘বি’ এবং ফলিক এসিডের অভাবে জিহ্বা লাল অথবা কমলা রং হতে পারে। অধিকাংশ সময় হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস সুপ্ত অবস্থায় নার্ভ সেলে থাকে। তাই এ ভাইরাসের সংক্রমণের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
হাইপারথাইরয়ডিজমের রোগীরা মুখে জ্বালাপোড়া এবং অস্বস্তির কথা বলে থাকেন বিশেষ করে জিহ্বার ওপর এবং গালের অভ্যন্তর ভাগে। চিকিৎসা না হলে মুখের জ্বালাপোড়া এবং অস্বস্তিভাব একটি লম্বা সময়ব্যাপী থাকতে পারে। সাইকোসোমাটিক ব্যথাও মুখে একটি লম্বা সময় ধরে থাকতে পারে। উভয় ক্ষেত্রেই রোগী রাতের বেলা ঠিকভাবে ঘুমাতে পারে না।
রোগী কখনও কখনও অস্থিরতা ও মানসিক চাপে ভুগে থাকেন। রোগীদের উচিত মুখস্ত ওষুধ সেবন না করে চিকিৎসকের কাছে সবকিছু খুলে বলা। তবেই একটি সমাধান বের হয়ে আসবে।