মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ধর্মচাকি গ্রামের ভূমিদস্যুরা হাইকোর্টের রায়কে অগ্রাহ্য করে জোরপূর্বক ফসলি জমি দখল করে রেখেছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগি ঐ গ্রামের মৃত ফাকের আলির ছেলে শামসুল হুদা।
ভুক্তভোগি অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শামসুলহুদা জানান, পাকিস্তান আমলে ১৯৬০-৬১ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার দেবিপুর গ্রামের মৃত রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে মো: রিকাব উদ্দিন কেসি এস খতিয়ানের ১৩-১৫/এস এ ৩৯০৩/১ (বাটা) দাগে মোট ৫ একর জমি বন্দোবস্ত দেয়।
পরে ১৯৬২ সালে মো: রিকাব উদ্দিন ধর্মচাকি গ্রামের মৃত ওহিরুদ্দিনের চার ছেলে ফাকের আলি, শকের আলি, আব্দুর সাত্তার ও সিরাজুল ইসলাম এর নিকট ১ একর ৬৬ শতক এবং ভোমরদহ গ্রামের নজির হোসেনের ও মফেজ উদ্দিনের নিকট ১ একর ৯৮ শতক জমি বিক্রয় করে।
বাকি ১ একর ৩২ শতক জমি ধর্মচাকি গ্রামের মৃত তছিম উদ্দিন এর ছেলে মহশিন দিং ও মৃত রজব আলির ছেলে আব্দুর করিম দিং এর নিকট বিক্রয় করে। পরবর্তিতে ঐ জমি ৭৮ সালে ৪৫ নং হিজলবাড়িয়া মৌজার অন্তর্ভুক্ত হয়ে নয়টি দাগে শামসুল হুদাসহ আরও তিন জন ভোগ দখল করে আসে। শামসুলহুদা ও রবিউল ইসলাম ভোগ দখল করেন ৫১৪০ দাগে ১ একর ১৮ শতক, গোলাম মোস্তফা ভোগ করেন ৫১৪৯ দাগে ৫৩ শতক, ৫১৪৭ দাগে গোলাম মর্তুজা ও আবুল হাসান ৮০ শতক ভোগ করেন। গোলাম মোস্তফা, রবিউল ইসলাম ও আবুল হাসান ৫১০৭, ৫১০৮, ৫১২৮ ও ৫১৩৫ দাগে ৪৫ শতক ভোগ দখল করেন।
১৯৬২ সালে নজির হোসেন ও মফেজ উদ্দিনের নিকট থেকে ১ একর ৯৮ শতক জমি বিক্রয় কবলামুলে শাকের আলিগন ক্রয় করেন বলে জানান ভুক্তভোগি মো: শামসুল হুদা। পরবর্তিতে আমাদের ১ একর ৬৬ ও ক্রয়কৃত ১ একর ৯৮ শতক জমি ভোগ দখলকারি এবং ঐ জমিতে শ্যালো টিউবওয়েল স্থাপন করেন বলে তিনি জানান।
১৯৮৮ সালে ঐ গ্রামের মৃত আছালতের ছেলে লতিব ও মৃত ইয়াছিনের ছেলে শুকুর আলি জমি নিজেদের বলে দাবি করে। এখবর পেয়ে ভুক্তভোগি শামসুলহুদা ১৯৮৯ সালে কোর্টে মামলা করে এবং ১৯৯১ সালের অক্টোবরের ২৮ তারিখে নিজেদের ক্রয়কৃত জমি বলে রায় পান। পরে ১৯৯২ সালে মেহেরপুর জজ কোর্টে প্রতিপক্ষরা শামসুল হুদার পক্ষে যে রায় হয় তার বিরুদ্ধে আপিল করে পরাজিত হলে ১৯৯৫ সালে ঢাকা হাইকোর্টে আবারও আপিল করলে তারা হেরে যায়। প্রতপিক্ষরা আপিল মামলায় পরাজিত হলে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ভোগ দখল করে আসছিলেন বলে জানান ভুক্তভোগি শামসুল হুদ।
ভুক্তভোগি শামসুলহুদা আরও জানান, ২০১৫ সালে শুরুর দিকে ধর্মচাকি গ্রামের আব্দুর লতিবের ছেলে লিটন গাংনী উপজেলার তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো: দেলোয়ার হোসেনকে ভুল তথ্যের ভিত্তিতে আমাদের জমির উপরে নিয়ে যায় এবং কংক্রিটের পিলার পত্তন দেয়। হাইকোর্টের রায় এর বিষয়টি ভুমিকর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেনকে অবহিত করলে তিনি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে অফিসে আসতে বলেন বলে সাংবাদিকদের জানান শামসুল হুদা। এ ঘটনার পরের দিন যাবতীয় কাগজপত্র নিয়ে তার কাছে বিচার চাইতে গেলে তিনি অন্যত্র বদলি হয়ে যান।
এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেলোয়ার হোসেনের সাথে মোবাইল ফোনে যোগযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমার কাছে অভিযোগ আসে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যাক্তিরা সরকারি খাস জমি ভোগ দখল করছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে ঐ জমি মুক্ত করতে সেখানে পরিদর্শনে যায়। তাছাড়া কোন পক্ষকে জমি দখলদালিত্ব দেওযা হয়নি।
তিনি এও বলেন , কারও ব্যাক্তি মালিকানা জমি যদি অন্য কেউ জোরপূর্বক দখল করে তাহলে প্রশাসনের সহায়তা নিতে পারে। স্থানীয় প্রশাসন তো এ বিষয়ে আইনী ব্যবস্থা নিতে পারেন।
ভুক্তভোগি শামসুল হুদা জানান, বিক্রয় কবলার মাধ্যমে ক্রয়কৃত জমি দীর্ঘ দিনধরে ভোগ দখল করে আসছি। সেখানে ধর্মচাকি গ্রামের ভ্যান চালক লতিবের ছেলে লিটনের নেতৃত্বে একই গ্রামের মৃত ইয়ার আলির ছেলে মহাবুর, মনিরুল, আব্দুর রহমানের ছেলে দাউদ, আইয়ুব, ইউনুছ, মৃত মজের আলির ছেলে হুমায়, মৃত নজরুলের ছেলে সাইফুল, মৃত নূর হোসেনের ছেলে আব্দুর কাদের, মৃত মোজাহারের ছেলে আরেজুল, মৃত ইয়াছিনের ছেলে শুকুর আলি, মৃত পিয়ার আলির ছেলে ফজলু এই ভূমিদস্যু চক্র মিলে আমাদের জমির ফসল নষ্ট করে তা দখল করে জোর করে ভোগ করে আসছে। এর প্রতিবাদ জানাতে গেলে তারা প্রাণনাশের হুমকি দেয় বলে জানান ভুক্তভোগি শামসুল হুদা। তিনি এর সুষ্ঠ বিচার চেয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করেছেন।
জানতে চাইলে লতিবের ছেলে লিটন মাহমুদ বলেন, ঐ জমি খাস খতিয়ান ভুক্ত জমি তা শামসুল হুদা গং ভোগ করে আসছিল। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানালে তৎকালিন সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেলোয়ার হোসেন আমাদের নিকট ঐ জমির দখল বুঝিয়ে দেয় বলে সাংবাদিকদের জানান লিটন মাহমুদ।
মেপ্র/ইএম