চুয়াডাঙ্গা জেলায় মাঝপথেই কৃষকরা বিক্রি করে দিচ্ছেন কাঁচা গাছসহ ভুট্টা।এ গাছসহ ভুট্টা বিক্রির ফলে ধংস হয়ে যেতে পারে পোল্ট্রি শিল্প। বর্তমানে মুরগীর ডিম, মুরগীর মাংসের দাম দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে পোল্ট্রি ফিডের খাবার। তাই এভাবে কাঁচা গাছসহ ভুট্টা কেটে ফেললে ধংস হয়ে যেতে পারে পোল্ট্রি শিল্পখাত। তাই এ ভাবে চলতে থাকলে পোল্ট্রি শিল্প পড়বে হুমকির মুখে।
খামারিদের নিয়ে ভুট্টার দাম নিয়ে কিছু কথা বলতেই হয়। কেননা এই উপকরনের দাম বেড়ে গেলে দুধ, ডিম, মাছ ও মাংশ সকল জিনিসের দাম বেড়ে যায়। কেননা এটিই খাদ্যের প্রধান ও অন্যতম ফিড ইনগ্রেডিয়েন্ট। বর্তমান ২০২০ সালে করোনা পরবর্তি সময়ে ভুট্টা ৭শ টাকা থেকে ৮শ টাকা মন হিসাবে বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে ১৩শ থেকে ১৫শ টাকা করে মন প্রতি দাম যাচ্ছে। এভাবে কাঁচা ভুট্টা কেটে ফেললে সংকটে পড়বে বলে মনে করছে পোল্ট্রি খামারি ও শিল্প।
জেলায় মোট আবাদি জমির পরিমান ৯৭ হাজার ৫৮২ হেক্টর। দেশে ভুট্টার চাহিদা এবং দাম থাকায় চলতি বছরে সর্বচ্চ ৪৯ হাজার ৪২০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। এসব ভুট্টা রােপন করা হয়েছে নভেম্বর মাসের দিকে। এখন ভুট্টার মােচা বের হয়ে সামান্য লালচে আকার ধারণ করছে। ভুট্টা কাটতে এখনও তিন মাস বাকি। এরই মধ্য ঢাকা মেঘডুবি এগ্রো ফার্ম নামের একটি প্রতিষ্ঠান চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন অঞ্চলের গ্রামে কাঁচা গাছসহ ভুট্টা কিনছেন। চাষিরা এক বিঘা ভুট্টার জমিতে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকার মধ্য বিক্রি করছেন। কোম্পানীর লোকজন ভুট্টা চাষিদের জমি থেকে কেটে এনে মেশিন দিয়ে কেটে সাইলেজ বিশেষ ব্যবস্থায় দীর্ঘ মেয়াদি সংরক্ষণ) করছেন।
ভুট্টাসহ গাছ বিক্রেতা কৃষক, তৌহিদ, মুলতাব, কাদের, জমির, তোফাজ্জেল, সুমনসহ অনেকই জানালেন, এখনও ভুট্টা উঠতে তিন মাস বাকি। এরই মধ্যে কাঁচা ভুট্টাসহ গাছ বিক্রি করতে পারছি বলে বিক্রি করে দিয়েছি। কারণ যে ভুট্টা বিক্রি করছি তা পরিচর্চা করে ঘরে তুলতে এখনও ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ আছে। তার চেয়ে মাঝপথে বিক্রি করায় ঝামেলা এড়ানো এবং নতুন ফসল চাষ করার সুযােগ পাচ্ছি। তাই বিক্রি করে দিয়েছি।
গত শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে দর্শনা পৌর এলাকার শ্যামপুর গ্রামে এবং বিকালে বেগমপুর ইউনিয়নের দোস্তবাজার পাড়ায় গিয়ে কুষ্টিয়ার হালসা থেকে আসা কোম্পানীর প্রতিনিধি মোস্তফার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, মেঘডুবি এগ্রো ফার্ম নামে আমাদের একটি গরুর খামার আছ। আমাদের গাছসহ কেনা ভুট্টা প্রক্রিয়াজাত করে তারপর গরুকে খাওয়ানো হয় এবং অবশিষ্টগুলো বাজারে বিক্রি করা হয়।
ভুট্টা চাষ সম্পর্কে তিনি বলেন, নভেম্বরের শেষদিকে এগুলো লাগানো হয়েছে। গাছে ভুট্টা ধরতে প্রায় চার মাসের মতো সময় লাগে। ভুট্টা ধরার পর পুরো গাছ আমরা কেটে ফেলি। তারপর মেশিনের সাহায্যে ছোট ছোট পিস করে প্রয়োজনীয় উপকরণ দিয়ে প্রায় একমাস ড্রাম বা পলিথিনের ভেতর ফেলে রাখি। পরে খুলে গরুর খাওয়ানো হয়। গরুর খামারিরা অনেক সময় ফিড খাওয়ান। এই ফিডের দাম বেশি। সে সব ছোট খামারিদের খরচ কমানোর জন্য এটি আমাদের মূল টার্গেট। আমরা গরুর খাদ্য হিসেবে এই উন্নত গোখাদ্য ভুট্টা সাইলেজ বাজারজাতও করছি। ভুট্টা গরুর সবচেয়ে প্রিয় খাবার। ১ কেজি ভুট্টা সাইলজের দাম ১২ টাকা এবং ৫০ কেজি বস্তার দাম ৬শ টাকা। ব্যয় ও উৎপাদনের আশানুরূপ লাভ না থাকায় শেষ পর্যন্ত অনেক খামার বন্ধ হয়ে যায়। তাই আমরা কমমূল্যে উন্নত গোখাদ্য সরবরাহ করছি।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিভাস চদ্র সাহ বলেন, এবছর চুয়াডাঙ্গা জেলাতে সর্বচ্চ ভুট্টার চাষ হয়েছে। তবে গাছসহ ভুট্টা বিক্রি হচ্ছে কিনা সেটা আমার জানা নেই। চাষিরা লাভবান হলে ভালাে কথা। তার পরও খোঁজ নিয়ে দেখবো।
জেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ডাঃ মিহির কান্তি বিশ্বাস বলেন, এটা গরুর জন্য স্বাস্যসন্মত এবং উৎপাদন বৃদ্ধি জাত খাবার। জেলাতে এখাবার উৎপাদন হয় কিনা আমার জানানেই। তবে এ সাইলেজ গরুর জন্য খুবই উপকারী।
এ বিষয়ে দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন আমরা শুনেছি গো খাদ্য হিসাবে সাইলেজ তৈরি হচ্ছে।তবে এ সাইলেজ তৈরি হলে লাভবান হবে কৃষক। লাভবান হবে গরুর খামিরিরা।