মেহেরপরের গাংনীর উপজেলার হাড়াভাঙ্গা গ্রামে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে প্রবাসীর স্ত্রী ও স্থানীয় এক হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী ও ইলেক্ট্রিশিয়ান মিস্ত্রিকে হাত পা বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে এলাকাবাসীর বিরুদ্ধে । শনিবার দিবাগত রাত ১০টা থেকে রবিবার দুপুর ২ টা পর্যন্ত তাদের হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করা হয়েছে। শুধু নির্যাতনই না, এমনকি খেতে দেওয়া হয়নি এবং বাথরুমের কাজ সারতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী দুজন।
জানা গেছে, শনিবার দিবাগত রাত রাত সাড়ে ১০ টার দিকে সহড়াতলা গ্রামের ইন্তাজ মার্কেট এলাকার ইলেক্ট্রিশিয়ান মিস্ত্রী মিজানুর রহমান তার দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফিরছিলেন। এসময় মার্কেটের পাশে প্রবাসীর জনৈক স্ত্রীর ঘরের বিদ্যুৎ লাইন মেরামত করার জন্য ডাক দেন। মিজানুর রহমান বিদ্যুতের লাইনে কাজ শুরু করলে ওই নারীর ভাসুর নাসির উদ্দীন, আছেন উদ্দীনের ছেলে আব্দুল আলিম, ওহিল উদ্দীনের ছেলে ছমির উদ্দীন, আজমত আলী ফকিরের ছেলে শরিফুল ইসলাম হঠাৎ ওই প্রবাসীর বাড়ির ভিতরে অবৈধভাবে প্রবেশ করে তাদের মারধর শুরু করেন। তারা ওই বাড়ির প্রধান দরজায় তালা মেরে দিয়ে মিজানুর রহমান ও ওই নারীর হাত পিছ মোড়া দিয়ে বেঁধে গণপিটুনি দেয়।
প্রবাসীর স্ত্রী জানান, আমার বাড়িতে কেউ নেই। বাড়ির বিদ্যুৎ লাইনে সমস্যা ছিলো। আমি মিস্ত্রী মিজানুর ভাইকে ডাক দিই। সে আমার বাড়িতে এসে লাইন ঠিক করতেই বাড়ির ভিতরে অবৈধভাবে প্রবেশ করেন তারা। প্রথমে আমার ঘরের প্রধান গ্রীলের প্রবেশ মুখ তালা মেরে দিয়ে আমাকে ও এবং মিস্ত্রিকে মারধর শুরু করেন। এক পর্যায়ে আমাদের দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলে রেখ সেখানে মারপিট করে। আমাকে আব্দুল আলিম, ছমির উদ্দীন, নাসির উদ্দীন ও শরিফুল ইসলাম মারপিট করেন। রাত থেকে দফায় দফায় মারপিট করেন বলেও অভিযোগ করে ওই নারী। তিনি আরও অভিযোগ করেন, শুধু মারপিট করেই ক্ষান্ত হননি। আমাকে রাত থেকে বেলা ২ টা পর্যন্ত ঘরে আটকিয়ে রেখে টয়লেট পর্যন্ত করতে দেইনি।
একই অভিযোগ করেন ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, আমি ওই বাড়িতে প্রবেশ করতেই এসব লোকজন বাড়ির ভিতর প্রবেশ করে আমাকে ও ওিই বাড়ির গ্রৃহবধুকে মারপিট শুরু করেন। স্থানীয় কাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আলম হুসাইন বলেছেন, ঘটনার পর অনেকেই আমাকে ফোন দিয়ে ডেকে নেন। আমি ঘটনাটি দেখে চলে আসি। তাদের আইনের আশ্রয় নেওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে শুনেছি ছেলে মেয়েকে বাঁধা অবস্থা থেকে ছেড়ে দিয়েছেন তারা।
গাংনী থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, দুজনকে স্থানীয়রা আটকে রেখেছেন এমন সংবাদ পাওয়ার পর স্থানীয় কাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে বিষয়টি অবহিত করি। তাকে মিমাংসা করে দেওয়ার জন্যও বলা হয়েছিল। কিন্তু পরে শুনেছি তাদের ছেড়ে দিয়েছেন। তবে কেউ এখন পর্যন্ত লিখিত ভাবে আমাকে কেউ জানায়নি। কেউ বাদি হলে আমি বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেবো।
এদিকে, হাত-পা বেঁধে প্রবাসীর স্ত্রীকে রাতভর নির্যাতন ও ঘরে আটকিয়ে রাখা নিয়ে এলাকায় শুরু হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ কেউ তাদের অনৈতিকভাবে জড়িত থাকার প্রসঙ্গ তুললেও অনেকেই এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। এ নিয়ে এলাকায় শুরু হয়েছে নানা ধরনের জল্পনা। মিজানুর রহমান হাড়াভাঙ্গা গ্রামের মতিয়ার রহমানের ছেলে। ওই নারী সৌদী প্রবাসীর স্ত্রী।