চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন অফিসের স্টোর কিপার হাফিজ বিন ফয়সাল ওরফে পিয়াসের বিরুদ্ধে সরকারী ঔষধ ও চিকিৎসা সামগ্রী খোলা বাজারে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। ইতোমধ্যে পিয়াসের বিরুদ্ধে ওঠা গুরুতর সব অভিযোগ আমলে নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। শুরু হয়েছে অনুসন্ধান। অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে সম্প্রতি দুদকের সমন্বিত কুষ্টিয়া কার্যালয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালসহ তিনটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্টোর কিপারদের বক্তব্য নেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন অফিসে ২০১০ সাল থেকে স্টোর কিপার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন হাফিজ বিন ফয়সাল ওরফে পিয়াস। তিনি যোগদানের পর থেকে কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে বরাদ্দকৃত ঔষধ ও চিকিৎসা সামগ্রী সদর হাসপাতালসহ তিনটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরবরাহ করে আসছিলেন। দীর্ঘ বছর ধরে অভিযোগ ওঠে তিনি ঔষধ ও চিকিৎসা সামগ্রী সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরবরাহ না করে খোলা বাজারে বিক্রি করে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এই অভিযোগের পর দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্তের প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
স্টোর কিপার পিয়াসের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের প্রেক্ষিতে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্টোর কিপারদের বক্তব্য নেয়ার জন্য অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা দিন নির্ধারন করে নোটিশ দেন। সম্প্রতি সদর হাসপাতালের স্টোর কিপার হাদিউজ্জামান, জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্টোর কিপার শামসুল হক, দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্টোর কিপার হুমায়ুন কবীর ও আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্টোর কিপার জহুরুল হক কুষ্টিয়ার দুদক সমন্বিত কার্যালয়ে তাদের স্ব স্ব বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন।
সূত্র জানায়, সিভিল সার্জন অফিসের স্টোর কিপার পিয়াসের কার্যালয় এতটা বছর স্থানীয় উশৃংখল যুবকদের আড্ডা ও নেশাখানা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। দিনের বেলাতেও চলে আসছে ফেন্সিডিলের আসর। যাকে তাকে অপমান করাই হচ্ছে পিয়াসের প্রথম কাজ। সিভিল সার্জন অফিসের কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পান না। এমনকি সিভিল সার্জনও না। স্টোর কিপার পিয়াসের সব অপকর্ম চোখে দেখেও ভয়ে সবাই না দেখার ভান করে চলেন। সূত্র জানায়, পিয়াস এ পর্যন্ত ৮ থেকে ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তে সব বেরিয়ে আসবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো।
এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের স্টোর কিপার হাফিজ বিন ফয়সাল ওরফে পিয়াস জানান, তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা।
তিনি বলেন, আমার অফিসের কেউ প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে অথবা বাইরের কেউ হয়রানি করতে দুদকের কাছে এসব অভিযোগ করেছে।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. এএসএম মারুফ হাসান জানান, এক বছরের বেশী সময় ধরে দুদক মামলাটি অনুসন্ধান করছে। অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা দুদকের উপসহকারী পরিচালক মো. নাসরুল্লাহ হোসাইন গত এক বছরের ঔষধ ও চিকিৎসা উপকরণের প্রাপ্তি ও ক্রয়, সরবরাহ, বিতরণ বিষয়ক প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সরেজমিন দেখেছেন এবং বেশকিছু ফটোকপি করে নিয়েছেন।
তিনি বলেন, ঘটনাকাল ২০১৭ সাল। সে সময় সিভিল সার্জনের দায়িত্বে ছিলেন ডা. রওশন আরা বেগম। তিনি এ ব্যাপারে ভাল বলতে পারবেন।
তবে অবসরপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. রওশন আরা বেগমের মোবাইলে একাধিকবার রিং করার পরও তিনি রিসিভ করেননি। ফলে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।