মুজিবনগর উপজেলার গোপালপুর গ্রামের শাহাদৎ হোসেন শিলন। লেখপড়া শেষ করে এখন ঢাকা কাজীপাড়া এলাকার একটি ছাত্র মেসে থাকেন চাকরির আশায়। ওই মেসের বেশ কয়েকজন ডেঙ্গু আক্রান্ত হন। তারা কেউ কেউ ঢাকাতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। কেউ কেউ বাড়ি চলে গেছেন। শিলনের তিনদিন আগে হঠাৎ প্রচন্ড বেগে জ¦র আসে। তারপর সে নিজ গ্রামে চলে আসেন।
গতকাল বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকালের দিকে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন। তার শরীরের প্লাটিলেট আশংকাজনকভাবে কমে গেছে। স্ত্রী বদরুন্নাহার ১০ দিন আগে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলেন। সে গত দুই দিন আগে সুস্থ হয়েছেন। তার কাছে থেকে এবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন তার স্বামী রমজান আলী। রমজান আলী বলেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্তরা খুব কষ্ট পাচ্ছেন। আমার স্ত্রীর পর আমি আক্রান্ত হয়েছি। স্ত্রীর কাছ থেকেই আমার আক্রান্ত হওয়া। হাসপাতালে ভর্তি হয়েঠি। চিকিৎসক বলেছেন প্লাটিলেট কমে এখন মাত্র ৬৭ হাজার হয়েছে। চিকিৎসক বলেছেন, আমাকে এখন বেশ কয়েকদিন হাসপাতালে থেকেই চিকিৎসা নিতে হবে। এভাবে প্রতিদিনই ভর্তি হচ্ছেন বিভিন্ন বয়সি নারী পুরুষ ও শিশুরা।
এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জেলার তিনটি হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি রয়েছেন ৩০ জন। এর মধ্যে মেহেরপুর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে ১৪ জন, মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছেন ১২ জন ও গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছেন ৪ জন রোগী।
মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ডেঙ্গু ওয়ার্ডে কর্মরত নার্স চন্দনা জানান, প্রতিনিয়ত ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছেন। হাসপাতালে প্রথম দিকে ১০ বেডের ওয়ার্ড এখন ১৫ বেড করা হয়েছে। তারপরেও যায়গা সংকুলান করা যাচ্ছেনা। রোগীরা সব ধরণের ওষধপত্র পাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
প্রতিদিনই ডেঙ্গু আক্রান্ত নতুন নতুন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হলেও, ডেঙ্গু সতর্কতায় নেই কোন প্রচার প্রচারণা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। স্থানীয় জনপ্রতিনিদের মধ্যেও নেই আগাম সতর্কতার জন্য পদক্ষেপ। তবে স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, রোগ নির্নয় ও চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রয়েছে হাসপাতালগুলোতে।
আগাম প্রস্তুতি না নেয়া ও প্রচার প্রচারণা না থাকায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ে। কোরবানীর ঈদে যারা ঢাকায় গরু বিক্রি করতে গিয়েছিল তাদের মাধ্যমেই জেলা শহরগুলোতে এই ডেঙ্গু রোগ ছড়িয়েছে বলে ধালনা করছে স্বাস্থ্য বিভাগ ও সচেতন মহল।
এদিকে, মেহেরপুর জেলাতে দিন দিন ডেঙ্গু রোগী সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও জেলা বা উপজেলা প্রশাসন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরষদ গুলোতে তেমন কোন প্রচার প্রচারণাও দেখা যায় নি। মেহেরপুর ও গাংনী দুটি পৌর সভা থাকলেও দেখা যায়নি মশক নিধনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে। এখন শহর কিংবা গ্রাম সব খানেই ঝোপ ঝাড়, নর্দমা অপরিস্কার। এসব স্থান অনেকটাই মশার প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে ধরা যায়। স্থানীয় পৌর কর্তৃপক্ষ আজো কোন প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন না। তবে পৌর কর্তৃপক্ষ দাবী করেছেন তারা মশক নিধন কার্যক্রম চালাচ্ছেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দায়সারাভাবে একটি র্যালী করেই ডেঙ্গু সচেতনতার দায়মুক্তি পেয়েছে।
স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, ডেঙ্গুর স্বভাব পাল্টেছে। আগে মশা দিনে কামড়াতো। স্বচ্ছ পানিতে এডিস মশা ডিম পাড়তো। এখন সবখানেই এডিশ মশার বিচরণ। ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে হঠাৎ ১০৩/১০৪ জ¦র দেখা দিবে।
ডেঙ্গু আক্রান্ত গাংনীর ষোলটাকা গ্রামের জিন্নাত আলী বলেন, শুরু হয় পেট ব্যথা, মাথা ব্যথা, বমি, মাথা ঘোরা, পাতলা পায়খানা, রক্ত বের হওয়া শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া। তারপর শুরু হয় ডেঙ্গুর ভয়াভহতা।
চিকিৎসকদের পরামর্শ, এই সময় জ্বর হলে শুরুতেই পরীক্ষা করিয়ে নেয়া উচিৎ। ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আবারও ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে রোগীর অবস্থা বেশি ঝুঁকিতে পরতে পারে, তাই জ্বর হলেই সতর্ক থাকতে হবে।
মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্ববধায়ক জমির মোহাম্মদ হাসিবুর সাত্তার জানান, জেলায় প্রতিদিনই ডেঙ্গু আক্রান্ত হবার খবর মিলেছে। ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় কীট, আলাদা ওয়ার্ডসহ সব ধরণের প্রস্তুতি রয়েছে। তবে সবখানে প্রচার প্রচারণা চালানো প্রয়োজন যাতে ডেঙ্গু আক্রান্ত কেউ না হয়। সেক্ষেত্রে বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখা ও নর্দমাতে নোংরা পানি বা জলাবদ্ধতা না থাকে তার ব্যবস্থা নেয়া জরুরী। এ ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিদের হস্তক্ষেপ জরুরী বলেও মনে করেন তিনি।