সিরিয়ায় তুরস্কের হামলাকে অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছে রাশিয়া। এই হামলা বরদাশত করা হবে না বলেও জানিয়েছে দেশটি। সিরিয়ায় মস্কোর বিশেষ দূত আলেকজান্দ্রার লাভ্রেনতেভ বলেছেন, ‘এটা (তুরস্ক-সিরিয়া সংঘাত) একেবারেই অগ্রহণযোগ্য…অবশ্যই আমরা এটা বরদাশত করব না।’
সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে কুর্দিদের পক্ষে মোতায়েন মার্কিন সেনাদের গত সপ্তাহে প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এই ঘোষণা মাত্রই সিরিয়ার সীমান্ত এলাকায় সেনা জড়ো করে কুর্দিদের ওপর হামলা শুরু করে তুরস্ক। এই হামলায় তুরস্কের সঙ্গে রয়েছে সিরিয়ার বিদ্রোহী যোদ্ধারা। মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণায় হঠাৎ বিপাকে পড়ে যাওয়া কুর্দিরা শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার মধ্যস্থতায় সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর সহায়তা চেয়ে চুক্তি করেছে। যদিও কুর্দি নেতা জানিয়েছেন, তাঁরা রাশিয়া ও সিরিয়ার ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না।
আজ বুধবার বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়েছে, রাশিয়া সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের প্রধান মিত্র। সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরের সময় সিরিয়ায় মস্কোর বিশেষ দূত আলেকজান্দ্রার লাভ্রেনতেভ তুর্কি হামলাকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আগের চুক্তি অনুসারে, তুর্কি সেনাদের সিরিয়ার অভ্যন্তরে মাত্র ৫-১০ কিলোমিটার প্রবেশের এখতিয়ার রয়েছে। আর তুর্কিদের সেখানে স্থায়ীভাবে সেনা মোতায়েনের কোনো অধিকারও নেই। তিনি বলেন, সংঘাত এড়াতে সিরিয়া তুরস্কের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে।
লাভ্রেনতেভ নিশ্চিত করেছেন, কুর্দি ও সিরিয়া সরকারের মধ্যে চুক্তির ব্যাপারে রাশিয়া মধ্যস্থতা করেছে। চুক্তি অনুসারে কুর্দি নেতৃত্বাধীন বাহিনী সিরিয়ার সেনাদের কাছ থেকে সামরিক সহায়তা পাওয়ার বিনিময়ে তাদের (কুর্দি) নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল দেশটির কাছে সমর্পণ করেছে।
২০১৫ সাল থেকে রুশ সৈন্য মোতায়েন রয়েছে সিরিয়ায়। বর্তমান পরিস্থিতিতে রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, সিরিয়া ও তুরস্কের মধ্যের ‘সংযোগ রেখায়’ রুশ সেনারা টহল দিচ্ছে।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের সদর দপ্তর পেন্টাগন বলেছে, সিরিয়ার আইন ইসা শহরের কাছে মার্কিন সেনাদের দিকে এগিয়ে আসা তুর্কি সমর্থিত বাহিনীকে শক্তি প্রদর্শনে এফ-১৫ যুদ্ধবিমান ও অ্যাপাচি হেলিকপ্টার গানশিপ মোতায়েন করা হয়েছে। চুক্তি ভঙ্গ করা ওই সেনারা মার্কিন বাহিনীর জন্য হুমকি নয়।
কুর্দি নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সকে (এসডিএফ) লক্ষ্য করে হামলা শুরু করে তুর্কি সেনারা। ওই অঞ্চল থেকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) নির্মূলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান শক্তি হিসেবে কাজ করে এসডিএফ। তবে তুরস্ক উল্টো এসডিএফকে জঙ্গি সংগঠন বলে মনে করে। তুরস্ক সীমান্ত থেকে ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত ‘নিরাপদ এলাকা’ গড়ে তোলার প্রস্তাব দিয়ে সেখানে তুরস্কে অবস্থান নেওয়া সিরিয়ার শরণার্থীদের বড় একটি অংশকে পুনর্বাসনের কথা বলছে। তবে শরণার্থীদের অনেকেই কুর্দি না হওয়ায় তুরস্কের এই পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হলে কুর্দিরা জাতিগত নিধনের শিকার হতে পারে বলে সতর্ক করছেন সমালোচকেরা।
জাতিসংঘের তথ্য অনুসারে, তুরস্ক হামলা চালানোর পর সেখানে ডজন ডজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। কমপক্ষে ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে।
সূত্রঃ প্রথম আলো