বুধবার বিকেল ৫:৩০ মিনিট। হঠাৎ বিকট শব্দে চমকে উঠেন কার্যালয়ের কর্মচারীগণ। হন্তদন্ত হয়ে সবাই ছুটে এসে দেখতে পান বিশাল আকৃতির সিমেন্ট ঢালাইয়ের একটি খন্ড সিলিং ধ্বসে নিচে মেঝেতে পড়ে আছে। সেখানে রাখা একটি মটর সাইকেলের কিছু অংশ ভেঙে চৌচির। এর নিচে কেউ দাঁড়িয়ে থাকলে ঘটে যেতে পারত নির্মম কেনো দুর্ঘটনা।
গত শতাব্দীর আশির দশকের প্রথমার্ধে নির্মিত ভবনটিতে নির্মাণোত্তর কোন সংস্কারের ব্যবস্থা করা হয়নি। ভবনে বর্তমানে ঝুকি নিয়ে চলছে উপজেলা আনসার ও ভিডিপি ব্যাংক, ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচি প্রকল্প ও সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়। প্রায় অর্ধেকটা জুড়ে সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ের মত গুরুত্বপুর্ণ কার্যক্রম। ঘটনাকালে অদূরে বসেই কাজ করছিলেন নৈশ প্রহরী কাম ঝাড়ুদার মহিবুল ও নকল নবীশ মিজান।
প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে মিজান বলেন, “অল্পের জন্য বেচে গেছি। মটর সাইকেলটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর নিচে দন্ডায়মান যে কেউ থাকলে দুর্ঘটনার পড়তেন ।” উপজেলার সর্বাধিক লোক-সমাগমের দিক থেকে অগ্রগণ্য এই ভবনটি।
এই বিষয়ে সাব-রেজিস্ট্রার মাহফুজ রানা জানান, “গাংনী পুরো জেলার অর্ধেকটা নিয়ে গঠিত একটি উপজেলা। এই কার্যালয় ভবনটি জন-সমাগম, রাজস্ব আহরণ, কর্মসংস্থান ও গুরুত্বের বিচারে প্রণিধানযোগ্য। দুঃখজনক হলেও সত্য, গত প্রায় চার দশকে এর যথাযথ সংস্কারে কেউ কাজ করেনি। তাই আজ এই বেহাল দশা। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে যোগদান করেই গণপূর্ত অধিদপ্তরের জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মহোদয়ের কাছে পত্রযোগে সংস্কারের আহবান জানাই। লকডাউন ও মহামারিতে কাজ না হলেও নির্বাহী প্রকৌশলী জনাব শম্ভু পাল আন্তরিক ছিলেন এবং ৪ লাখ ৭০ হাজার ৩২ টাকার কার্যাদেশ অনুমোদন করেন এবং অল্প সময়ে বেশ কিছু সংস্কার কাজ করে দেন।
একই সময়ে উপজেলা পরিষদকেও কিছু সংস্কারের বিষয়ে অবহিত করা হলে ইতিবাচক আশ্বাস পাওয়া যায়। এ উদ্যোগ বিগত সময়ে কোন অফিসার নেননি বা স্বপ্রণোদিত হয়ে দায়িত্বশীল কেউ সংস্কারে এগিয়ে আসেননি। যার ফলশ্রুতিতে আজ এই দুর্ঘটনা। ভবনটির ছাদে পচা পাতা ও পানি জমে এই ঘটনাটি ঘটতে পারে। এজলাস ও খাসকামরায় এরূপ ফাটল ও ভেজা দৃশ্য ছিল। গতবছর তা মেরামত করা হয়। খাদ্য গুদামের পেছনে নতুন কার্যালয় ভবন নির্মাণের কথা থাকলেও এযাবৎ আলোর মুখ দেখেনি। ভবনটি সংস্কারের অযোগ্য হলে গণপূর্ত তা পরিত্যক্ত ঘোষণা করতে পারে। আর যদি সংস্কারযোগ্য হয় তবে অবিলম্বে সংস্কার শুরু করাই একান্ত কাম্য।” এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত মটর সাইকেলটির খোজ নিয়ে জানা যায় এটি নকল নবীশ হাফিয আল আসাদের। অস্থায়ী নকলকরণ পেশায় নিয়োজিত আসাদের জন্য এই ক্ষতি যেন মরার উপর খাড়ার ঘা।
কার্যালয়টিতে বর্তমান সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে জনাব মো. মাহফুজ রানা যোগদানের পর বেশ কিছু সংস্কার লক্ষ্য করা যায়। ভবনের সামনে ফুলের বাগান, হাত ধোয়ার বেসিন, পতাকা স্ট্যান্ড, সিঁড়ি, বারান্দা, এজলাস, কক্ষসমূহ টাইলসকরণ; ডিজিটাল সিরিয়াল সিস্টেম ডিসপ্লে স্থাপন, দরজা জানালা মেরামত সহ ভবনের ভেতর ও বাহিরে রঙ করা ইত্যাদি কাজ ভবনটির প্রায় ধ্বংসাবস্থাকে কিছুটা হলেও আড়াল করেছে।