চুয়াডাঙ্গায় দিনে দিনে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। মৃত্যুর হারও বেড়ে গেছে। জ্বর, সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত বেশিরভাগই পরীক্ষা করার উদ্যোগ নিচ্ছে না। বরং তারা বাড়িতে চিকিৎসাধীন থাকার পাশাপাশি প্রকাশ্যে বাইরে ঘুরছেন। এ কারণেই আরো বেশি সংক্রমণ ছড়িয়ে পরার ভয় রয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন।
চুয়াডাঙ্গা জেলায় শুধু আগস্ট মাসেই করোনা পজিটিভ হয়ে মারা গেছেন ২২ জন এবং আক্রান্ত হয়েছেন ৬৫৭ জন।
চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার রাত পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা জেলায় করোনা আক্রান্তর সংখ্যা এক হাজার ২৭৮ জন। এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৩২ জন।
চুয়াডাঙ্গা জেলায় করোনা ভাইরাস নমুনা পরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই। শুরু থেকেই পরীক্ষা করা হয় ঢাকা, যশোর, খুলনা ও কুষ্টিয়ার পিসিআর ল্যাবে। বর্তমানে বেশিরভাগ পরীক্ষা করা হচ্ছে কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবে। জেলায় পরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় কখনো কখনো অনেকের প্রতিবেদন এসেছে ৭-৮ দিন পর। কয়েকদিন আগে কৃষ্টিয়া পিসিআর ল্যাবে ত্রুটি দেখা দেওয়ায় চুয়াডাঙ্গার নমুনা পাঠাতে হয় ঢাকায়।
তখনও প্রতিবেদন আসতে দেরি হয়। এসব কারণেই অনেকে নমুনা পরীক্ষার ব্যাপারে অনাগ্রহী। তবে, করোনা আক্রান্তদের সামাজিকভাবে ভাল চোখে না দেখা, বাড়ি লকডাউন প্রভৃতি কারণে উপসর্গ দেখা দেওয়ার পরও অনেকে পরীক্ষার ব্যাপারে আগ্রহী নন। যারা পরীক্ষা করাচ্ছেন না তারা প্রকাশ্যে নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ পাচ্ছেন। যা খুবই ভয়ের কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। এসব কারণেই বাড়ছে সংক্রমণ।
চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগের হিসাব অনুযায়ী চুয়াডাঙ্গা জেলায় গত ১৬ মার্চ করোনার প্রথম রোগি সনাক্ত হয়। ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দেড় মাসে আক্রান্তর সংখ্যা ছিল মাত্র আট জন। এর একমাস পরে ৩১ মে এসে আক্রান্ত সংখ্যা বেড়ে হয় ৯০ জনে। ৩০ জুনে এসে তা ২২২ জনে পৌঁছে। এর একমাস পর ৩১ জুলাই এসে পজিটিভ সংখ্যা হয় ৬১৮ জন। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় আগস্ট মাসে। শুধু আগস্ট মাসেই আক্রান্ত হয় ৬৫৪ জন। হিসাব অনুযায়ী শুধু আগস্ট মাসেই চুয়াডাঙ্গা জেলায় করোনা পজিটিভ হয়ে মারা গেছেন ২২ জন। তার আগের সাড়ে চার মাসে মারা গেছেন ১০ জন।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে করোনামুক্ত হওয়া মশিউর রহমান বলেন, উপসর্গ দেখা দিলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াটাই ঠিক সিদ্ধান্ত। অনেকে সামান্য জ্বর কাশি মনে করে তোয়াক্কা করছেন না। তারা হঠাৎ বিপদে পড়ছেন। এভাবে অবহেলা করার কারণে মারাও গেছেন কেউ কেউ। শেষসময়ে হাসপাতালে এসে ভর্র্তি হওয়ার দুএকদিনের মধ্যে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে এমন অনেকেই আছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চুয়াডাঙ্গা বড়বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, বাজারে প্রচণ্ড ভীড়। মানুষ ভীড় করে কেনাকাটা করছেন। এ কারণেই করোনা ছড়াচ্ছে বেশি। পরীক্ষার পর সরকারিভাবে যা ঘোষণা করা হচ্ছে তার চেয়ে অনেক বেশি আক্রান্ত চুয়াডাঙ্গায়। আক্রান্ত হওয়ার পরও তারা থাকছেন হিসেবের বাইরে।
করোনা আক্রান্ত রোগির সংখ্যা বৃদ্ধি প্রসঙ্গে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. শামীম কবির বলেন, এ মাসে করোনা পজিটিভের সংখ্যা বেড়েছে। নিরাপদে থাকতে হলে স্বাস্থ্য বিধি মানতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। মাস্ক পড়তে হবে, সাবান দিয়ে ঘন ঘন হাত ধুতে হবে এবং স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে। এগুলো মেনে সতর্ক থাকলে সংক্রমণ কমবে। কারো কোনো উপসর্গ দেখা দিলে ঘরে থাকতে হবে। হাসপাতালে ভর্তি হয়ে কিছুদিন চিকিৎসা নিয়েছেন এমন প্রায় সব রোগিই সুস্থ্য হয়েছেন।