মেহেরপুরের গাংনীর বামুন্দি এলাকার বিভিন্ন গ্রামে ঋণ দেবার কথা বলে জামানতের কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়েছে একটি প্রতারক চক্র।
পল্লী উন্নয়ন সমিতির ব্যানারে গাংনীর ছাতিয়ান গ্রামে অফিস খুলে বসেন প্রতারক চক্রটি। আকর্শনীয় অফারে কয়েকদিনের ব্যাবধানে জামানতের টাকা নিয়ে রাতারাতি আত্মগোপন করেন তারা। সমিতির ব্যবস্থাপক ও সদস্যদের পরিচয় সনাক্ত করা সম্ভব না হলেও তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নম্বর দিয়ে গাংনী থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগিরা। গাংনী থানা পুলিশ বলছেন বিষয়টি খোজ খবর নেয়া হচ্ছে এবং প্রতারক চক্রটিকে গ্রেফতারের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে উপজেলা প্রশাসন বলছেন এসব সচেতনাতার অভাব। খোঁজ খবর না নিয়ে যার তার হাতে টাকা দেয়া মানুষের বোকামি ছাড়া কিছুই না। এখন আগের তুলনায় মানুষ অনেকটা সচেতন হয়েছে। তবুও মানুষ ঠকলে কিছুই করার থাকেনা।
গাংনীর আকুবপুর গ্রামের কাজলী খাতুন জানান, এ উপজেলার ছাতিয়ান গ্রামের বজলুর রহমানের বাড়ি ভাড়া নিয়ে অফিস খুলে বসেন আশিক নামের এক যুবক। নিজেকে পল্লী উন্নয়ন সমিতির শাখা ব্যবস্থাপক পরিচয় দিয়ে একটি সাইনবোর্ড সর্বস্ব অফিস খুলে বিভিন্ন গ্রামে সমিতি গঠন করা শুরু করে।
ইতোমধ্যে এক লক্ষ টাকা করে ঋণ দেবার প্রতিশ্রতি দিয়ে তার কাছ থেকে জামানত হিসেবে নেয়া হয় ১০ হাজার ৫০০ টাকা, একই হারে দিপুর স্ত্রী মাবিয়া খাতুন, সজিবের স্ত্রী সজনি খাতুন, কুরবান আলীর স্ত্রী স্বপ্না, লাল্টুর স্ত্রী পপি খাতুনের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা লোন দেয়ার কথা বলে পাঁচ হাজার ৫০০ টাকা, রাশিদুলের স্ত্রী বেবেকা খাতুনের সাথে দেড় হাজার টাকাসহ বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে কয়েক লক্ষ টাকা উত্তোলন করে। এক সপ্তাহ পর ঋণ দেবার কথা থাকলেও পরে অফিসে তালা ঝুলিয়ে আত্নগোন করে আশিক ও তার সহকর্মিরা।
পরে ভুক্তভোগীরা সমিতির লোকজনের সাথে যোগাযোগ করতে না পেরে ছাতিয়ান গ্রামে গিয়ে দেখেন অফিস তালাবদ্ধ। এবং আশিকের মোবাইল ফোনটিও বন্ধ । শুধু আকুবপুর গ্রামেই নয় উপজেলার মটমুড়া, বাওট, মহম্মদপুর গ্রামের অন্তত দেড়শতাধিক নারীদের সাথে টাকা উত্তোলন করে প্রতারকচক্রটি। ভুক্তভোগী স্বপ্না খাতুন জানান, সাপ্তাহিক দেড় হাজার টাকা সুদের ওপর সাড়ে দশ হাজার টাকা তুলে দেয়া হয় আশিকের হাতে। এখন অফিস ও মোবাইল দুটোই বন্ধ। আমি এখন কি করে ধারের টাকা পরিশোধ করবো তা ভেবে দিশেহারা হয়ে পড়েছি।
এবিষয়ে কথিত শাখা ব্যবস্থাপক শাহিনের ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বার ০১৯১৭৫৬৯৭২৬ ও ০১৯১৬৭৬৫৮০২ এ কল করে বন্ধ পাওয়া গেছে। সমিতির কার্যালয় গুটিয়ে নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে গাংনী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন প্রতারণার শিকার গ্রাহকগন। মেহেরপুর জেলা এজিও ফোরামের সভাপতি মুহাঃ মোশারফ হোসেন বলেন, গ্রামে গ্রামে যারা যাকা তুলে বেড়ায় ঋণ দেবার জন্য তাদের অব্যশই উপজেলা নির্বাহী অঅফিসার কিংবা এনজিও সংশ্লিষ্টদের সাথে খোজ খবর না নিয়ে কারো হাতে টাকা দিয়ে প্রতারিত না হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
গাংনী থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) আব্দুর রাজ্জাক জানান, এসংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। আত্নগোপনে থাকা সমিতির শাখা ব্যবস্থাপক শাহিনসহ সকলকে খুঁজে বেরকরে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমী খানম জানান, যারা সমিতি থেকে ঋণ নেন তারা সমাজের খুবই অসহায় দরিদ্র মানুষ। এমন অসহায় মানুষদের সাথে যারা প্রতারণা করেছে তাদের আইনের আওতায় আনা দরকার সেজন্য প্রয়োজন সাধারণ মানুষের সহায়তা। তাদেরকে চিনতে পারলে অবশ্যই পুলিশ কিংবা উপজেলা প্রশানকে খবর দেয়ার অনুরোধ করেন তিনি।