মেহেরপুরের যুব সমাজ আর্থ সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক ভুমিকা রেখে চলেছে। তারা নির্যাতিত নিপিড়িত অসহায় মানুষের পাশেও দাঁড়িয়ে সমাজ গঠনে অনন্য অবদান রাখছে। এরই ধারাবাহিকতায় যুব সমাজ বয়োভারে বৃদ্ধ আব্দুল গনির পরিত্যক্ত বসত ঘরটি মেরামত করে দিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। ঘটনাটি মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার নওপাড়া নবীনপুর গ্রামের। মেরামত নয়,অসহায় বৃদ্ধ আব্দুল গনিকে একটি সরকারি পাকা ঘর দেবার দাবীও জানান তারা।
জানাগেছে, নওয়াপাড়া নবীনপুর গ্রামের আব্দুল গনি। বয়স ৯৫ বছর। পেশায় তিনি একজন দিনমজুর। দুই ছেলে তিন মেয়ের জনক। ছেলে ও মেয়েরা নিজের নিজের সংসার নিয়ে ব্যস্ত। বয়স বৃদ্ধির কারণে তাকে কেউ দিন মজুরের কাজে না নেয়ায় জিবন জীবীকার তাগিদে বেছে নিয়েছিলেন ঘটকালি পেশা। বিয়ের ব্যবস্থা করলে সেখান থেকে যা পাওয়া যেতো তাই দিয়ে চলতো সংসারের সব খরচ। এখন নিজেই নিজের কাছে ভারী হওয়ায় ঘটকালী পেশাটাও তার নেই। এদিকে নিজে ও স্ত্রী খাদিজা বেগম শ্বাস কষ্টের রোগী। কোন রকমে চেয়ে চিন্তে দ’মঠো ভাত জুটলেও জুটেনা রোগ থেকে নিরাময়ের ওষুধ। উপরন্ত বসত ঘরটি জরাজীর্ণ। পয়সার অভাবে সেটিও ঠিক করতে পারেন না আব্দুল গনি। ঝড় বৃষ্টি কিংবা প্রতিকুল আবহাওয়ায় এক রকম সংগ্রাম করেই টিকে থাকতে হয় তাদের। ঘরের ছাউনির টিন গুলি ফুটো হয়ে গেছে। চারিদিকের বেড়াও ভেঙ্গে পড়েছে। ঘরের চারদিক তাল পাতার ঠেকনা দেয়া। প্রচন্ড শীত আর কুয়াশায় ঘরে থাকা দায়। শীত আসলেই বাড়ে স্বাসকষ্ট। আব্দুল গনির এই করুণ অবস্থা দেখে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন একটি স্বেচ্ছা সেবী সংগঠন। ‘কিশোরের ডাক’ নামের ওই সংগঠনটি ঘরের টিন আর বাঁশ দিয়ে মেরামত করার উদ্যোগ নেয়। সোমবার সকাল থেকে সংগঠনের সদস্যরা কাজে নেমে পড়েন। নিজ উদ্যোগে ঘরটি নতুন করে মেরামত করার কাজ শুরু করেন।
আব্দুল গনি (ওরফে গনি ঘটক) জানান, জিবনের অনেক মানুষের উপকার করেছেন। সম্পন্ন করেছেন দুই শতাধিক বিয়ে। গ্রামে গ্রামে ঘুরতে না পেরে সে পেশা ছেড়েছেন বছর পাঁচেক আগে । অর্থের অভাবে বসত ঘরটি মেরামত করতে পারেন নি তিনি। আব্দুল গনির স্ত্রী খদেজা বেগম জানান, স্বামী আব্দুল গনি পরপর দ’ুবার স্ট্রোক হয়ে প্যারালাইজড হয়ে পড়েছেন। তাকে মুখে তুলে খাওয়াতে হয়। ছেলে মেয়েদেরও অভাবের সংসার। তারাও পারেনা বাবা মাকে দেখতে। চেয়ারম্যান মেম্বারদের কাছেও সরকারী ঘর পাবার জন্য আবেদন করেও কোন লাভ হয়নি। গ্রামের কিছু যুবক আমার ঘরটি আপাতত মেরামত করে দিচ্ছেন এতেই বেশ খুশি তিনি। তার পরও জিবনের শেষ সময় একটি ভাল ঘরে বসত করতে চান তিনি। সংগঠনটি ও স্থানীয় লোকজন বৃদ্ধ আব্দুল গনির জন্য একটি সরকারী ঘরের দাবী করেছেন।
স্থানীয় যুবক সোহেল জানান, আমি একটি পারিবারিক কাজে এসে বৃদ্ধ আব্দুল গনির মানবেতর জীবনযাপনের চিত্র দেখে খুবই কষ্ট লেগেছে। আমি একজন ’কিশোরের ডাক’র সদস্য হিসেবে বিষয়টি সকলকে জানালে সকলে তাৎক্ষণিকভাবে অর্থ যোগাড় করে ঘরটি মেরামত করে দিচ্ছি। তবে এটি স্থায়ী নয়, সরকারিভাবে সহায়তা প্রয়োজন। যুবক জাহাঙ্গীর আলম জানায়, আমরা অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাৎক্ষণিক একটা ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। তবে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্পের একটি ঘর পেলে তারা নিশ্চিন্ত হবে।
কাথুলী ইনিয়ন পরিষদের সদস্য আনারুল ইসলাম বলেন, আমাদের এখানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়েছি মাত্র কয়েকটি। যা সকলকে দেয়া সম্ভব হয়নি। আব্দুল গনি বিষয়টি নিয়ে চেয়ারম্যান সাহেবের সাথে কথা বলবো। সামনে সুযোগ আসলে তাদের একটা ব্যবস্থা হবে।
ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান জানান, বৃদ্ধ আব্দুল গনির বিষয়টি আমি জানতে পেরেছি। তার জন্য একটি ঘরের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করবো।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমী খানম বলেন, এমন মানবিক বিষয় । মানূষ যখন বৃদ্ধ হয়ে যায়,তখন তারা অসহায় হয়ে পড়ে। আমি অবশ্যই চেষ্টা করবো তাদের একটি ঘরের ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্য। ঘরের জন্য একটি আবেদন প্রয়োজন। পবিরার থেকে আবেদন করলে আমার জন্য সুবিধা হবে।