মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক কল্যাণ সমিতির কার্যালয়ের জমি দখলকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের মধ্যে সৃষ্ট সংঘর্ষে ছয় শিক্ষক ও নারীসহ অনন্তত ১৬ জন আহত হয়েছেন।
আহতদের উদ্ধার করে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার(২২ আগষ্ট) বেলা ১১ টার সময় গাংনী পৌর এলাকার-মেহেরপুর সড়কের বাঁশবাড়িয়া এলাকায় অবস্থিত শিক্ষক কল্যাণ সমিতির কার্যালয়ের সামনে লাঠিশোঠা নিয়ে এক রক্তক্ষয়ি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
আহত শিক্ষকরা হলেন- উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক কল্যাণ সমিতির সভাপতি ও গাংনী পাইলট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আফজাল হোসেন(৫৫) জিলবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন মিঠু, এইচবি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাজু আহমেদ,সাহেবনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদ, রামনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান লিখন, ও গাংনী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক রায়হান আলী। শিক্ষকদের ওপর হামলাকারিদের দ্রত গ্রেপ্তারের দাবী জানিয়ে সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষকরা।
অপরদিকে শিক্ষকদের হামলায় কার্যালয়ের জমি দখলকারিদের মধ্যে নারীসহ অন্তত দশজন আহত হয়েছেন। আহতদের গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কুষ্টিয়া মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে।
আহতরা হলো-বাঁশবাড়িয়া গ্রামের নিজাম উদ্দিন-(৪০), মিজান (২৫), মুজাম (৩৫), সোহেলী খাতুন (২৫), সুমাইয়া (২২), হাবিবা খাতুন (৪০) শহিদুল ইসলাম (৫০), শিপন আলী (২০), সোহরাব হোসেন (৩০), ইমরান আলী (২৫), নাজিরা খাতুন (২৫)।
আহতদের মধ্যে মুজাম ও সোহেলীর অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় তাদের দুজনকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।
আধা ঘন্টা যাবত সংঘর্ষের সময় গাংনী থানা পুলিশের একটি টীম ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।
গাংনী পৌর মেয়র আহমেদ আলী, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এমএ খালেক ও গাংনী থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। উভয় পক্ষকে শান্ত করে জমিজমার কাগজপত্র যাচাই করার প্রতিশ্রতি দিলে শিক্ষকরা তাদের কর্মসুচী প্রত্যাহার করেন। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
শিক্ষক কল্যাণ সমিতির সভাপতি ও গাংনী পাইলট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আফজাল হোসেন জানান, প্রায় দশ বছর আগে আমরা সমিতির নামে ন্যায্য টাকা দিয়ে হাবিুর রহমানের ওয়ারিশদের কাছ থেকে জমি ক্রয় করি। তারপর সেখানে সমিতির কার্যালয় ভবন নির্মাণ করি। সেই কার্যালয়ের সামনে হঠাৎ করে হাবিবুর রহমানের নামের একজন ব্যক্তি রাতের আধারে জমি দখলে নিয়ে বসত শুরু করে। তাদের বার বার তাগাদা দেয়া সত্বেও তারা আমাদের জায়গা খালি করে দেয়নি। আজ সকালে সমিতির সকল সদস্যরা কার্যালয়ের জমি দখল মুক্ত করতে আসে। এসময় বাড়ির ভিতর থেকে ইট পাটকেল মারতে শুরু করে। হাবিবুর রহমানের লোকজনের ইটের আঘাতে আমাদের ছয় শিক্ষক রক্তাক্ত জখম হয়েছে। সমিতির নামে ক্রয়কৃত জমি দখল করতে উপজেলার সকল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ছুটে এসেছেন।
অন্যদিকে আহত নিজাম ও মুজাম বলেন, শিক্ষকরা যে জমি ক্রয় করেছে সেই জমিতে আমাদের অংশ রয়েছে। আমাদের অংশ বুঝিয়ে না দিয়ে তারা অফিস নির্মাণ করেছেন। হাবিবুর রহমান তার নিজের জমি দাবী করে বসবাস শুরু করেন।
আজ সকালে হঠাৎ কয়েক শো শিক্ষক হাতে বাশের লাঠি নিয়ে রাস্তায় জড়ো হয় এবং জোরপুর্বক ইট ও বালি ফেলতে শুরু করে। আমরা বাধা দিতে গেলে শিক্ষরা তাদের হাতে থাকা বাঁশের লাঠি দিয়ে এলোপাথাড়ি মারধর শুরু করেন। শিক্ষকদের হামলায় আমাদের পক্ষের নারীসহ মোট ১০জন আহত হয়েছেন।
আহতদের মধ্যে দুজনকে কুষ্টিয়া হাসপাতালে রেফার করেছেন চিকিৎসক। হামলার সময় শিক্ষকরা আমাদের বাড়িঘরের সমস্ত কিছু ভেঙ্গে তছরুপাত করেছেন। এবং ঘরের টিন ও আসবাপত্র যা ছিল তা সব নিয়ে গেছে বলেও দাবী করেন তারা।
গাংনী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমি ঘটনা শুনতে পেয়ে দ্রত পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছি। উভয় পক্ষের লোকজন জখম হয়েছে। জখম হওয়া ব্যক্তিরা চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বর্তমানে পরিস্থিতি থমথমে। এখনও কোন পক্ষ থেকে অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।