দুস্থ গরিব ও অসহায় শিক্ষার্থীদেরকে বিনা পয়সায় কোচিং করিয়ে শিক্ষা ক্ষেত্রে গুরুত্বপুর্ণ অবদান রাখছেন গাংনী উপজেলার ছাত্রলীগ নেতা ওয়াজ্জেল হোসেন।
গত ৫ বছর যাবৎ তিনি নিজ উদ্যোগে চালিয়ে আসছেন বিনা বেতনের পাঠশালা। তার পাঠশালায় লেখাপড়া করে উপকৃত হচ্ছে এলাকার শিক্ষায় পিছিয়ে পড়া শতশত শিক্ষার্থী। এলাকার পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের পড়িয়ে এবং স্থানীয়দের দুঃখ দুর্দশায় পাশে থেকে এলাকার উন্নয়ন ও নিজেকে মানব সেবায় নিয়োজিত রাখতে চান তিনি।
ওয়াজ্জেল হোসেন গাংনী উপজেলার ভাটপাড়া গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য নুর ইসলামের ছেলে ও ধান খোলা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।
২০১৩ সালের কথা। বিদ্যালয়ে কোচিং না করায় একের পর এক পরীক্ষায় ফেল করছিল কসবা গ্রামের এক দিনমজুর এর ছেলে ইসরাফিল হোসেন। মেধাবী শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতিযোগীতায় টিকতে না পেরে লেখা পড়া বন্ধ করে দিয়েছিল ওই শিক্ষার্থী।
বিষয়টি জানার পর তার পাশে এসে দাঁড়ায় ছাত্রলীগ নেতা ওয়াজ্জেল হোসেন। সকাল বিকাল কোচিং করিয়ে পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করায় শিক্ষার্থীকে। পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করায় শিক্ষক শিক্ষার্থী দুজনের মধ্যেই প্রানের সঞ্চার লাভ করে।
শুরু হয় নব উদ্যোমে বিনা পারিশ্রমিকে কোচিং করানোর বিষয়টি। বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে নিয়ে শুরু হয় বিনা বেতনের পাঠশালা নামরে কোচিং সেন্টারের কার্যক্রম। সকাল-বিকাল কোচিং করিয়ে অর্ধ-শতাধিক শিক্ষার্থীকে মেধা তালিকায় নিয়ে আসে ওয়াজ্জেল হোসেন।
খোলা আকাশের নিচে বসে পাঠদান ও শিক্ষার্থীদের কৃতত্ব দেখে মুগ্ধ হয় এলাকার মানুষ। ওয়াজ্জেলের বিনা বেতনের কোচিং এর কারনে এলাকার অসহায় দুস্থ্য পরিবারের ছেলে মেয়েরা তার কাছে পড়তে আসে। তার মানবিকতা ও শিক্ষার্থীদের সাফল্য দেখে স্থানীয় ইউপি সদস্য হযরত আলী একটি ঘর প্রদান করেন। সে ঘরে বসেই ওয়াজ্জেল এখন মাধ্যমিক পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের কোচিং করিয়ে থাকেন।
যে শিক্ষার্থীকে নিয়ে ওয়াজ্জেল বিনা বেতনের কোচিং শুরু করেন সেই ইসরাফিল এখন ৯ম শ্রেনীতে অধ্যায়নরত। ইসরাফিল জানায়, ওয়াজ্জেল তার পাশে না দাঁড়ালে তার লেখা পড়া বন্ধ হয়ে যেতো। সে এখন লেখাপড়ায় ভাল করছে।
তৃতীয় শ্রেনীর ছাত্রী সুরাইয়া জানায়, তার বাবা ও মা দুজনেই শারিরীক প্রতিবন্ধী। তার লেখা পড়ার খরচ যোগানো সম্ভব না হওয়ায় সুরাইয়ার দায়িত্ব নিয়েছেন ওয়াজ্জেল হোসেন।
কসবা গ্রামের ৯ম শ্রেনীর ছাত্রী ছাদিয়া জানায়, পিতা মাতার অভাবের সংসারে প্রাইভেট পড়ানোর খরচ যোগাতে না পারায় লেখা পড়ায় পিছিয়ে পড়ছিলাম। ওয়াজ্জেল ভাইয়ের কাছে বিনা বেতনে পড়ে আমি এবছর অনুষ্ঠিত পরিক্ষায় ভাল ফলাফল করেছি। তবে তার এ মানবিকতা দেখে সরকারি সহযোগীতা থাকলে বড় পরিসরে লেখা পড়ার কার্যক্রম চালাতে পারবে।
