মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এখানে অপারেশনের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সুসজ্জিত রুম। রয়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতি। অথচ এ অপারেশন থিয়েটারটি কোন কাজে আসছে না। চিকিৎসক সংকটের অজুহাতে কোন প্রকার অপারেশন করা হয় না। কয়েকজন চিকিৎসক বিভিন্ন ক্লিনিকে অপারেশন করলেও এখানে অপারেশন করার অনুমতি নেই। তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানান চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি তিনি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেছেন।
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির আধুনিক ভবন নির্মিত হয় ২০১৮ সালে। সব ধরণের অপারেশন করার জন্য বরাদ্দ দেয়া একটি সুসজ্জিত রুম। দেয়া হয়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতি। সার্বক্ষণিক বিদ্যুতের ব্যবস্থার জন্য রয়েছে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি জেনারেটর। আছে প্রশিক্ষিত নার্স।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কয়েকজন ডাক্তার বাইরের ক্লিনিকে অপারেশন করেন। অথচ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে তাদের দিয়ে অপারেশন করানো হয় না। এদেরকে দিয়ে অপারেশন করানোর কোন অনুমতি নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ফলে নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। আর ফায়দা লুটছেন বিভিন্ন ক্লিনিক।
এ উপজেলার শালদহ গ্রামের রাজু আহমেদ জানান, তার স্ত্রীর নিপার সিজারিয়ান অপারেশ করা হয়েছে গাংনী সনো ডায়গনস্টিক সেন্টারে। স্বল্প আয়ের মানুষ অথচ খরচ করতে হয়েছে ১২ হাজার টাকা।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে অপারেশনের ব্যবস্থা করা হলে কোন অর্থ খরচ হতো না। একই কথা জানান কুঞ্জনগরের আজিবুল। তার স্ত্রীকে সিজারিয়ান অপারেশন করান রাজা ক্লিনিকে। এখানে ওষুধ বেড ভাড়া আর ডাক্তার বাবদ খরচ হয়েছে ১৪ হাজার টাকা।
একটি সুত্র জানায়, শুধু নতুন ভবনের সময়কাল থেকে নয়, বিগত পাঁচ বছর যাবত অপারেশন বন্ধ। অনেক ভাল ডাক্তার বদলী হয়ে এসেছিলেন এখানকার লোকজনকে সেবা দিতে। কিন্তু এখানকার কতিপয় ক্লিনিকের লোকজন অপারেশন না করার জন্য হুমকি দেয়া ছাড়াও মারধর করার কারণে ডাক্তাররা থাকতে চান নি।
বিগত স্বাস্থ্য সেবা কমিটির সভাপতি মকবুল হোসেনকে জানিয়েও কোন লাভ হয়নি। বর্তমানে ডাক্তার সংকট রয়েছে। অপারেশন না করায় যেমন গরীব অসহায় রোগিদের অর্থদন্ড হচ্ছে তেমনি ফায়দা লুটছেন ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সুত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শষ্যায় উন্নীত করা হয়। সে লক্ষ্যে ২০১৮ সালে নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়। এখানে মোট ডাক্তারের পদ ৩০ টি। এর মধ্যে ১০ টি( জুনিয়র কনসালটেন্ট) বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ রয়েছে। বিশেষজ্ঞ পদ পুরুণ হয়নি দীর্ঘদিনেও।
মেডিকেল অফিসারের ১৮ জনের বিপরীতে রয়েছেন ছয় জন। ইমার্জেন্সী মেডিকেল অফিসারের পদটি শুণ্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জন্মলগ্ন থেকে। ইনডোর ও আউটডোর সেবাটি সেকমো ও সাব-সেন্টারের চিকিৎসক দিয়ে চালানো হচ্ছে। তবে নার্স সংকটটি কাটিয়ে উঠা সম্ভব হয়েছে। একজন শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ দুই জন মেডিকেল অফিসার আছেন মাতৃত্বকালীণ ছুটিতে। আরো দুজন চিকিৎসক রয়েছেন মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ডেপুটিশনে।
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আহমেদ রায়হান শরীফ জানান, ইতোমধ্যে তিনি ডাক্তার সংকটের বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। অপারেশন করাতে হলে সরকারী কিছু নিয়ম রয়েছে। বাইরে যে চিকিৎসক অপারেশন করেন তাতে কোন বাঁধা না থাকলেও সরকারী নিয়মে সেটি রয়েছে। ডাক্তার সংকট কাটিয়ে উঠলে অপারেশনের ব্যবস্থা করা হবে।