চুয়াডাঙ্গার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রদীপন মাধ্যমিক বিদ্যাপীঠের অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দীন রাজনের বিরুদ্ধে স্ত্রীকে নির্যাতন, যৌতুক দাবী ও হত্যা চেষ্টার অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা হয়েছে।
আজ শনিবার (৩ আগস্ট) দুপুরে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ সেকেন্দার আলী মামলা রুজুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কুন্দিপুর গ্রামের মরহুম দলিল বিশ্বাসের ছেলে শাহাবুদ্দীন রাজন। তিনি প্রায় এক যুগ আগে একই গ্রামের জেসমিন আরার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক করে বিয়ে করেন। তাদের শাবাব (৯), সাদমান (৭) ও শায়ন (২) নামে তিনটি ছেলে সন্তান রয়েছে। রাজন বিয়ের পর থেকেই স্ত্রীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের পাশাপাশি স্ত্রীর কাছে যৌতুক দাবী করে আসছেন। তিনি জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার একটি মাদ্রাসায় চাকরীর কথা বলে শ্বশুরের কাছ থেকে ৮ লাখ টাকা নিয়ে আর ফিরিয়ে দেননি। এরপর আবারও তিনি টাকার জন্য চাপ সৃষ্টি করে তার স্ত্রীকে শারীরিক মানসিক নির্যাতন শুরু করেন।
মামলায় বাদী আরও উল্লেখ করেন,তার স্বামীকে মেয়েদের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের বিষয়টি নিষেধ করলেও তিনি না শুনে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। গত ২৪ জুলাই বিকেলে চুয়াডাঙ্গার পৌর এলাকার শান্তিপাড়া স্কুলমোড়ের বাবুর ভাড়া বাসায় থাকাকালীন স্বামী ও শ্বাশুড়ী মিলে টাকার দাবীতে তাকে নির্যাতন শুরু করেন। এক পর্যায়ে হত্যার উদ্দেশ্যে তার গলা চেপে ধরেন। পরে মাটিতে ফেলে মারপিট করে গুরুতর আহত করলে স্থানীয়দের সহায়তায় সদর হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে তিনি বাসায় ফিরে আসেন। ২৫ জুলাই সকালে ঘটনাটি তিনি তার পরিবারকে জানালে তার স্বামী আবারও তাকে মারপিটের চেষ্টা করলে তিনি ঘরের দরজা বন্ধ করে দেন। প্রাণ বাঁচাতে ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিলে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তাকে উদ্ধার করে।
অধ্যক্ষের স্ত্রী মামলার বাদী জেসমিন আরা বলেন, তিন শিশু সন্তান নিয়ে বিচারের আশায় পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করেছেন। নির্যাতন, হত্যা চেষ্টা ও যৌতুক দাবীর ঘটনায় সদর থানায় স্বামী ও শ্বাশুড়ীর নামে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছি। অভিযুক্তকে পুলিশ গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনুক তিনি সেটাই চান। তিনি আরো জানান, তার স্বামী গত ৭ মাস বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া, গোসল করেন না। মাঝে মাঝে বাইরে রাত যাপন করেন। সন্তানসহ তাকে ভাড়া বাসায় রেখে নিজের ইচ্ছা মত চলাফেরা করেন। প্রদীপন মাধ্যমিক বিদ্যাপীঠে চাকরী পাওয়ার পর নারীদের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ সেকেন্দার আলী জানান, প্রদীপন মাধ্যমিক বিদ্যাপীঠের অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দীনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১(গ)/৩০ তৎসহ পেনাল কোডের ১১৪/৫০৬ ধারায় একটি মামলা রুজু হয়েছে। সদর থানার মামলা নং-০২, তারিখ ০১/০৮/২০২৪ ইং। অভিযুক্তকে গ্রেফতারে পুলিশী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে তিনি গাঁঢাকা আছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অভিভাবক বলেছেন, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তিনি শহরের একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলেও দায়িত্ব পালন করেন। তারা জানান, অধ্যক্ষ নিজের খেয়াল খুশি মত বিদ্যালয় পরিচালনা করার পাশাপাশি বিদ্যালয় ও পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে কয়েকজন নারী অভিভাবকের সঙ্গে খোসগল্পে মেতে থাকেন। এতে ঐতিহ্যবাহী প্রদীপন মাধ্যমিক বিদ্যাপীঠের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। এমন নারীলিপ্সু অধ্যক্ষ এ স্কুলটির সুনাম প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তারা প্রত্যাশা করেন বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক ড.কিসিঞ্জার চাকমা অভিযুক্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
চুয়াডাঙ্গা প্রদীপন মাধ্যমিক বিদ্যাপীঠের অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দীনের কাছে মামলা ও নানা অভিযোগের বিষয়ে জানতে তার ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন নাম্বারে কল দেওয়া হয়। ০১৭৩৭-১৩৫০৫৪ নম্বর মোবাইল ফোনে একাধিক বার কল দেওয়া হলে বন্ধ পাওয়া যায়। ০১৬১৭-১৪৫১২০ নম্বর মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলে তিনি রিসিভ করেন। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কথা বললে তিনি কলটি কেটে দিয়ে ফোন বন্ধ করে দেন।
চুয়াডাঙ্গা প্রদীপন মাধ্যমিক বিদ্যাপীঠের সভাপতি জেলা প্রশাসক ড.কিসিঞ্জার চাকমা বলেন, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়ে থাকলে প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে। মামলা দায়েরের কাগজপত্র আমরা চাইবো। প্রতিষ্ঠানের বিধান মোতাবেক যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার, সেই আলোকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্য প্রতিষ্ঠানে চাকরীর বিষয়টি তার জানা নেই বলে তিনি জানান। তবে খোঁজ নেয়া হবে বলে তিনি নিশ্চিত করেন। তিনি আরো বরেন, ওনার বিষয়ে বেশ কিছুদিন ধরে বিভিন্ন কর্ণার থেকে আমরা খবর পাচ্ছিলাম। আমরাও তথ্য সংগ্রহ করার জন্য কাজ করছি। মূল প্রতিষ্ঠান ছাড়াও অন্য প্রতিষ্ঠানে কাজ করলে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।