জেলা প্রশাসন থেকে দেয়া শর্তবলী ভঙ্গ ও ঘরবাড়ী রক্ষার্থে পুকুর খনন বন্ধ করার দাবীতে মানব বন্ধন করেছেন মেহেরপুরের গাংনীর গাড়াডোব কুঠি পাড়া গ্রামবাসি। মঙ্গলবার দুপুরে গাংনী হাসপাতাল বাজারে মেহেরপুর- কুষ্টিয়া সড়কে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনের মাধ্যমে পুকুর খনন কাজ বন্ধের প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেবেন এমন প্রত্যাশা করেন তারা।
স্থানীয়রা জানান, গাংনীর গাড়াডোব কুঠিপাড়ার কাজলা নদীর কোল ঘেঁসে পুকুর খনন এর অনুমোতি নেন রেবেকা খাতুন ও হাশেম আলী। পুকুর খননের আগ থেকেই জমির আশপাশের অনেক পরিবার অনুমোতি না দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে আসছেন। বিভিন্ন প্রতিকুলতা থাকলেও ৮ টি শর্ত দিয়ে পুকুর খননের অনুমোতি দেন জেলা প্রশাসক। শর্তে বলা হয়, পুকুরের মাটি বিক্রি করা যাবেনা।
অথচ ওই মাটি স্থানীয় দু’টি ইট ভাটাই বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানান স্থানীয়রা। কাজলা নদীর একেবারে কোল ঘেঁসে নিজের জমির মালিকানা দাবী করায় স্থানীয় জনমনে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। এলাকার প্রবীণদের ধারনা পুকুর খনন করা হচ্ছে ওই জমির অনেকাংশ কাজলা নদীর হতে পারে। সরকারিভাবে কাজলা নদী জরিপের দাবীওে করেন স্থানীয়রা। স্থানীয় ইসমাইলের স্ত্রী মর্জিনা খাতুন জানান, হাশেম আলীর জমির মাথায় তাদের বাড়ির জমি আছে এখানে পুকুর খনন করা হলে তাদের জমি ধ্বসে পড়াসহ শিশুরা ঝুকিতে থাকবে।
হেরেন শেখের ছেলে আমিরুল জানান, আমরা গরিব মানুষ আমাদের দুর্বল ঘরবাড়ি এখান মাটি নরম। পুকুর খনন করা হলে বাড়ি ঘর ধ্বসে পড়বে। পুকুর খনন কাজে বাধা দেয়ায় অভিযোগে হাশেম আলীর জামাতা হায়দার আলী তাদের মারধর করার অভিযোগ করেন ওখানকার বাসিন্দারা। স্থানীয় খেদের আলী জানান এ জমিটি একটি আবাদি জমি,তাছাড়া কাজলা নদীর সাথেই। এখানে পুকুর কনন করতে হলে সরকারি সার্ভিয়ার দ্বারা জমি জরিপ করা প্রয়োজন ছিল।
স্থানীয় এরশাদ আলী বলেন, আমাদের কথা বিবেচনা না করেই পুকুর খননের অনুমোতি দেয়া হয়েছে জেলা প্রশাসন থেকে। তবে জেলা প্রশাসন থেকে যে শর্ত দেয়া হয়েছে তা সম্পুর্ণ ভাবে অমান্য করা হচ্ছে এমন অভিযোগ করেন তিনি। স্থানীয় কয়েকজন কিশোর জানায়, আমারা কাজলা পাড়ে খেলা ধুলা করতে যেতাম এখানে পুকুর হলে আমাদের খেলাধুলা করার জায়গা হারিয়ে যাবে।
মাটিবহন কারি কাজে নিয়োজিত ট্রাক ড্রাইভার রাশেদুল ইসলাম বলেন, মাটি যাচ্ছে স্থানীয় একটি ইট ভাটায়। তবে কার ভাটায় যাচ্ছে তার নাম বলতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি। আর এক ড্রাইভার সাহাজান আলী জানান, স্থানীয় এরশাদ আলীর ভাটায় মাটি যাচ্ছে। পুকুর পাড়ে অনেক মাটি রাখার জায়গা না থাকায় মাটি অন্যত্র রাখা হচ্ছে বলে জানান স্কেবিটর চালক।
স্থানীয় রুবেল হোসেন বলেন, আমি জেলা প্রশাসক,উপজেলা প্রশাসন ও ভুমি অফিসে আবেদন করেছি। তবে এপর্যন্ত কোনো ব্যাবস্থা নেয়া হয়নি। ওদিকে জমির মালিক দেদারছে পুকুর খনন করেই চলেছেন। পুকুর খনন বন্ধ না হলে অনেক পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হবে বলে জানান তিনি। জনগনের পক্ষেই তিনি প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে আবেদন করেছেন। আবেদনে সাড়া না পেয়ে মানববন্ধন করেন তারা।
জমির মালিক হাশেম আলী জানান, ওই জমিতে আমাদের কোনো আবাদ করতে দিতোনা ওই এলাকার মানুষ। যে আবাদ করা হতো তা তছরুপ করে নস্ট করে দিতো তারা। তার পরেও নিচু জমি। এখানে পুকুর খনন ছাড়া বিকল্প কিছু করা সম্ভব হচ্ছিলা না তাই পুকুর খনন করা হচ্ছে। তবে পুকুর পাড় না ভাঙ্গে এর জন্য খনন শেষে প্যালাসাইড ব্যাবহার করা হবে। প্রয়োজন হলে প্রাচীর দেয়া হবে। তিনি আরো বলেন প্রশাসন থেকে দেয়া সব শর্ত মেনেই পুকুর খনন করা হচ্ছে।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমী খানম বলেন, কাজলা নদীর পাড় ঘেঁসে যেহেতু পুকুর খনন করা হচ্ছে সে বিষয়টি মাথায় রেখে সরেজমিনে যাব। তাছাড়া জমির মালিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে জেলা প্রশাসক স্যারের কাছে অনুমোদন নিয়েছেন শর্ত সাপেক্ষে। শর্তভঙ্গ করা হলে আইনানুগ ব্যাবস্থা নেয়া হবে।