ঘটনার এক দিন পর বিজিবির সদস্যদের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা প্রদানসহ নানা অভিযোগ এনে সহড়াতলা গ্রামের এজাহার নামীয় ১২ ও অজ্ঞাত ৫০/৬০ জনের নামে গাংনী থানায় মামলা হয়েছে।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সহড়াতলা বিওপি ক্যাম্পের কমান্ডার নায়েব সুবেদার মো: ইসরাইল শেখ বাদী হয়ে ধারা ২৪/৩৩২/৩৫৩/৩৪ দ.বি আইনে গত রবিবার রাতে এই মামলাটি দায়ের করেন। মামলার নং ২৩, তারিখ ২০/০৮/২০২৩ ইং।
এদিকে গ্রামবাসীর দাবি, বিজিবি কোনো উসকানি ছাড়াই গ্রামের আশিক নামের প্রবাস ফেরত একজন ভাল ছেলেকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা ও মারধর করে রক্তাক্ত করার প্রতিবাদ করায় সাধারণ মানুষের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে বিজিবি। এ মামলায় কিছু নাম উল্লেখ করলেও বাকি নামগুলো অজ্ঞাত থাকায় গোটা গ্রামের মানুষের মাঝে বর্তমানে মামলা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বেশির ভাগ মানুষ পুলিশি আতঙ্কে এখন পালাতে শুরু করেছেন।
এদিকে ৪৭ বর্ডারগার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি’র) হাত থেকে হ্যান্ডকাফসহ পালিয়ে যাওয়া আশিক (৩০)কে গ্রেফতরা করেছে গাংনী থানা পুলিশ।
গত রবিবার (২০ আগস্ট) দিবাগত রাতে গাংনী উপজেলার করমদী গ্রামের পাগলার ব্রীজের উপর থেকে তাকে হ্যান্ডকাপসহ গ্রেফতার করে পুলিশ।
গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মামলা হওয়ার পরপরই পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাকে হ্যান্ডকাপ পরিহিত অবস্থায় গ্রেফতার করা হয়েছে।
গত শনিবার দিবাগত রাত আনুমানিক সোয়া ৮ টার দিকে বিজিবির একটি টিম সহড়াতলা বাজারের ফকিরের মোড় এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় হাড়াভাঙ্গা গ্রামের সলেমান আলীর ছেলে সৌদী প্রবাস ফেরত আশিক(২৭) কে আটক করে ক্যাম্পে নিয়ে যেতে চাই। ক্যাম্পে যেতে না চাইলে তাকে বিজিবি সদস্যরা মারধর করে। এতে সে রক্তাক্ত হয়ে পড়েন আশিক। পরে স্থানীয়রা জানতে চান কেনো তাকে এভাবে মারধর করছেন। এক পর্যায়ে গ্রামবাসি আশিককে বিজিবির হাত থেকে ছিনিয়ে নেন। পরে সে হ্যান্ডকাপ নিয়ে পালিয়ে যান।
স্থানীয় বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিজিবির সদস্যরা একজন ছেলেকে বাজারের উপর বুট দিয়ে লাথি মেরে রক্তান্ত করে ফেলে রাখায় এলাকার মানুষ তাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওই যুবককে ছাড়িয়ে নেন। এনিয়ে বিজিবির সাথে বাক বিতন্ড হয়েছে। এনিয়ে গ্রামবাসির উপর মিথ্যা মামলা করা হয়েছে।
৫ নং ওয়ার্ড সহড়াতলা গ্রামের ইউপি সদস্য শরিফুল ইসলাম লাটু বলেন, বিজিবি’র মামলার কারনে গ্রামের অনেক লোক এখন পালিয়ে যাচ্ছে। আতংকের মধ্যে রয়েছেন অনেকেই। মামলায় ১২ জনের নাম উল্লেখ থাকলেও অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ৫০/৬০ জনকে। আমরা জনপ্রতিনিধি হিসেবে বিজিবির কাছে আহবান জানাবো এলাকায় শান্তি শৃংখলা বজায় রাখতে মামলা থেকে বিরত থাকতে।
কাজিপুর ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড হাড়াভাঙ্গা গ্রামের ইউপি সদস্য মহিবুল ইসলাম বলেন, বিজিবির মামলা সমন্ধে এখনো আমার কাছে তথ্য নেই। মামলার কথা এই প্রথম শুনলাম। বিষয়টি জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের লোকজন বসে বিষয়টি মিটালে সবাই ভাল থাকবে।
তেঁতুলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: নাজমুল হুদা বিশ^াস বলেন, এই ঘটনায় তাৎক্ষনিকভাবে ৫ নং সহড়াতলা ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শরিফুল ইসলাম লাটু, কাজিপুর ইউনিয়নের হাড়াভাঙ্গা গ্রামের ইউপি সদস্য মহিবুল ইসলামসহ গ্রামের কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তি ও সহড়াতলা বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা ওই রাতেই জরুরী বৈঠকে বসা হয়। সে সময় হ্যান্ডকাপ উদ্ধার ও আশিককে বিজিবির হাতে তুলে দেওয়ার অনুরোধ জানান বিজিবি। আশিক পলাতক থাকায় তাৎক্ষনিকভাবে কোনো সূরাহা হয়নি।
৪৭ বিজিবির সহড়াতলা বিওপি ক্যাম্পের বর্তমান কমান্ডার হাবিলদার রিয়াজ বলেন, আমি বদলি হয়ে এসেছি। আমার পূর্ব কমান্ডার নায়েব সুবেদার মো: ইসরাইল শেখ বদলি হয়ে চলে গেছেন। আমি নতুন এসেছি। আমি মামলা সমন্ধে কোনো কিছু বলতে পারবোনা।
মিরপুর ৪৭ বিজিবি’র সিও লে. কর্ণেল আরিফ বলেন, সহড়াতলা বিওপি ক্যাম্পে কর্মরত বিজিবি সদস্যদের সেক্টরে তুলে নেওয়া হয়েছে। আসলে সেদিনকার ওই ঘটনায় কি হয়েছিল তদন্তের জন্য। হ্যান্ডকাপ পরানো অবস্থায় আশিককে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি ওইদিনকার ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, বিজিবির টহল দলের কাছে তথ্য ছিল ওই যুবকের কাছে মাদক ছিল। এমন তথ্যের ভিত্তিতে ওই যুবককে ধরে সার্চ করা হয়। তাৎক্ষনিকভাবে তার কাছে কোনো মাদক পাওয়া যায়নি। তবে তার কাছ থেকে একটি রেজিস্ট্রেশন বিহীন মোটরসাইকেল ও অন্যান্য মাল পাওয়া যায়। ওই সময় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য ক্যাম্পে নেওয়ার সময় সে বাজারের উপর গিয়ে সিনক্রিয়েট করে। এসময় বাজারের কিছু লোক আমাদের ইউনিফ্রম পরা বিজিবি সদস্যদের দেখার পরেও আসামি ছিনিয়ে নেয়। আসলে এলাকার যারা চোরাচালানি বা এদের সাথে সম্পৃক্ত তাদের আমরা অনেকটাই চিনি। সেভাবেই মামলা দেওয়া হয়েছে।