৯ম শ্রেণীর আর এক ছাত্রী মারিয়া জানায়, বিদ্যালয়ে লেখা পড়া করে শুধু মাত্র পাশ করা যায়, কিন্তু ভাল ফলাফল করা যায়না। তার দিন মজুর পিতার কাছে প্রাইভেট পড়ানোর কথা বল্লে পিতা অপারগতা জানায়। আমার প্রতিবেশী এক বান্ধবির কাছে আমার হতাশার বিষয়টি জানালে সে আমাকে ওয়াজ্জেল হোসেন ভাইয়ের কাছে নিয়ে আসে এবং সেখানেই শুরু করি বিনা বেতনে কোচিং।
শুধু মারিয়া নয় প্রায় অর্ধ শতাধিক শিক্ষার্থী এখানে লেখা পড়া করছে। প্রতিদিন সকালে ওয়াজ্জেল হোসেনের বাড়ির উঠানে বসে কোচিং-কাচাদের পাঠশালা। সেখানে প্রাথমিক পড়ুয়া প্রায় অর্ধশতাধিক ছেলে মেয়ে পড়া লেখা করে।
আরো পড়ুন্: বামন্দীতে পল্লী বিদ্যুৎ এর এজিএম কে প্রাণ নাশের হুমকিতে লিটন মেম্বরের নামে মামলা
দীর্ঘ ৫ বছর ধরে ওয়াজ্জেল তার অবৈতনিক পাঠশালা পরিচালনা করে আসছেন। ছোট বেলা থেকেই ওয়াজ্জেলের স্বপ্ন ছিলো সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষকে নিয়ে কিছু করার। সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে ওয়াজ্জেল হোসেন বিনা বেতনে এলাকার গরিব দিনমজুরের ছেলে মেয়ে ও পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের পাঠদানে মনোনিবেশ করতে পেরে খুব সাচ্ছন্দ বোধ করেন।
ওয়াজ্জেল হোসেন নিজেও একজন ছাত্র। সে বি.এ বি.এস.এস ক্লাশে লেখা পড়া করছেন। নিজের লেখা পড়ার পাশাপাশি অন্যকে শিক্ষিত করতে শ্রম দিয়ে যাচ্চেন। সেই সাথে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে ইউনিয়ন ছাত্র লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি এলাকার অসহায় গরিব মানুষকে অর্থিক সহায়তা ছাড়াও বিভিন্ন ভাবে সহযোগীতা করছেন। স্থানীয় মানুষের কিছু হলেই ওয়াজ্জেল হোসেন ছুটে যান তাদের পাশে।
স্থানীয় উপকার ভোগীরা জানান, দিন দিন ওয়াজ্জেলের কাছে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বর্তমানে পাঠদানের জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত জায়গা ও চেয়ার-টেবিল। এসবের ব্যাবস্থা করতে পারলে শতশত শিক্ষার্থী উপকৃত হবে।
আরো পড়ুন্: সাড়ে ৩ বছরের শিশু রাজাকারের তালিকায়!
ওয়াজ্জেল হোসেন জানান, অর্থের অভাবে যেন একটি শিক্ষার্থী লেখা পড়ায় পিছিয়ে না থাকে এ জন্য তার এ বিনা বেতনের পাঠশালা অব্যাহত থাকবে। তিনি আরো বলেন আমি দেখিয়ে দিতে চাই বাংলাদেশ ছাত্রলীগ গরিব অসহায় ও সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষকে এগিয়ে নিতে প্রাণপন চেষ্টা করছে। ভালকাজ করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের মুখ উজ্জল করার পাশাপাশি এলাকার উন্নয়ন করতে চাই। তাই মনে হয়েছে এলাকার মানুষকে শিক্ষিত করতে পারলেই এলাকার উন্নয়ন হবে। যে সব শিক্ষার্থী আামার কাছ থেকে সুবিধা নিচ্চে তারাও একদিন বড় হয়ে এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়াবে।
এ ব্যাপারে গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিলারা রহমান বলেন, ওয়াজ্জেল হোসেন তার বাড়িতে বিনা বেতনের যে পাঠশালা চালাচ্ছেন তাতে অনেক মানুষ উপকৃত হচ্ছে। সে যাতে বড় পরিসরে কিছু করতে পারে সে ব্যাপারে তাকে সার্বিক সহযোগীতা করা হবে। তিনি আরো বলেন শুধু ওয়াজ্জেল হোসেন নয় ভাল কাজ করার জন্য সমাজের বিত্তবানদেরও এগিয়ে আসা উচিৎ।
মেপ্র/ইএম