মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামকে সেবা না দিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বাইরের একটা ট্রলিতে থাকতে হয়েছে যত্রতত্র ভাবে। সকাল সাড়ে ১০ থেকে বেলা ৩ টা পর্যন্ত বাইরের একটা ট্রলিতে অবহেলীত ভাবে থাকার পর বেশকিছু সাংবাদিকের চাপের মুখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওয়ার্ডে থাকার ব্যবস্থা করেন।
এমনই ঘটনা ঘটেছে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামকে সঠিক সময় সেবা না দিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বাইরে রেখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বীরের জাতীকে করেছে অপমান। সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সরকারি সবধরনের মিটিংয়ে যান এবং সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বেড ও কেবিনসহ সবধরনের চিকিৎসা ব্যবস্থা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তারা সেটা করেননি।
তারা মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামকে কেবিনতো দুরের কথা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নিদ্রিষ্ট আসনটাও দেননি।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের বেগমপুর চীলমারি পাড়ার মৃত আশরাফ আলীর ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলাদেশ সেনাবাহীনির নুরুল ইসলাম। বেশ কিছুদিন ধরে তিনি অসুস্থতাজনীত কারনে ভুগছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি বেশি অসুস্থ হলে সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে তাকে নেয়া হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। অসুস্থতাজনিত কারনে তিনি হাটাচলা পর্যন্ত করতে পারেননা। এ সময় হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে নিলে ডা. আবুল হোসেন তাকে দেখেন এবং হাসপাতালে ভর্তি রাখার পরামর্শ দেন।
এ সময় নুরুল ইসলামের পরিবারের পক্ষ থেকে একটা কেবিনের জন্য বলেন মহিলা ওয়ার্ডে কর্তব্যরত সিনিয়ার স্টাফ নার্সদেরকে। যেহেতু ২ নম্বার কেবিন ওই সময় খালি হয়ে যায়। তারা কেবিন দিতে চাইলেও পরবর্তীতে তারা ওই কেবিন অন্য রোগীকে দিয়ে দেন। শুধু সেটা করেই তারা থেমে থাকেনি। তারা মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামকে বেলা ৩ টা পর্যন্ত বাইরে রেখে দেন।
এ ঘটনা ফেসবুকসহ বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যকে প্রচার হলে সেখানে উপস্থিত হয় স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা। তারা নুরুল ইসলাম ও তার পরিবারের সাথে কথা বলে বিষয়টি জানতে পারলে চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জনের সাথে কলা বলার জন্য বলেন।
মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের পরিবারের পক্ষ থেকে সিভিল সার্জন ডা. এএসএম মারুফ হাসানের সাথে তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আসলে মুক্তিযোদ্ধারা তো আর কেবিনের ভাড়া দিতে পারেন না। সে কারনে বাইরের রোগীকে কেবিন দেয়া হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নিদ্রিষ্ট আসনটি খালি না থাকলেও সিভিল সার্জন ডা. এএসএম মারুফ হাসান তার অফিসে থাকলেও একবারের জন্য হলেও মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের খোঁজ নিতে সেখানে যাননি বা তাৎক্ষনিক কোন ব্যবস্থা নেননি। স্থানীয় সাংবাদিকদের চাপের মুখে তিনি একটি বেডের ব্যবস্থা করে দেন।
গত ২০১৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর চুয়াডাঙ্গার শিল্পকলা একাডেমির মঞ্চে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধণা অনুষ্ঠানে চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন ডা. এএসএম মারুফ হাসান তার এক বক্তব্যে বলেছিলেন, সদর হাসপাতালে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য থাকবে সব ধরনের সুযোগ সুবিধা। কোন মুক্তিযোদ্ধা তার নিদ্রিষ্ট আসনটি না পেলে বা ওই আসনে অন্য কোন মুক্তিযোদ্ধা থাকলে তাকে কোন সমস্যায় পড়তে হবেনা।
হাসপাতালের কোন কেবিন খালি থাকলে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের সনদপত্রের ফটোকপি দেখালে তাকে ওই কেবিন দেয়া হবে। সিভিল সার্জনের সেদিনের সেই বক্তব্য শুধুই কি ছিলো একটা সান্তনা বক্তব্য নাকি মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের কাছ থেকে বাহবা পাওয়ার জন্য সেটা এখন প্রশ্নবিদ্ধ।
মেপ্র/আরপি