মেহেরপুর জেলার উপর দিয়ে গেল দুসপ্তাহে বয়ে যাওয়া শৈত্য প্রবাহ ও কনকনে শীতে বোরো ধানের বীজতলায় দেখা দিয়েছে কোল্ড ইনজুরি। বীজতলার ধানচারা হলুদ হয়ে যাচ্ছে। আবার কোথাও কোথাও চারা কুঁকড়িয়ে পচন ধরে অঙ্কুরিত ধানের চারা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করেও কোন লাভ হচ্ছেনা। বোরো বীজতলা নষ্ট হওয়ায় সময় মত ধানের চারা জমিতে রোপন করতে পারবেন না বলে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন জেলার অনেক কৃষক। বীজতলা রক্ষায় কৃষকদেরকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগ।
গাংনী উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৩৮০.২৫ হেক্টর জমিতে বীজতলা রয়েছে। এর মধ্যে ৩৪৬.২৫ হেক্টর উফসি ও ৩৪ হেক্টর হাইব্রীড। আর বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ হাজার ৪৩০ হেক্টর। এ লক্ষ্যে ৮৫০ জন কৃষককে হাইব্রীড ও ২৪০০ জনকে ঊফসি জাতের বীজ প্রণোদনা দেয়া হয়। সেই সাথে বীজতলা রক্ষায় দেয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় পরামর্শ।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, হাড় কাপানো শীতে ও শৈত্য প্রবাহের কারণে অনেক বীজতলায় চারা গজায়নি। আবার কোথাও কোথায় বীজতলার চারা হলুদ রং ধারণ করেছে। আবার পঁচে গেছে। তবে কোন বীজতলায় পানি বা পলিথিন ব্যবহার দেখা যায় নি। কৃষি অফিস কোন তদারকি করছে না বলেও জানিয়েছেন তারা।
তেরাইল ভরাট এলাকার চাষিরা জানালেন, কয়েকদিনের তীব্র শৈত্যপ্রবাহে আর ঘন কুয়াশায় বীজতলার অনেকাংশ নষ্টের পথে। বীজতলায় দেখা দিয়েছে কোল্ড ইঞ্জুরী। চারাগুলো হলদে হয়ে গেছে। কোনো প্রকার ওষুধ ছিটিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। কৃষি অফিসাররা আসেন না আবার পরামর্শ দেন না। বীজতলা নষ্ট হলে চারাবীজ সংকট দেখা দিবে। ব্যহত হবে লক্ষ্যমাত্র অর্জনে। হাড়াভাঙ্গার কৃষক শাহীন জানান, কৃষি অফিসের পরামর্শে সকালে নলকূপের পানি দেয়াসহ নানা চেষ্টা করেও বীজতলা রক্ষা করা যাচ্ছে না। চারা কিনে আবাদ করাও কঠিন হয়ে যাবে, কারণ অধিকাংশ কৃষকের একই অবস্থা। তাই বোরো আবাদ কীভাবে করব, সে চিন্তায় আছি।
রাইপুর ও ষোলটাকা ইউনিয়নের বেশ কয়েকজন চাষি জানান, কৃষি অফিসাররা এসে পানি রাখা ও পলিথিন ব্যবহারে পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু খরচ বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই পলিথিন ব্যবহারে অনীহা প্রকাশ করেছেন। তাছাড়াও যেসব ছত্রাকনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে তাতে কোন কাজ হচ্ছে না শুধু অর্থ অপচয়। আরো কয়েকদিন কনকনে ঠাণ্ডা ও শৈত্য প্রবাহ থাকলে অধিকাংশ বীজতলা নষ্ট হয়ে যাবে বলেও জানান তারা।
গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার লাভলী খাতুন জানান, যে আবহওয়া বিরাজ করছে তাতে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা থাকছে। চাষিদেরকে বীজতলা রক্ষায় প্রতি রাতে বীজতলায় পানি জমিয়ে সকালে তা ছেড়ে দিতে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। ঘনকুয়াশা থেকে রক্ষায় প্রতি রাতে পলিথিন দিয়ে বেড ঢেকে রাখতে ও ছত্রাক নাশক স্প্রে করারও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তবে অন্যান্য ফসলেও তেমন কোন ক্ষতি হয়নি বলেও জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।
সম্প্রীতি মেহেরপুর জেলায় দেশের দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ তাপমাত্রায় অন্যান্য ফসলের তেমন ক্ষতি না হলেও বোরো বীজতলায় কোল্ড ইঞ্জুরি দেখা দিয়েছে।