প্রকৃতিতে বইছে শীতের আগমনী বার্তা। শীত আর পিঠা যেন সমার্থক। আর শীতের পিঠায় অন্যতম অনুষঙ্গ খেজুরের গুড়। এ গুড় পাওয়া যায় খেজুরের রস থেকে। শীতের আগমনী বার্তায় খেজুর গাছের রস সংগ্রহের প্রস্তুতি চলছে চুয়াডাঙ্গার গাছিদের মাঝে। গাছিরা খেজুর গাছ কাটা-ঝোড়ায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। শীত কিছুটা বাড়লেই শুরু হবে রস সংগ্রহ। তৈরি হবে খেজুরের গুড়।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি বিভাগ জানায়, চুয়াডাঙ্গার বেশিরভাগ গ্রামের পথ দিয়ে হেটে গেলে চোখে পড়ে খেজুর গাছ। জমির আঁইলে আঁইলে খেজুর গাছ লাগিয়েছেন গ্রামের কৃষকরা। বিশেষ করে জেলা সদরের গাড়াবাড়িয়া, বেলগাছি, সরোজগঞ্জ, মহাম্মদজমা, বোয়ালিয়া এবং দামুড়হুদার জয়রামপুর, দোস্ত প্রভৃতি গ্রামে খেজুরের গাছ বেশি চোখে পড়ে। শীত মৌসুমে এসব গ্রামে খেজুরের রস বিক্রি ও গুড় তৈরির কাজ চলে পুরো দমে। এখন চলছে তারই প্রস্তুতি।
সদর উপজেলার দ্বীননাথপুর গ্রামের গাছি ইজাহার আলী জানান, শীতের শুরুতেই খেজুর গাছ ঝুড়ে-কেটে রস সংগ্রহের জন্য প্রস্তুত করা হয়। এরপর দেয়া হয় চাচ। পরে নলি মারার মাধ্যমে শুরু হয় রস সংগ্রহ। খেজুরের সুস্বাদু রস জ¦ালিয়ে তৈরি হয় খেজুরের গুড় ও পাটালি।
বেলগাছি গ্রামের কৃষক শরিফুর রহমান সেন্টু জানান, সাধারণত চাষীরা অন্য চাষের পাশাপাশি খেজুর গাছ লালন-পালন করে। একজন চাষীর ২০০ খেজুর গাছ থাকলে মৌসুমে তাদের দৈনিক আয় হয় তিন থেকে চার হাজার টাকা। বছরের নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলে খেজুর গুড়ের মৌসুম। এসময়ে তারা মোট অংকের বাড়তি আয় করে থাকেন।
বোয়ালিয়া গ্রামের শুকুর আলীর খেজুর গাছ আছে ১২০টি। একই গ্রামের রমজান আলীর গাছ রয়েছে ৮০টি। রস সংগ্রহের জন্য তারা এখন খেজুর গাছের আগা ঝোড়া, চাচ দেয়া ও নলি মারায় ব্যস্ত। তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কারো যদি ১০/১২টি খেজুর গাছ থাকে, তা থেকে প্রতিদিন এক ভাড় গুড় পাওয়া যাবে।
খেজুর গুড়ের মৌসুমে বাড়তি কাজ জোটে গাছ প্রস্তুত করার কাজে নিয়োজিতদের। তাদেরই একজন মাখালডাঙ্গা গ্রামের মিরাজুল ইসলাম। তিনি জানান, মৌসুম এলে তিনি দিনে অন্তত ৫০/৬০টা গাছ কাটা-ঝোড়া করে থাকেন। এতে তার দৈনিক আয় হয় প্রায় দেড় হাজার টাকা।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, খেজুর গুড় তৈরির জন্য চুয়াডাঙ্গায় জেলায় প্রায় তিন লাখ খেজুর গাছ রয়েছে। প্রতি বছর জেলার গাছিরা আড়াই থেকে তিন হাজার মেট্রিকটন খেজুর গুড় উৎপাদন করে থাকে।
চুয়াডাঙ্গার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক সুফি মো. রফিকুজ্জামান জানায়, পিঠা-পুলির অন্যতম উপকরণ খেজুরের গুড়। এ গুড় তৈরি হয় খেজুরের রস থেকে। তাই শীতের শুরুতেই গাছিরা খেজুর গাছ প্রস্তুত করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তাছাড়া চুয়াডাঙ্গা জেলার খেজুরের গুড়ের সুনাম দেশজোড়া। শীতের মৌসুমে খেজুরের গুড় ও পাটালি বিক্রি করে বাড়তি আয় করেন জেলার চাষীরা।