সমস্যায় জর্জরিত গাংনী পৌরসভার ওয়ার্ডগুলো। অপরকিল্পিত ও যত্রতত্র খোঁড়া-খুড়ি, দ্বিতীয় শ্রেনীর এই গাংনী পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা এখন ভাগাড়ে পরিনত হয়েছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে। পৌর এলাকার অনেকেই ফেসবুকে লাইভ সম্প্রচার করে জনদুর্ভোগের বিষয়গুলো উঠিয়ে নিয়ে এসেছেন। তবে পৌর মেয়র বলছেন, কিছু কাজ চলমান থাকায় বৃষ্টির কারণে দুর্ভোগ হয়েছে। কয়েকটি কাজ চলমান আছে, আরো বড় কয়েকটি কাজ দ্রুত শুরু হলেও পৌরসভার চিত্র পাল্টে যাবে।
২০২০ সালের ৩০ ডিসেম্বরে গাংনী পৌরসভার নির্বাচনে তৃতীয়বারের মত মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন আহম্মেদ আলী। ওই নির্বাচনের আগে পানির লাইন নির্মাণ, ঘরে ঘরে বিদ্যুত, সড়ক সংস্কার, নতুন সড়ক, আর্থ-সামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। দায়িত্বের পর দেড় বছর অতিক্রম হয়েছে কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো উন্নয়ন না হওয়ায় পৌরবাসীর মাঝে দিন-দিন হতাশা বাড়ছে।
স্থানীয় পৌরবাসীরা জানান, পৌর শহরের বেশিরভাগ ড্রেন নির্মানের নামে যত্রতত্র খোঁড়াখুড়ি করে পৌর এলাকা এখন ভাগাড়ে পরিণত করেছে পৌর কর্তৃপক্ষ। সংস্কারের অভাবে পৌর শহরের সড়কগুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া জলাবদ্ধতা ও যত্রতত্র ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ গাংনী পৌরবাসী। পৌরসভার কোনো এলাকাতেই ড্রেন নির্মাণ হয়নি। রাস্তার পাশে আবর্জনা ফেলার কিছু ড্রাম থাকলেও মহল্লার রাস্তাগুলোর পাশে নেই কোনো ময়লা ফেলার স্থান। মেহেরপুর ও কুষ্টিয়া থেকে গাংনী প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত জনগুরুত্বপূর্ণ বাসস্ট্যান্ড সড়কটি দীর্ঘদিন যাবৎ মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের গাংনী শহরের বড় বাজার এলাকায় ড্রেন নির্মান করা হয়েছে। কিন্তু পৌরসভার উদাসিনতায় রাস্তাটি মেরামত করা হয়নি। সড়কটিতে বাস ট্রাক ও ছোট খাটো যানবাহনগুলো এখানে এসে বড় ধরণের ধাক্কা খেতে হয়।
গাংনী মহিলা কলেজ মোড় এলাকায় পানির পাইপলাইন নির্মাণের পর বড় বড় গর্ত করে ফেলে রেখেছে প্রায় ৬ মাস। পাইপ লাইনের কাজ শেষ হলেও নির্মাণ করা হয়নি রাস্তা। ফলে ভোগান্তি বাড়ছে পৌরবাসির।
গাংনী মহিলা কলেজ মোড় থেকে পৌরসভা পর্যন্ত যাওয়া রাস্তাটি যেনো মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। এই রাস্তায় রয়েছে সন্ধানী স্কুল এন্ড কলেজ, গাংনী মহিলা ডিগ্রী কলেজ ও পৌরসভা। প্রতিদিন অর্ধলক্ষ মানুষ এই পথটি ব্যবহার করেন। পথটি সাবেক মেয়র আশরাফুল ইসলামের আমলে নির্মাণ হলেও বর্তমান মেয়র এসেই রাস্তাটির অর্ধেক বরাবর ভেঙ্গে ফেলেন। দীর্ঘ ৫/৬ মাস যাবৎ ভোগান্তি হলেও সংস্কার হয়নি। সামান্য বৃষ্টিতেই জমে যায় হাটু পানি। অথচ, মেয়র আহমেদ আলী এই রাস্তাটি ধরে প্রতিদিন অফিস করলেও রাস্তাটির উন্নয়নে কোনো ধরণের পদক্ষেপ নেননি তিনি।
৮ নং ওয়ার্ডের সংষদ সদস্যের বাড়ির সামনে থেকে মহিলা কলেজ মোড় পর্যন্ত রাস্তাটির অবস্থা খুবই খারাপ। ভেঙ্গে চুরে খানা খন্দে সৃষ্টি হয়েছে রাস্তাটিতে। এখন সেখানে খোয়ার পরিবর্তে রয়েছে কাদা। সামান্য বৃষ্টিতেই কাদার সাথে জমে থাকে হাঁটুপানি। ফলে জনদুর্ভোগ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ৎএ ছাড়া পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় পৌর শহরের সব সড়কেই পানি জমে থাকে। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে সড়কগুলো। বর্ষা মৌসুমে জনসাধারণের ভোগান্তি বেড়েছে কয়েকগুণ। বিশেষ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বর্তমান মেয়র আহম্মেদ আলী নির্বাচিত হওয়ার পর পৌর এলাকার রাস্তাঘাট প্রায় ৮০ ভাগ অচল হয়ে পড়েছে। পানির লাইন নির্মানের নামে ভাল রাস্তাগুলো অযাচিতভাবে খোড়াখুড়ি করে চলাচলের অযোগ্য করে ফেলেছেন। ফলে মানুষের দূর্ভোগ বেড়েছে। সড়কের দুপাশে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টি এলেই হাঁটু পানি জমে থাকে।
