গাংনী পৌর মেয়রের কাছে পাওনা টাকার দাবীতে অনশনরত মা মেয়র পাশে নেই তার পরামর্শ দাতাসহ প্রশাসনের লোকজন। অনশন ভাঙ্গাতে কেউ এগিয়ে আসেননি। আবার কেউ মধ্য¯থতার হাত বাড়িয়ে দেন নি চারদিন পেরিয়ে গেলেও। অনেকেই এ অনশনকে ব্যাক্তি কিংবা রাজনৈতিক ইস্যু বলে মন্তব্য করছেন। মা ও মেয়ের অনশনের চতুর্থ দিন । খোঁজ নিচ্ছেনা কেউ। টনক নড়েনি পৌর মেয়রের।
অনশনরত মৌমিতা খাতুন পলি জানান, গাংনী পৌরসভায় সহকারী কর আদায়কারী পদে নিয়োগের জন্য পৌর মেয়র আশরাফুল ইসলামের সাথে ১৫ লাখ টাকা প্রদান করা হয়। অথচ ২০১৮ সালে আমাকে নিয়োগ না দিয়ে অন্য একজনকে সহকারী কর আদায়কারী পদে নিয়োগ দেন মেয়র আশরাফুল। টাকা ফেরত চেয়ে বারবার তাগাদা দিলেও কোন কর্ণপাত না করায় গত ২০ আগষ্ট বৃহস্পতিবার অনশন করা হয়।
গাংনী থানার ওসির ডাকে সাড়া দিয়ে অনশন ভঙ্গ করা হয়। পরদিন থানায় এক সালিশিতে উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ খালেকসহ পৌর কাউন্সিলরগণ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে মেয়র আশরাফুল ইসলাম জানান, জমি কেনার জন্য পলির স্বামী মোমিন টাকা দিয়েছিলেন। চাকরির জন্য নয়। যেহেতু পলির স্বামী মোমিন টাকা দিয়েছিল তাকে ফেরত দিয়েছি। পরে এক বৈঠকে স্বামি মোমিন হাজির হলেও মেয়র অনুষ্ঠানে উপস্থিত হননি। বাধ্য হয়ে আবারো অনশন শুরু করা হয়।
একটি সুত্র জানায়, রাজনৈতিক সুবিধা নেয়ার জন্য এবং মেয়রকে খাটো করার জন্য পলি ও তার মাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। যারা অনশনের পরামর্শ দিয়েছেন তারা এখন কোন খোঁজ রাখছেন না পলি ও তার মায়ের। ফলে চরম বিপাকে পড়েছেন দিন দিন দিশেহারা হয়ে পড়ছেন তারা।
অপর একটি সুত্র জানান, আশরাফুল ইসলামের প্রতিপক্ষের পরামর্শে পলি ও তার মা বারবার অনশন করছেন। ফলে মেয়র আশরাফুল ইসলাম আরো রাগান্বিত হয়েছেন। তাছাড়া পরের সম্পদ ও টাকার প্রতি আশরাফুল ইসলামের আকৃষ্ট হবার অভ্যাস অনেক আগের বলেও মন্তব্য অনেকের।
এদিকে অনশনরতদের বাহ্যিক ব্যবহারে অনেকেই নানা মন্তব্য করেছেন। ৪দিন ধরে অনশনে থাকলে অসুস্থ হবার কথা। কিন্তু তা হয়নি। মাঝে মধ্যে পলি শহীদ মিনার ছেড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন আবার পলির মা হুশনিয়ারা বেগম বাড়ি গিয়ে সাংসারিক কাজ সেরে আনুষ্ঠানিক ভাবে বসছেন অনশনে।
বৃহস্পতিবার সকালে পলির মা হুসনিয়ারা বেগম অসুস্থ্য মনে করে পলি নিজেই স্থানীয় একটি ফার্মেসী থেকে স্যালাইন কিনে তার মায়ের শরীরে নিজেই পুশ করেছেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলা পরিষদ শহীদ মিনারে আমরণ অনশনের ব্যানার থাকলেও তারা বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অনশনে রয়েছে উপজেলা পরিষদের একটি ঘরে। মৌমিতা খাতুন পলি ও তার বৃদ্ধ মা হুসনিয়ারা বেগমের অনশনের চিত্র দেখে বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ বিদ্রুপাত্মক হাঁসি হাঁসছেন। প্রতক্ষদর্শীরা জানান, পলি ও তার মা অমরণ অনশনের ডাক দিলেও তাদের নাওয়া-খাওয়া সবই ঠিক ঠাক মত চলছে। তবে পলি বলছেন আমরা অনশন থেকে সরে দাঁড়াবোনা।
গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওবাইদুর রহমান জানান, অনশনের বিষয়টি জেনে। আমরা স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ ও মেয়র সাহেবের সাথে বসেছিলাম। বিষয়টি অমীমাংসিত রয়ে গেছে। তবে এসব বিষয়ে আদালতের শরণাপন্ন হওয়া ছাড়া কোন উপায় দেখছি না। তিনি আরো জানান, অনশনরতদের যাতে কেউ সমস্যা না করতে পারে সে জন্য পুলিশ প্রহরার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সেলিম শাহনেওয়াজ জানান, অনশন ও টাকার বিষয়ে মেয়র বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে বাইপাস করছে। বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। তবে তিনি আরো জানান, টাকা পয়সা লেনদেনের বিষয়টি গাংনী পৌর মেয়রের সাথে অনশনকারিদের। তারা পৌর ভবন এলাকায় অনশনে না বসে উপজেলা পরিষদ চত্বরে অনশনের বিষয়টি দুঃখ জনক। আইনগত ব্যাবস্থা না নিয়ে অনশনের পরিকল্পনা করাটা যুক্তিযুক্ত কিনা সেটাও ভাবা দরকার ছিল তাদের। তবে তারা যেহেতু অনশনে রয়েছেন তাদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ তৎপর রয়েছে।