মনে দোলা লাগা বসন্ত ও বিশ^ ভালোবাসা দিবস বরণ করতে উন্মুখ থাকে তরুণ-তরুণীসহ নানা বয়সী মানুষ। আবার কদিন বাদেই ২১শে ফেব্রুয়ারী ফুলছাড়া এ দিনগুলি যেন একেবারেই বেমানান। ফলে অন্য সময়ের থেকে এ দিনগুলি এলে ফুলের চাহিদা বেড়ে যায় বহুগুণে। ফলে ব্যস্ততা বেড়ে যায় ফুলচাষী ও ব্যবসায়ীদের। অতিরিক্ত চাহিদার কারনে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে ঝিনাইদহের দুইটি বড় ফুল বাজারে।
জেলার সবথেকে বড় ফুলের পাইকারী বাজার জেলা সদরের গান্না ও কালীগঞ্জ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, অন্য সময়ের থেকে দুই তিনগুণ বেশি দামে ফুল বিক্রি হচ্ছে। এসব বাজারে পাইকারি একটি গোলাপ আকার ভেদে ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা বিক্রি হয়েছে। আর খুচরা বিক্রি হয়েছে ৩৫ থেকে ৫০ টাকা। এক থেকে দুই সপ্তাহ আগে একই গোলাপ বিক্রি হয়েছিল ১৫ থেকে ২০ টাকা। এছাড়া জারবেরা বিক্রি হয়েছে ১৫ থেকে ২৫ টাকা। যা দুই সপ্তাহ আগেও বিক্রি হয়েছিল ৫ থেকে ৮ টাকা। রজনীগন্ধার স্টীক বিক্রি হয়েছে ৮ টাকা, যা এক সপ্তাাহ আগে বিক্রি হয়েছিল ৩ থেকে ৫ টাকায়। একই সময়ে গাদা ফুল বিক্রি হয়েছে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা ধোপা। যে গাদাফুল দুই সপ্তাহ আগেও বিক্রি হয়েছিল ১০০ থেকে ১৫০ টাকা ধোপা।
জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মাঠে মাঠে ফুটে আছে লাল, হলুদ ও কমলা রঙের জারবেরা। ফুটে আছে রং বে-রঙের গোলাপ, রজনীগন্ধা, গ্লাডিয়াস ও গাঁদা ফুল। ফুটে থাকা ফুলের রঙে স্বপ্ন রাঙ্গাতে ব্যস্ত সময় পার করছে জেলার ফুলচাষীরা। প্রতিবছর বসন্ত বরণ, বিশ^ ভালোবাসা দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারি ও ২৬ মার্চ এলেই এ জেলার ফুলচাষি ও ফুলকর্মীদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। বিভিন্ন জাতীয় উৎসবে এ এলাকায় উৎপাদিত ফুল ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ফলে ফুলের বাড়তি চাহিদা মিটাতে ব্যস্ত সময় পার করে জেলার ফুলচাষীরা।
ব্যবসায়ী ও কৃষকরা বলছেন, ঝিনাইদহে গাদা ফুলের পরিমাণ সব থেকে বেশী। দেশের গাদা ফুলের মোট চাহিদার ৬৫ শতাংশ পুরণ করে ভারতীয় সীমান্তবর্তি এ জেলার উৎপাদিত ফুল।
চলতি মৌসুমে ঝিনাইদহ জেলায় প্রায় ৪০০ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয়েছে। এরমধ্যে জেলা সদরে ৩৭ হেক্টর, কালীগঞ্জে ১৫০ হেক্টর, কোটচাদপুরে ৪৫ ও মহেশপুরে ১৫৯হেক্টর জমিতে দেশি বিদেশী বিভিন্ন জাতের রং-বেরঙের ফুলের চাষ হয়েছে। সব থেকে বেশি ফুলের চাষ হয় জেলা সদরের গান্না ও কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নে। যে কারনে এ এলাকাটি অনেকের কাছে ফুলের নগরী বলে পরিচিত।
জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের ত্রিলোচনপুর গ্রামের ফুলচাষী টিপু সুলতান জানান, ২০১৭ সালে ৫৫ লাখ টাকা খরচ করে ৫ বিঘা জমিতে জারবেরা ফুলের চাষ করেছিলাম। বর্তমানে প্রায় ২০ বিঘা জমিতে আমার ফুল চাষ রয়েছে। এরমধ্যে গোলাপ রয়েছে ৫ বিঘার মত। বিদেশি ফুল জারবেরা কাটার পরেও ১ সপ্তাহের বেশী সময় তাজা থাকে।
কোটচাঁদপুর উপজেলার তালিনা গ্রামের কৃষক সনজিত দাস জানায়, আড়াই বিঘা জমিতে গাদা ফুলের চাষ করেছেন। এরই মধ্যে ৫০ হাজার টাকা খরচের বিপরীতে বিক্রি করেছেন দেড় লক্ষ টাকার ফুল। এখনো অর্ধলাখ টাকার ফুল বিক্রি করা যাবে বলে যোগ করেন এ কৃষক। ওই গ্রামের কৃষাণী সীমা রানী জানায়, সে প্রায় ১২ বছর যাবৎ ফুলের মালা তৈরি করার কাজ করছেন। গাদা ফুলের প্রতি ঝোপায় তার আয় হচ্ছে ১২ টাকা। এভাবে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ আয় করি।
সদর উপজেলার গান্না বাজার ফুল চাষী ও ব্যবসায়ী সমিতির সাধারন সম্পাদক নজরুল ইসলাম জানান, এখন ফুলের বাজার দাম বেশ ভালো রয়েছে। দাম ভালো পেলে ১১ ফেব্রুয়ারী থেকে আগামী ২১ ফেব্রুয়ারী ও ২৬ মার্চ পর্যন্ত সদর, কালীগঞ্জ, মহেশপুর ও কোটচাঁদপুর উপজেলার বিভিন্ন বাজার থেকে প্রায় ১৫ থেকে ২৫ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে ধারনা করছি।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূর-এ-নবী জানান, দাম ভালো পেতে ক্ষেত থেকে তোলার পর ফুল সতেজ রাখা জরুরী। কারন গ্রাহন পর্যন্ত পৌছাতে অনেকটা সময় লেগে যায়। এ জন্য জারবেরা ক্ষেত থেকে কাটার সাথে সাথে পানির ভিতরে দিয়ে রাখতে হবে। গোলাপের ক্ষেত্রেও পানির ভিতরে রেখে হালকা পানি স্প্রে করতে হবে। গাদা ফুলও তোলার পর খেয়াল রাখতে হবে যেন ফুলে কোন আঘাত না লাগে।