এ ব্যাপারে সন্ধানী স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী আবির হোসেন, রাসেল ও লিমা খাতুন বলেন, ভাঙা রাস্তায় পানি জমে থাকায় আমাদের স্কুলে আসতে অনেক কষ্ট হয়। এ ছাড়া বিদ্যালয়ের সামনে পানি জমে নর্দমার সৃষ্টি হয়। তাই দ্রুত এ সড়কটি সংস্কারের দাবি জানাই।
এ ব্যাপারে সাইফুল ইসলাম শিপু বলেন, রাস্তা নয়, যেন নর্দমার খাল। সামান্য বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায় জরাজীর্ণ সড়কটিগুলো। ফলে প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটে থাকে এই সড়কে। তিনি বলেন, বর্তমান উন্নয়নের সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়নের গণজোয়ারে দেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন। অথচ, গাংনী পৌরসভার মেয়র সেই উন্নয়ন থেকে পৌরবাসিকে পিছিয়ে দিচ্ছেন।
গাংনী বাজার কমিটির নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রফিক বলেন, প্রতিটি সড়কই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে নাগরিক সুবিধা পাচ্ছে না পৌরবাসী। ব্যবসায়ীদের দোকান পাটের সামনে ময়লা আবর্জনার স্তুপ জমে থাকলেও পৌর কর্তৃপক্ষের কোনো নজর নেই। পৌরসভার যেদিকে তাকানো যায় সেদিকেই ভাগাড় মনে হয়। তিনি অবিলম্বে ব্যবসায়ীদের দোকান পাটের সামনে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার জন্য অনুরোধ করেন। নাহলে ব্যবসায়ীরা পৌর ট্যাক্্র দেবেনা বলেও জানান তিনি।
৮নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা রমেছা খাতুন ও নিমসারন নেছা বলেন, আমরা এখন পৌরসভার নামে গ্রামেই বসবাস করছি। এই রাস্তা দিয়ে হেটে যেতে গিয়ে পাড়ার এক নারী পড়ে গিয়ে পা ভেঙ্গে গিয়েছে।
৭নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আক্কাছ আলী বলেন, ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় রাস্তার উপরেই হাঁটু পানি জমে থাকে। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী ছাড়াও সাধারণ মানুষের নাকাল বাড়ে।
ক্রীড়ামোদি রোকনুজ্জমান বলেন, গাংনীর ক্রীড়াবিদদের একমাত্র খেলার মাঠ গাংনী হাইস্কুল ফুটবল মাঠটিতে কয়েক গাড়ি মাটি এনে ফেলে রেখে সেটিও রুদ্ধ করে ফেলেছেন মেয়র। এখন আর সেখানে খেলতে পারছেনা কোমলমতি ছেলেরা। এছাড়া এখানে সেখানে আবর্জনা আর ময়লার স্তুপ জমে থাকে সব সময়। সবমিলিয়ে গাংনী পৌরসভার বিভিন্ন স্থান এখন ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।
প্রায় ২১ বছর বয়সী দ্বিতীয় শ্রেনীর এই পৌরসভায় নেই শিশুপার্ক বা জনগণের বিনোদনের কোনো ব্যবস্থা। ব্যবহারযোগ্য কোনো শৌচাগারও নেই বেশিরভাগ স্থানে। বেশিরভাগ স্থানে নেই সুপেয় পানির ব্যবস্থা। পৌরসভা দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত হলেও বাস্তবে পৌরসভায় নেই উন্নয়নের ছোঁয়া। গাংনী পৌর মেয়র আহম্মেদ আলী বলেন, পৌরসভার কয়েকটি সড়কে কাজ চলছে। এরই মধ্যে বৃষ্টি হওয়ায় মানুষের চলাচলে কিছুটা ভোগান্তী হচ্ছে। তবে কিছু কাজ চলছে, বড় প্রকল্পের কাজ শিঘ্রই শুরু হবে তখন দৃশ্যমান উন্নয়ন দেখা যাবে। কারণ প্রকল্প আনা অনেক কঠিন কাজ।
গত পরশু দিন ৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা পেয়েছি বিভিন্ন মহল্লার পকেট রাস্তাগুলো হিয়ারিং কাজের জন্য। দ্রুত সে কাজ শুরু হবে। ইতোমধ্যে ১৮ কোটি টাকার ড্রেণ নির্মাণের কাজ চলছে, ২৩ কোটি প্রকল্পের পানির লাইনের কাজ চলছে, ইউজিপি-৪ এর ১০০ কোটি টাকার কাজ দ্রুত শুরু হবে। কাজগুলো সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন হলে উন্নয়নে চিত্র দেখা যাবে।
পাল্টা অভিযোগ করে মেয়র আহম্মেদ আলী বলেন, দুদিনের বৃষ্টিতে একটু পানি জমেছে আর ক্যাসিনো ব্যবসায়ী শিপুর এগুলো সহ্য হচ্ছে না। সে কিভাবে ক্যাসিনো ব্যবসা করে, কিভাবে সে এত টাকার মালিক হলো সেগুলো নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমি প্রশাসনের কাছে আহবান জানাচ্ছি।