গাংনী উপজেলার ধানখোলা ইউনিয়নের কসবা থেকে পাটাপুকুরিয়া দুই কিলোমিটার রাস্তা হাটু কাদায় বেহাল অবস্থা। মানুষ চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় মাঠ থেকে ফসল বাড়িতে আনতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে এলাকার শত শত কৃষক।
কৃষি জমি থেকে উৎপাদিত ফসল সময়মত বাড়িতে আনতে না পেরে এবং অনেক কৃষক তাদের কৃষিজমিতে উৎপাদিত সবজি জমি থেকে বাজারজাত করতে না পেরে আর্থিকভাবে লাকসানে পড়তে হচ্ছে ।
শুকনা মৌসুমে গরু ও মহিষের গাড়ি দিয়ে কৃষকের ফসল জমি থেকে তুলে আনতে পারলেও বর্ষা মৌসুমে ফসল নিয়ে চরম বিপাকে রয়েছে কৃষকরা। বর্তমানে চলছে কৃষকের জমিতে পাট কাটার কাজ। রাস্তার হাট কাদার মধ্য দিয়ে শ্রমিক দিয়ে পাট কেটে মাথায় করে উৎপাদিত পাট বহন করে নিয়ে আসতে দ্বিগুণ অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে।
পাট চাষী লোকমান হোসেন জানান, তার এক বিঘা জমিতে শ্রমিক দিয়ে পাট কেটে বেঁধে বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে আসতে পাট বিক্রি করে শ্রমিকের মূল্য হয়নি। শ্রমিকের মূল্য পরিশোধ করতে তাকে ধান বিক্রি করতে হয়েছে।
কৃষক সুরমান আলী জানান, তার ১ বিঘা জমিতে বেগুনের আবাদ করেছেন। হাঁটু কাদায় জমিতে ঠিকমতো পরিচর্যা করতে না পেরে আবার ছেড়ে দিতে হয়েছে।
স্থানীয় কৃষক ময়নাল হোসেন জানায়, উক্ত রাস্তাটির বেহাল অবস্থা হওয়ায় কোন শ্রমিক উক্ত মাঠে কাজ করতে চাচ্ছে না।যার ফলে আবার পরিচর্যা করা খুব কঠিন বিষয় হয়ে পড়েছে।তাদের এ দুর্দশা দেখে রাস্তা পাকাকরন এর দাবি জানান তারা।
এছাড়াও মুক্ত রাস্তা দিয়ে হারদা মৎস্য বিলে যেতে হয়। যেটি মেহেরপুর জেলার একটি উল্লেখযোগ্য মৎস্য বিল। উক্ত বিলের মাছ জেলার মাছের চাহিদা পূরণ করেও অন্যান্য জেলায় বিক্রি করা হয়ে থাকে। বর্তমানে রাস্তায় গাড়ি চলাচল করতে না পারায় বিলে মাছ চাষীরা মাছ ধরতে পারছে না।
ধানখোলা ইউনিয়ন এর পাটাপুকুরিয়া, হারদা সহ অঞ্চলভিত্তিক বিভিন্ন কৃষক ওই মাঠে আবাদ করে থাকেন। উক্ত রাস্তা দিয়ে প্রায় ১ হাজার থেকে দেড় হাজার বিঘা জমির ফসল কৃষকদের ঘরে তুলতে এবং বাজারজাত করতে উক্ত মাটির রাস্তাটি একমাত্র মাধ্যম।
বর্তমানে আষাঢ়ে শুরু থেকেই রাস্তাটি হাট কাঁদয় পরিণত হয়েছে। যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি গণ ভুক্তভোগী মানুষদের আশ্বাস দিয়ে আসলেও রাস্তাটি আজও বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, বিভিন্ন সময় এলাকার ভুক্তভোগী জনসাধারণ বারবার জনপ্রতিনিধিসহ রাজনৈতিক ব্যক্তি ও সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে আবেদন করেও কাজ হয়নি। বর্তমানে উক্ত রাস্তাটি পাকা করণের দাবি নিয়ে ফেসবুকে বিভিন্নভাবে লেখালেখি হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাস্তাটির বেহাল দশা তুলে ধরে অনেক যুবক জেলার উন্নয়নকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। কৃষকদের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবের জন্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের কাছে গেলেও ইউনিয়ন পরিষদের স্বল্প বরাদ্দ দুই কিলোমিটার রাস্তা পাকাকরণ সম্ভব নয় বলেও জানান স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
ধানখোলা ইউপি চেয়ারম্যান আখেরুজ্জামান জানান, ইউনিয়ন পরিষদের যে পরিমাণ এর বরাদ্দ থাকে তা খুবই স্বল্প। যা দিয়ে দুই কিলোমিটার রাস্তা পাকাকরণ সম্ভব নয়। এলাকার মানুষ রাস্তাটা নিয়ে চরম বিপাকে রয়েছে একথা সত্য।
ভুক্তভোগীদের দুর্দশার কথা মাথায় রেখে তৎকালীন সংসদ সদস্য মকবুল হোসেনের কাছে বারবার বলা সত্ত্বেও রাস্তাটি করে দেয়নি। পরবর্তীতে বর্তমান সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকন এর কাছে আবেদন করা হয়েছে।
স্থানীয়দের কথা বিবেচনায় রেখে কসবা গ্রাম থেকে পাটা পুকুরিয়া ২ কিলোমিটার মাঠে যাওয়ার একমাত্র রাস্তাটি পাকাকরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বর্তমান সংসদ সদস্য বিষয়টি গুরুত্ব দিলেই এলাকার শত শত চাষীর দীর্ঘদিনের দুর্দশা লাঘব হবে।
মেহেরপুর- ২ গাংনী আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকন স্থানীয় কৃষকদের দুঃখ-দুর্দশা লাভ হবে এবার নজর দেবেন বলে জানিয়েছেন।