বিশ^ব্যাপী মরন ব্যাধি করোনা নিয়ে ভীত ও সন্ত্রস্ত। অনেকেই ব্যাবসা বানিজ্য গুটিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে রয়েছেন হোম কোয়ারেন্টিনে। সেখানে জীবনের মায়া ত্যাগ করে স্বেচ্ছায় সেবা দিয়ে যাচ্ছেন ওরা ১৭ জন। যদিও তারা সরকারি বেতন কিংবা ভাতা প্রাপ্ত নয় তবুও তারা নিয়োমিত স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করছেন । জীবনের ঝুঁকি থাকলেও এদের নেই কোন আত্নরক্ষার সরঞ্জামাদী। পরিবার পরিজন নিয়ে এদের সংসার চলে অভাব অনটনে।
সকল শ্রেণি পেশায় নিয়োজিত মানুষ যখন ভয়ে ভীত। পরিবার পরিজন নিয়ে যখন ঘরে বসে সময় পার করছেন অনে্েকই। তেমন মূহুর্তে জীবনের মায়া ত্যাগ করে পরিবার পরিজনের তোয়াক্কা না করে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়মিত স্বে”চ্ছায় শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন ওরা ১৭ জন।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে হাসপাতালে সেবা নিতে আসা মানুষকে সেবা দিতে একটু পিছপা হচ্ছেননা তারা। হাসপাতালের অন্যান্য স্টাফদের সেফটি ইকুইভমেন্ট দেয়া হলেও তারা তা থেকে হয়েছেন বঞ্চিত। নিজের টাকা খরচ করেই কিনেছেন হ্যান্ড গ্লোভ ও মাস্ক। আতংকে পরিবারের লোকজন বাহিরে আসতে নিষেধ করলেও সেবা প্রদানের নেশায় প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে পৌছান হাসপাতালে। তবুও তাদের চাকরি নাই,নাই কোন বেতন ভাতা।
জাতির এই ভয়াবহ মুহুর্তে তবুও তারা দিনের পর দিন সেবা প্রত্যাশিদের সেবা দিচ্ছেন। তাদের প্রত্যাশা হয়তোবা সরকারি ভাবে তারা একদিন মুল্যায়িত হবে
হাসপাতাল সত্রে জানাগেছে,চৌগাছা গ্রামের আনছার আলীর মেয়ে আলগুনারা। ২০১৭ সালের আগষ্ট মাসে স্বেচ্ছায় শ্রম দিয়ে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন। কর্মরত নার্সদের সহযোগীতা করেন। হিজল বাড়িয়া গ্রামের আশারুল ইসলমের ছেলে সুমন আলী ২০১৭ সাল থেকে নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে শ্রম দিচ্ছেন। কাজিপুর বেতবাড়িয়া গ্রামের গোলাম হোসেনের মেয়ে শারমিন মুক্তা।
তিনি ১৭ সালের প্রথম দিক থেকেই আউট ডোরে টিকিট ক্লার্ক হিসেবে কাজ করছেন। টিকিট কাউন্টারে প্রতিদিন কয়েকশ মানুষের টিকিট দিয়ে থাকেন। তিন বছর নিজের টাকা ভাড়া দিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা যাওয়া করছেন। সেবা প্রদানের দরুন প্রতিদান হিসেবে এখানে সরকারি ভাবে স্থায়ী হবার প্রত্যাশায় জীবনের মায়া ত্যাগ করে মানুষকে সেবা প্রদান করছেন।
গাংনীর আজগর আলীর মেয়ে সেলিনা খাতুন কাজ করছেন আয়া পদে। এ পদে আজিজুলের ছেলে মকলেচুর রহমান কাজ করছেন। ২০১১ সাল থেকে আয়া পদে কাজ করছেন। গাড়াডোব গ্রামের মৃত রেজাউলের ছেলে সাজেদুল ইসলাম বছর তিনেক আগে অফিস সহায়ক পদে কাজ করছেন। তিনি প্রথমে চুক্তি ভিত্তিক ভাবে সেবা প্রদান করতেন। তিনি এখন অবৈতনিক ভাবে রয়েছেন।
বাদিয়া পাড়া গ্রামের আব্দুস সামদের ছেলে আকরাম হোসেন ২ বছর যাবত বাবুর্চি হিসেবে কাজ করছেন। চৌগাছা গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে জিয়াউল হক। ওয়ার্ড বয় হিসেবে কাজ করছেন। মালশাদাহ গ্রামের আল আমিন হোসেন নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে কাজ করছেন দির্ঘদিন। মেহেরপুর সদর উপজেলার কালিগাংনী গ্রামের শাহাবুদ্দিন বাবুর্চি হিসেবে ৩ বছর রান্না করে রোগীদের খাওয়াচ্ছেন। পরিস্কার কর্মি পারভিনা আকতার। তিনি হিজল বাড়িয়া গ্রামের সিদ্দিকুরের মেয়ে। তিনি ১ বছর যাবত হাসপাতালকে পরিস্কার করে রেখেছেন ।
ইকুড়ি গ্রামের সুজনের স্ত্রী সেলিনা খাতুন পরিস্কার কর্মী হিসেবে কাজহ করছেন। এছাড়াও সিতা রানী,রেবেকা খাতুন,হুশনিয়ারা রঞ্জিত, আমিরন নেছা, ও রঙ্গিলা খাতুন পরিস্কার পরিছন্ন কর্মী হিসেবে কাজ করে চলেছেন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ও পরিচালনা পর্ষদ তাদেরকে দিয়ে বিনা বেতনে কাজ করিয়ে নিচ্ছেন।
কয়েক বছর ধরে এখানে কাজ করলেও তাদেরকে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়না বলে জানান তারা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিভিন্ন পদে কর্মরত এসকল স্বেচ্ছা সেবক জানায়, বর্তমান পরিস্থিতিতে মানুষ যখন ঘর বন্দি তখন জীবনের মায়া ত্যাগ করে মানুষের সেবা প্রদান অব্যাহত রয়েছে । দিনের পর দিন মাসের পর মাস মানুষর সেবায় নিজেকে আত্ন নিয়োগ করতে পেরে এখন গর্ববোধ করি।
এবং বলতে পারি জাতীর এই ক্রান্তিকালে গাংনীর অসহায় মানুষের পাশে থাকতে পেরেছি। এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দির্ঘদিনের পরিশ্রম আর বর্তমানে টিকে থাকার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে তাদের বেতনভুক্ত ও চাকুরি স্থায়ীকরনের জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সু দৃষ্টি কামনা করেছেন।
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রিয়াজুল আলম জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংকটের কারনে দীর্ঘদিন থেকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৭ জন নারী পুরুষ স্বেচ্চায় শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। তাদেরকে কোন আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়না। বরং যারা এখানে শ্রম দিচ্ছেন তারা তাদের নিজস্ব খরচেই দুর-দুরান্ত থেকে আসা যাওয়া করেন। সংকট কালিন মুহুর্তেও তারা সেবা প্রদান করছেন যা গাংনী বাসিসহ সকলের কাছে প্রশংসনীয়।
মেপ্র/এমএফআর