কিশোর সন্তানের তথ্য গোপন করে ঝিনাইদহের এক প্রবাসীকে বিয়ে করে বিভিন্ন তাল-বাহানায় অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রাজশাহীর নাছরীন নামের এক নারীর বিরুদ্ধে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানার মেহেরচন্ডী উত্তর পাড়ার মোঃ মুনছুর আলীর মেয়ে, মোবাইলে প্রেমের সম্পর্ক ধরে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পুটিয় গ্রামের মোঃ আয়ুব আলীর ছেলে লিটনের বাড়িতে আসেন। লিটন মালয়েশিয়া প্রবাসী। দীর্ঘদিন মোবাইলে সম্পর্কের জের ধরেই বিয়ের সিদ্ধান্ত হলে নাছরীন লিটনের বাড়িতে আসেন। লিটন মালয়েশিয়াতে থাকায় স্থানীয় কাজি ডেকে মোবাইলের মাধ্যমে বিয়ে হয় তাদের। এরপর থেকে বিভিন্ন বায়না ধরে লিটনের কাছ থেকে টাকা ও সোনার গয়না নিতে থাকে নাছরীন। এভাবে লিটনের কাছ থেকে সাত ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ প্রায় অর্ধকোটি টাকা আত্মসাৎ করে নাছরীন।
প্রবাসী লিটন জানান, এই টাকা দিয়ে রাজশাহীতে একটি ফ্লাট বাড়িও করেছেন নাছরীন। এছাড়াও সাত ভরি স্বর্ণালঙ্কার দিয়েছি তাকে। মোবাইলে যখন সম্পর্ক হয় তখন নাছরীন নিজেকে এতিম ও অসহায় বলে পরিচয় দিয়েছিল আমাকে। যে কারণে নাছরীনের কোন কিছুতেই অপুরণ রাখিনি। যখন যা চেয়েছে তাই দিয়েছি আমি। কিন্তু আমি মালয়েশিয়া থেকে বাড়িতে আসার পর নাছরীনের কিছু কিছু কাজে আমার সন্দেহ হতে থাকে। রাজশাহী তার বাবার বাড়ি বেড়াতে যেতে চাইলে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে যেতে চাইতো না। এছাড়াও ভারতে চিকিৎসা করানোর কথাসহ বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার কথা বলে এপর্যন্ত প্রায় সাত থেকে আট বার টাকা নিয়েছে, কিন্তু পরে শুনতে পেলাম সে চিকিৎসা করাতে ভারতে যায়নি। কেন চিকিৎসা করাতে যায়নি শুনতে চাইলে জানায়, ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এদিকে কয়েক দফা বলার পর রাজশাহী তার বাবার বাড়িতে যেতে রাজি হলে, লিটন রাজশাহীতে যেয়ে দেখে তার ১৮/১৯ বছরের একটি ছেলে রয়েছে। ছেলেটি কার শুনতে চাইলে, তার বোনের ছেলে বলে আমাকে বোঝাতে চেষ্টা করে। কিন্তু বিয়ের আগে নাছরীন আমাকে জানিয়েছিলো সে এতিম তার কেউ নেই। বিভিন্ন স্পর্শকাতর কথা বলাই, আমি নাছরীনের প্রতি দুর্বল হয়ে তাকে স্বচোক্ষে না দেখেই এই বিয়েতে মত দিয়েছিলাম। কিন্তু ঐ ১৮/১৯ বছরের ছেলেটি যে তার এবং এর আগে নাছরীনের বিয়ে হয়েছিল একথা জানতে পেরে আমার মনে ঘৃনার পাত্র হয়ে যায় নাছরীন। একদিকে অন্ধ এই ভালোবাসার সাথে নাছরীনের প্রতারণা, অন্যদিকে দিনের পর দিন বিভিন্ন অজুহাতে তার লক্ষ লক্ষ টাকা নেওয়ার ফন্দি লিটনের মগজে নাড়া দেয়।
লিটন সাংবাদিকদের জানায়, একদিকে আমার সরলতার সুযোগে, অন্যদিকে ১৭/১৮ বছর বিদেশ থাকায় আমার টাকা আছে এটা ভেবেই নাছরীন মনে হয় আমাকে টার্গেট করেছিল। একথা আমি বুঝতে পারিনি। আমার এতো কিছু থাকতেও আমি একজন এতিম মেয়েকে অন্ধ ভাবে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম। কিন্তু এই প্রতারকের ফাঁদে আর নয়। সমস্ত নিয়ম মেনে কোর্টের মাধ্যমে ডিভোর্স দিয়ে আমি মালয়েশিয়া চলে যায়। এতেও ক্ষ্যান্ত না হয়ে ডিভোর্সের দুই মাসের মধ্যে আমার চাকরি খেতে নাছরীন মালয়েশিয়া চলে যায়।
লিটন বলেন, কতোটা দুর্ধর্ষ হলে একটি মেয়ে বিদেশে যাওয়ার মত রিস্ক নিতে পারে এটা আপনাদের মাধ্যমে আমি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করাতে চায়। এঘটনার পর আমি থানাতে একটি জিডি করেছি। আমি বিদেশে যেয়েও নাছরীনের কাছে জীবনের নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছি।
লিটনের বাবা আয়ুব হোসেন জানান, আমরা নাছরীনের ছলনায় ভুলে গিয়েছিলাম। নাছরীনের এর আগে বিয়ে হয়েছে এবং ১৮/১৯ বছরের একটি ছেলে আছে এর কোন কিছুই আমাদের জানায়নি। পরে আমার ছেলে জানতে পেরে তাকে ডিভোর্স দিয়েছে। তিনি বলেন, এই প্রতারণার কথা শুনেও আমরা তাকে মেনে নিয়েছিলাম। বিভিন্ন অজুহাতে আমার ছেলের কাছ থেকে প্রায় ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে নিঃস্ব করেছে নাছরীন। পরে শুনতে পেলাম ডিভোর্সের পর ক্ষিপ্ত হয়ে মালয়েশিয়ায় চলে গেছে নাছরীন। আমরা এই মেয়েটির হাত থেকে বাঁচতে চাই।