মেহেরপুরের গাংনীতে আবারো অ্যানথ্রাক্স রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। ছড়িয়ে পড়ছে মহামারি আকারে। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অনেকেই চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ্য হয়েছেন, আবার অনেকেই রয়েছেন চিকিসৎসাধীন। লোক লজ্জায় অ্যানথ্রাক্সের ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন দিনের পর দিন।
তবে প্রাণীসম্পদ বিভাগ বলছে ইতোমধ্যেই খামারী ও পশু পালনকারিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে সচেতন করা হয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন জনসচেতনতায় এর একমাত্র প্রতিকার।
গাংনী হাসপাতাল সুত্রে জানাগেছে, ২০২২ সালের গত ৬ মাসে ১৭৬ জন রোগী অ্যানথ্রাক্স এর ক্ষত নিয়ে চেকেৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে পুরুষ রোগী ৮৯ জন এবং নারী রোগী রয়েছেন ৮৭জন।
সীমান্ত এলাকা কাজিপুর, হাড়াভাঙ্গা, তেতুলবাড়িয়া, কাথুলী ও ভাটপাড়া এলাকায় অ্যানথ্রাক্সের প্রাদুর্ভাব বেশি লক্ষনীয়। গেল বছর ২০২১ সালে একই এলাকায় অ্যানথ্রাক্স আক্রান্তের শিকার হন ৪১৭ জন।
এদের মধ্যে নারী ২২৯ জন এবং পুরুষ ১৮৮ জন। এবছর পুরুষের চেয়ে নারী রোগীদের সংখ্যা বেশি। রোগাক্রান্ত পশুর মাংস স্পর্শ ও মাটির সংস্পর্শে এই রোগ গরু ও মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্ত হয়ে গাংনী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ভাটপাড়া গ্রামের জিয়ারুল চৌধুরী জানান, কয়েকদিন আগে তার পালিত একটি ছাগল অসুস্থ হয়ে পড়ে। ছাগলটি জবাই করে মাংস নাড়াচাড়া করি। কয়েক ঘন্টা পরে আমার একটি হাতে জ্বালাপোড়া শুরু হয় এবং কিছু সময়ের মধ্যেই ফোঁষ্কা ও ক্ষতের সৃষ্টি হয়। আমি সাথে সাথে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়। আমার পরিস্থিতি ভাল না দেখে কর্মরত চিকিৎসক কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। সেখানে এক সপ্তাহ চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে আসি তবে এখনও পুরো সুস্থ হতে পারিনি। আমার আক্রান্ত হাতটি এখনও আগুনে পুড়ে ঝলসে যাওয়ার মত অবস্থা।
একই গ্রামের চা দোকানি আব্দুল আলিম জানায়, তিনি মাঝে মধ্যে কশাইয়ের কাজ করেন। প্রতিবেশি একজনের অসুস্থ্য ছাগল জবাই করি এবং মাংস নাড়াচাড়া করে আমার দুটি আংগুলে ক্ষত হয়। গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়ে এখন সুস্থ্য আছি।
ওই গ্রামের কালোবুড়ি ও রাবেয়া খাতুন জানায়, আমি ছাগল ও গরু পালন করে সংসার চালায়। দুজনের বাড়িতে ১০/১২টি ছাগল ছিল। এক সপ্তাহে বেশ কয়েকটি ছাগল একবার চিৎকার দিয়ে মারা গেছে। জবাই করার সময় হয়নি। এতে আমাদের অনেক টাকার ক্ষতি হয়ে গেছে। পরে পশু চিকিৎসকদের জানালে অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত হয়েছে বলে জানান। পরে মৃত ছাগল মাটির নিচে পুতে রাখি।
উপজেলা পলাশী পাড়া গ্রামের সোনিয়া ও গোপাল নগর গ্রামের শিখা জানায়, বাড়িতে ছাগল জবাই করে মাংসা কাটতে কাটতে আমার দুই হাত জ্বালাপোড়া শুরু করে এবং কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ক্ষত সৃষ্টি হলে হাসপাতালে চিকিৎসা নিই। এতে আমাকে বেশ কিছুদিন অসুস্থ্য থাকতে হয়েছে।
কাজিপুর গ্রামের জুবায়েদ ও কল্যাণপুর গ্রামের ওমর আলী আক্রান্ত হন গরুর মাংস কাটতে গিয়ে। তারাও হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অনেকেই অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হলেও লোক লজ্জার ভয়ে বা না বুঝে চিকিৎসা নিচ্ছেন না। আবার কারো পশু আক্রান্ত হলেও তা গোপন রেখে মাংস বিক্রি করছেন।
তবে আক্রান্তরা অনেকেই বলেছেন তারা অ্যানথ্রাক্স কি তা জানেন না । জানলে সাবধানতা অবলম্বন করতেন। তাদেরকে কেউ অ্যানথ্রাক্স সম্পর্কে জানায়নি।
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগ নিয়ন্ত্রক বিভাগে দায়িত্ব প্রাপ্ত চিকিৎসক ডাক্তার আদিলা আজহার বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে সচেতন করা হচ্ছে। যেহেতু পশুর মাংস থেকে এই রোগ ছড়াচ্ছে সেহেতু প্রাণীসম্পদ বিভাগ বিষয়ে বিভিন্ন গ্রাম মহল্লায় জনসচেতনাতা ও অ্যানথ্রাক্স কি তা জানানো প্রয়োজন। তবে আতংক হবার কিছু নেই। চিকিৎসা নিলে অ্যানথ্যাক্স ভাল হয়। তবে পশু জবাই করার আগে অ্যানথ্রাক্স পরিক্ষা করা খুবই জরুরী বলেও পরামর্শ দেন তিনি।
মেহেরপুর জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাইদুর রহমান বলেন, গরু, ছাগল ও মাটির সংস্পর্শে অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। মেহেরপুর জেলায় শুধুমাত্র গাংনী উপজেলায় এর প্রাদুর্ভাব। গেল বছর দ্ ুএকটি গ্রামে রোগী সনাত্ব হয়েছিল। এবছর বেশ কয়েকটি গ্রামের অ্যানথ্রাক্স দেখা দিয়েছে। আমরা বিভিন্ন মানুষকে আক্রান্ত গবাদি পশু জবাই করতে নিষেধ করেছি এবং সচেতনতা তৈরী করছি।