পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশীদের মেয়াদকালে লোক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামান ও সাবেক ভিসির পালিতকন্যা কৃষিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নওরোজ জাহান লিপি এসব অনিয়ম ও অপকর্মের তদারকির দায়িত্বে ছিলেন বলে অভিযোগে জানা গেছে।
সাবেক ভিসির পিএস মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বর্তমান শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহীন হোসেন। তারা কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে এবং বিপুল অংকের টাকা ঘুষ নিয়ে বিভিন্ন পদে বিপুলসংখ্যক লোক নিয়োগ দিয়েছেন- এমন অভিযোগ এনে ওই অবৈধ নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সাতজনকে লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. জাহাঙ্গীর হোসাইন। ৩০ মে এ নোটিশ দেয়া হয়।
অন্যান্য নোটিশপ্রাপ্তরা হলেন- শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান, পবিপ্রবির উপাচার্য ও রেজিস্ট্রার।
লিগ্যাল নোটিশে বলা হয়- পবিপ্রবির প্রভাষক পদে চাকরি প্রার্থী ছিলেন কুষ্টিয়ার দেবাশীষ মণ্ডল। ওই পদে চাকরি দেওয়ার জন্য তার কাছে বিপুল অংকের ঘুষ চাওয়া হয়েছিল। অথচ বাছাই পরীক্ষার ফলাফলে তিনি সেরা ছিলেন। অধ্যাপক মনিরুজ্জামান ও রওশন জাহান লিপি এবং শাহীন হোসেন দেবাশীষের কাছে ১০ লাখ টাকা ঘুষ চেয়েছিলেন। দেবাশীষ যে কোনো মূল্যে ওই চাকরিটি পেতে আগ্রহী ছিলেন। পরে সাক্ষাতকার বোর্ড অনুষ্ঠানের আগমুহূর্তে তার কাছে ১৫ লাখ টাকা দাবি করা হয়।
বাড়তি ৫ লাখ টাকা জোগাড় করতে তাকে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। সর্বোপরি দেবাশীষ ১৫ লাখ টাকা সংগ্রহ করতে না পারায় ওই চক্রটি রফিক উদ্দিন নামে আরেকজন নতুন প্রার্থীর কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা নিয়ে ওই পদে চাকরি দেন।
মৌখিক পরীক্ষা শেষে দেবাশীষ জানতে পারেন, তিনি অকৃতকার্য হয়েছেন এবং তার পরিবর্তে রফিক উদ্দিন নামের একজনের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা নিয়ে ওই পদে চাকরি দেওয়া হয়েছে। পরে দেবাশীষ ২০১৮ সালের ১৪ মে কুষ্টিয়ায় নিজ বাড়িতে ফিরে গিয়ে আত্মহত্যা করেন।
অধ্যাপক মনিরুজ্জামান ও নওরোজ জাহান লিপি এবং শাহীন হোসেন দণ্ডবিধি ৩০৬ ধারায় অপরাধ করেছেন বলে নোটিশে দাবি করা হয়। ওই সময় দৈনিক যুগান্তরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে চেয়েছিল দেবাশীষ, ঘুষের টাকা প্রস্তুত ছিল তবু আত্মহত্যা শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল।
নোটিশে আরও বলা হয়- বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের দায়িত্ব ছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগের ক্ষেত্রে যথাযথ নিয়মকানুন অনুসরণ করা হয় কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা। কিন্তু তা তারা করেনি। এতে ওই নিয়োগটিতে ঘুষ বাণিজ্যসহ অনৈতিক কার্যকলাপ হয়েছে। ওই নিয়োগে দেবাশীষ মণ্ডলের সিজিপিএ ছিল ৩.৮২। অথচ ওই পদে নিয়োগপ্রাপ্ত রফিক উদ্দিনের সিজিপিএ ৩.৬৪; যা দেবাশীষের চেয়ে কম।
একইভাবে অধ্যাপক মনিরুজ্জামানের ছোটভাই এবং নওরোজ জাহান লিপির দেবর মো. কামরুজ্জামানকে এবং শাহীন হোসেনের বড়বোন নাজমুন নাহারকে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ নিয়োগ দুইটি বাতিলের দাবি করা হয় লিগ্যাল নোটিশে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান, পবিপ্রবির উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয় নোটিশে।
এছাড়াও এসব অবৈধ কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত অধ্যাপক মনিরুজ্জামান ও রওশন জাহান লিপি এবং শাহীন হোসেনের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা ১৫ জুন সকাল ১০টার মধ্যে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীকে জানানোর জন্য অনুরোধ জানানো হয়। অন্যথায় ন্যায়বিচার প্রাপ্তির জন্য উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করা হবে বলে লিগ্যাল নোটিশে বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রফেসর ড. মনিরুজ্জামান লিগ্যাল নোটিশ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চত করে বলেন,সেই সময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে আমি জড়িত ছিলাম না; লিগ্যাল নোটিশটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দেয়া হয়েছে।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত লিগ্যাল নোটিশ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বিষয়টি নিয়ে আইন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।