দ্বিতীয় দফা পৌর নির্বাচনে আগামী ১৬ জানুয়ারী দেশের ৬১টি পৌরসভার মধ্যে মেহেরপুর জেলার মেয়াদোত্তীর্ণ গাংনী পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
গতকাল বুধবার নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি’র বেশ কিছু সম্ভাব্য প্রার্থী গাংনীর মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। দলীয় প্রতীক পেতে নিজেদের যোগ্য প্রমাণের পাশাপাশি নেতৃবৃন্দের সাথে লবিং অব্যহত রেখেছেন তারা। স্থানীয় নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথেও বিভিন্নভাবে সাক্ষাত করে দলীয় প্রতীক নামক সোনার হরিণ সন্ধান করছেন এসব প্রার্থীরা।
বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে, গাংনী পৌরসভার বর্তমান মেয়র আশরাফুল ইসলাম, সাবেক মেয়র আহম্মেদ আলী, উপজেলা যুবলীগ সভাপতি মোশাররফ হোসেন, সহ-সভাপতি ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র নবীর উদ্দীন, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনারুল ইসলাম বাবু ও সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেনের ব্যক্তিগত সহকারি সাইফুজ্জামান সিপু আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীতার জানান দিয়েছেন বেশ আগেই।
অপরদিকে প্রার্থীতা নিয়ে আলোচনায় থাকলেও মঙ্গলবার (০১ ডিসেম্বর) নিজের ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে প্রার্থী হিসেবে দোয়া চেয়েছেন মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেকের ছেলে ইঞ্জি: মাসুম বিল্লাহ অভি এবং জেলা পরিষদ সদস্য ও গাংনী পৌর মেয়রের স্ত্রী শাহানা ইসলাম শান্তনা। ফলে তারাও সম্ভাব্য হিসেবে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। সব মিলিয়ে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী এখন আট জন। এই আটজনকেই বিভিন্ন দিক থেকেই শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে জানান দিচ্ছেন তার কর্মী সমর্থকরা। তবে কে হচ্ছেন নৌকার কাণ্ডারি তা দেখার অপেক্ষায় গাংনীবাসী।
এছাড়াও আওয়ামী লীগের আরও কয়েকজনের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ¦ীতা করার কথা শোনা গেলেও তারা ঘোষণা দেননি এবং গণসংযোগেও মাঠে নেই। উপরোক্ত সম্ভাব্য প্রার্থীদের অনেকেই এবার বেশ আগে থেকেই গণসংযোগ, পথসভা ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রার্থীতা জানান দিয়েছেন। কর্মীদের একত্র করে তাদের শক্তি জানান দেওয়ার কাজটিও করছেন তারা। তবে এসব ছাপিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ কাকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করবে আর কেন্দ্র কাকেই বা প্রতীক দিবে তা নিয়ে চলছে নানান হিসেব-নিকেশ।
এদিকে বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যে উপজেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবলু, পৌর বিএনপি সাধারণ সম্পাদক মকবুল হোসেন মেঘলা ও সাবেক সভাপতি ইনসারুল হক ইন্সুর নাম শোনা যাচ্ছে।
এছাড়াও জামায়াত ও অন্যান্য কোন দলের কেউ প্রার্থী হিসেবে এখনও কেউ প্রচারণায় আসেননি। বিএনপি নেতাকর্মী সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের পৌর নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী ইনসারুল হক ইন্সু ধানের শীষ প্রতীকে শোষনীয় পরাজয় বরণ করেন। নেতাকর্মীদের বৈঈমানীকে দায়ী করেছিলেন ইনসারুল ইক ইন্সু ও তার পক্ষের নেতাকর্মীরা। তবে বিএনপি নেতাকর্মীদের অকেনে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছিলেন আসাদুজ্জামান বাবলুকে মনোনীত করলে শোষণীয় পরাজয় হতো নয়। প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভুল সিদ্ধান্ত ছিল বলে দাবি করেন বিএনপির অনেক নেতাকর্মী।
বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে শংকা:
আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ভাষ্যনুযায়ী বিগত দিনের বিভিন্ন নির্বাচনে দলীয় প্রতীকের বিপক্ষে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রার্থী হয়েছিলেন তাদের অনেকে বিজয়ী হয়েছিলেন। তবে এবার প্রথম দফা পৌর নির্বাচনের প্রার্থী চুড়ান্তের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বিদ্রোহের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েই বিবেচনা করেছেন। বিশেষ করে চুয়াডাঙ্গা পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন নৌকা প্রতীক পেয়েও হারিয়েছেন। এর কারণ হিসেবে ২০১৮ সালে উপজেলা নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীতাকে দায়ী করেছেন অনেকে। ঘটনাটি চুয়াডাঙ্গার হলেও এর জের আলোচনা চলছে গাংনী পৌরসভা নির্বাচনের ক্ষেত্রে। বিশেষ করে ২০১৫ সালের পৌর নির্বাচনে স্থানীয় আওয়ামী লীগ এককভাবে প্রার্থী নির্বাচন করে বর্তমান মেয়র আশরাফুল ইসলামের নাম কেন্দ্র পাঠিয়েছিল। তারপরেও সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগের বলিষ্ট নেতা আহম্মেদ আলী পান নৌকা প্রতীক। বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ¦ীতা করেন আশরাফুল ইসলাম।
আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দাবি, দলীয় কিছু নেতাকর্মীর গোপন বিরোধিতা এবং বিএনপি-জামায়াতের কিছু নেতাকর্মী প্রকাশ্যে আশরাফুল ইসলামের পক্ষে অবস্থান নেয়। ফলে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীদের ভরাডুবি হয়। জয়লাভের পরে আশরাফুল ইসলাম একটি শক্ত ভিত্তি তৈরি করে রাজনৈতিকভাবেই এগিয়ে গেছেন। আওয়ামী লীগের অন্যান্য প্রার্থীদের মতই তিনি শক্তিশালী প্রার্থী হলেও বিদ্রোহী প্রার্থীতার কারণে তার দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে শংকা সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে শেষ পর্যন্ত তার স্ত্রী দলীয় মনোনয়ন চাচ্ছেন কি না ? তা নিয়েও আলোচনার অন্ত নেই।
তবে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল এক নেতা জানান, মাঠের অবস্থা বিবেচনা ও কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে এবার নৌকা প্রতীক পাবেন যোগ্য প্রার্থী। তবে সেই যোগ্য ও ভাগ্যবান কে হচ্ছেন তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও কয়েকদিন।
এদিকে বিএনপি নানাভাবে রাজনৈতিক চাপের মধ্যেও প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন উপজেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবলু। তিনি ছাড়া অন্য কোন প্রার্থী জোরালো প্রচারণায়ও নেই। বিএনপির প্রার্থী চুড়ান্তের ক্ষেত্রেও স্থানীয় ও কেন্দ্র কিভাবে মূল্যয়ন করেন তা নিয়ে নেতাকর্মীদের আলোচনা জোরালো।