চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকা হবে পাখিদের অভয়ারণ্য। গাছের ডালে ডালে থাকবে পাখির বাসা। প্রকৃতি হবে ভারসাম্যপূর্ণ। সকালে পৌরবাসির ঘুম ভাঙবে পাখির কলকাকলীতে। দূর-দূরান্তের পর্যটকরাও আসবে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার পাখিদের অভয়ারণ্য দেখতে।
বেশ কিছুদিন থেকে এ স্বপ্ন দেখছিলেন চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপু। সে স্বপ্নের বাস্তবায়ন করতে সম্প্রতি উদ্যোগ নিয়েছেন মেয়র। চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার গাছে গাছে বাধা হচ্ছে মাটির পাতিল। ইতোমধ্যেই তাতে বাসা বাধতে শুরু করেছে পাখিরা।
চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার হাটকালুগঞ্জ, সিএন্ডবিপাড়া, ছাগল খামার এলাকাসহ পৌর এলাকার কয়েক স্থানে ঘুরে দেখা গেছে গাছের ডালে ডালে বাধা হয়েছে মাটির ছোট ছোট কলস। এতে গাছে গাছে পাখিদের আনাগোনা বেড়েছে। দেশীয় প্রজাতির পরিচিত পাখিদের পাশাপাশি দেখা মিলছে রঙ-বেরঙের নাম না জানা নানা প্রজাতির পাখির। বিশেষ করে শালিক, ঘুঘু ও বকের ঝাক দেখা যাচ্ছে প্রায় সময়ই।
স্থানীয়দের অভিমত, দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাখির অভয়ারণ্য তৈরি হচ্ছে। কমে আসছে শিকারীদের দৌরাত্ব। এতে এমনিতেই সব এলাকাতেই পাখির সংখ্যা বেড়েছে। এ অবস্থায় অনেকেই ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে উদ্যোগ নিচ্ছেন। অচিরেই এর সুফল পাবে মানুষ।
চুয়াডাঙ্গা শহরের মুক্তিপাড়ার বাসিন্দা মশিউর রহমান জানান, দীর্ঘদিন থেকেই নানা কারণে পাখিদের আবাস নষ্ট হচ্ছে। কৃষি জমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার হচ্ছে। এসব কারণেই মূলত পাখিদের সংখ্যা কমে আসছিলো।
ইতোমধ্যেই কয়েক যুবকের প্রচেষ্টায় ‘পাখির গ্রাম’ হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার বেলগাছি গ্রাম। এ গ্রামের বাসিন্দা পৌর কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলাম মণি জানান, চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকায় ইতোমধ্যে প্রায় তিন হাজার মাটির পাতিল গাছের ডালে বাধা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ১০ হাজার মাটির কলস বাধা হবে। তিনি বলেন, পৌর পরিষদের প্রশংসনীয় উদ্যোগ সাধারণ মানুষকেও উদ্বুদ্ধ করছে। অনেকেই নিজ উদ্যোগেও গাছের ডালে পাখিদের জন্য মাটির কলস বেধে দিচ্ছেন।
চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপু জানান, ‘পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পাখিদের ভূমিকা অনেক। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে মানুষের আবাস ও কলকারখানা করতে গিয়ে একের পর এক পাখিদের আবাস ধ্বংস হয়ে যাচ্ছিলো। এতে অনেক পাখি বিলুপ্ত হওয়ার মতো অবস্থা হয়েছে। এ অবস্থায় প্রকৃতির ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে মানুষ নানাভাবে কাজ করছে। আমি পাখিদের আবাস গড়ার মাধ্যমে প্রাকৃতিক ভারসাম্য কিছুটা হলেও রক্ষা করতে চাই।’
মেয়র জিপু বলেন, ‘প্রাতিষ্ঠানিক দায়বদ্ধতা নয়, সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমার প্রত্যাশা পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে পৌরবাসীর ঘুম ভাঙবে। চুয়াডাঙ্গা শহর অচিরেই পাখির শহর হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে।’
স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কেয়ার ফর আনক্লাইমড্ বিস্ট- কাব’র সভাপতি বখতিয়ার হামিদ বলেন, ‘আমরা ব্যক্তি উদ্যোগে পাখিদের নিয়ে কাজ করে আসছি। এ অবস্থায় কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তি, সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান এ ধরনের উদ্যোগ নিলে তা অনেকাংশে ফলপ্রসূ হয়।’
তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমরা দীর্ঘদিন পাখিদের অভয়াশ্রম গড়ার কাজ করছি। সেহেতু আমরা চুয়াডাঙ্গা পৌর পরিষদের উদ্যোগের সাফল্য কামনা করি।’
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. শামীমুজ্জামান বলেন, চুয়াডাঙ্গা পৌর পরিষদের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। এর ফলে আমাদের জীববৈচিত্র ও প্রাকৃতিক ভারসাম্যের সুরক্ষা হবে। পাখিরা তাদের নিরাপদ আবাস পাবে। বর্তমান করোনাকালে পশু-পাখিদের খাদ্য সংকট রয়েছে। সেদিকেও আমাদের নজর দেয়া দরকার।