এক শিফটের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে সকাল ৯টা থেকে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত কর্মস্থলে হাজির থাকা নিয়ম শিক্ষকদের। কিন্তু এ নিয়মের তোয়াক্কা করছেন না মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বাঁশবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক রুহিনা খাতুন ও শাম্মীয়ারা দীপ্তি। শুধু নিয়মমত উপস্থিতিই না, ক্লাস না নেওয়া ও শিক্ষার্থীদের সাথে খারাপ আচরণসহ নানা অভিযোগ রয়েছে ওই দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে। ক্ষমতা দেখিয়ে নিজের মত চাকরি করছেন তারা। দীর্ঘদিন ধরে তারা এসকল অনিয়ম করলেও তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে পারেন না কেউ।
সহকারি শিক্ষক রুহিনা খাতুনের স্বামী পাবনা জেলার ঈশ্বরদি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন এবং শাম্মীয়ারা দীপ্তি বিদ্যালয়ের পাশেই একজন গ্রাম্য চিকিৎসকের স্ত্রী। দুজনই স্বামী ও আত্মীয় স্বজনদের ক্ষমতা দেখিয়ে মাসের পর মাস এ অনিয়ম করে চলেছেন।
বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে গত রবিবার দুপুরে দিকে ওই বিদ্যালয় পরিদর্শনে যান এ প্রতিবেদক। টিফিন টাইম শেষ করে স্কুলের পুরাতন ভবনের নিচতলায় তৃতীয় ও চতৃর্থ শ্রেণীর ক্লাস নিচ্ছেন দুই শিক্ষক। প্রধান শিক্ষকসহ আরো ৪ জন শিক্ষক বসে গল্প করছেন । অথচ নতুন ভবনের দ্বিতীয় তলায় ৫ম শ্রেণীর নির্ধারিত শিক্ষক ছুটিতে থাকায় ক্লাস হচ্ছে না। ৫ম শ্রেণীতে ১৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ওই দিন চারজন অনুপস্থিত ছিলো। শ্রেণী কক্ষ থেকে বের হয়ে আসার সময় শিক্ষার্থীরা জানায়, প্রতিবেদককে উদ্দেশ্যে করে বলে স্যার আপনার সাথে কথা আছে। তাদের কথা শুনতে গিয়ে তারা দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ বলতে থাকে অবলিলায়। শিক্ষার্থীরা জানায়, শাম্মীয়ারা ম্যাডাম মাসে কয়েকদিন ক্লাস নেন। ঠিকমত বোঝাননা। কিছু বলতে গেলে শিক্ষার্থীদের অভিশাপ দেন আর বলেন, আমার ছেলের পা ধুয়ে পানি খাওয়া দরকার তোদের। অভিযোগের এক পর্যায়ে তারা সমাজ ম্যাডাম রুহিনা খাতুনের বিরুদ্ধেও অভিযোগ দেন। তিনিও মাসে কয়েকদিন ক্লাস নেন। এসে টেবিলের বেঞ্চের উপর পা তুলে বসে থাকেন। কোন কোনদিন টেবিলে ঘুমিয়ে নেন। বেশির ভাগ দিন স্কুলেও আসেননা বলে অভিযোগ তাদের।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ শুনে প্রধান শিক্ষককে নিয়ে নিচে নামতেই দেখা যায় টিফিনের পরে আড়াইটার সময় বিদ্যালয়ে প্রবেশ করছেন সহকারী শিক্ষক শাম্মিআরা দীপ্তি। অথচ টিফিন সময় শেষ হয়েছে দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে। জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, আজকে একটু দেরি হয়ে গেছে বলে চুপ করে থাকেন। কিন্তু অন্যান্য শিক্ষকদের সাথে ও শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলা জানা গেলো তিনি প্রায়ই দেরি করে আসেন। এমনকি মাঝে মাঝে টিফিনের পর আসেন না।
অভিযুক্ত ওই দুই শিক্ষককে নিয়ে একই অভিযোগ করে তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থীরাও। তারা জানায়, রহিনা খাতুন ম্যাডাম মাঝে মাঝে তার বোনকে নিয়ে আসেন ক্লাসে। বোনের সাথে মোবাইলে গেম খেলেন। পড়া নিয়ে কিছু বলতে গেলেও ধমক দেন।
অভিযুক্ত রহিনা খাতুনের সাথে কথা বলা হলে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ঠিক না। আমি ঠিকমত ক্লাস নিয়ে থাকি। মাঝে মাঝে ছোট বোনকে নিয়ে আসি ঠিক, তবে গেম খেলিনা।
তবে প্রধান শিক্ষক মোছা: নুরুন্নাহার খাতুন অভিযুক্ত দুই শিক্ষককে নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন এবং বলেন, আমি কিছু বললেও আমার কথা কেউ শোনে না। কোন শিক্ষক ছুটিতে থাকলে আমি ক্লাস নিলে সেই ক্লাস হয়, অন্য কোন শিক্ষক ক্লাস নেননা।
বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আশরাফুল আলম খান বলেন, সহকারি শিক্ষক রুহিনা খাতুন ও শাম্মীয়ারা দীপ্তির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা আমিও কিছুটা জানি। গত মাসের মাসিক মিটিংয়ে এ নিয়ে কথা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
গাংনী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো: নাসির উদ্দিন বলেন, সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারের কর্মকর্তাকে নিয়ে বিষয়টি দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রসঙ্গত, বাঁশবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৩৫ জন শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক রয়েছেন প্রধানশিক্ষক সহ ৮ জন। কিন্তু এত কম শিক্ষার্থীদের জন্য ৮ জন শিক্ষক থাকলেও বিদ্যালয়টি ঠিকমত ক্লাস হচ্ছে না।