চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনায় আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি হয়েছে। দিনে দুপুরে পিস্তল ঠেকিয়ে লুটের চেষ্টা ও বোমা রেখে আতংক সৃষ্টি করা অস্ত্রসহ গ্রেফতার চারিদিকে মাদকের ছড়াছড়ি। এ সব ঘটনায় দর্শনাসহ আশপাশের মানুষ আতংক বিরাজ করছে।
গতকাল বুধবার দিন দুপুরে ব্যুরো বাংলাদেশ অফিসে দিন দুপুরে সশস্ত্র দুর্বত্তারা এনজিওর হিসাবরক্ষকে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে জিম্মি করে লুটের চেষ্টা করে। গত বুধবার দিনগত রাতে চুয়াডাঙ্গা সেনাবাহিনী অভিযান চালায় দর্শনা পৌর এলাকার শান্তিপাড়ায় অভিযান চালিয়ে বিএনপির ক্যাডার শাহারুলকে গ্রেফতার করে। পরে তার স্বীকারোক্তিতে তার বাড়ির পিছনের মাটির নিচ থেকে বিদেশী নাইন এম এম পিস্তল ২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে।
এদিকে গত মঙ্গলবার রাতে সেনাবাহিনী ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর যৌথ অভিযান চালিয়ে প্লাস্টিকের কন্টিনেটার ভর্তি ৭২৪ লিটার কেরুজ বাংলা মদ উদ্ধার করে। গত মঙ্গলবার ৯ আগষ্ট দুপুরে ঢাকা আশুলিয়ায় ১৮ হাজার কেরুজ মদ উদ্ধার করে।এ সময় কভারভ্যান থেকে ১৮ হাজার বোতল মদসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব ৩র ডিএডি মাহযুব হোসেন। এতে করে দর্শনায় আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি হয়েছে। আবার শুরু হযেছে মাদকের রমরমা ব্যাবসা।
জানা গেছে, দর্শনা থানায় সর্বমোট ৩২০ টি বিভিন্ন মামলার মধ্যে ১৬৭ টি মাদকের মামলা। সেখানে মাদকসহ অন্যান্য মামলায় গ্রেফতার হয়েছে ৭৫৭ জন। গত ১ বছর ৩ মাসে দর্শনাসহ থানা এলাকায় ব্যাপক হারে মাদক সেবন ও মাদক ব্যবসা বেড়েছে।
এদিকে বিভিন্ন সময় মাদক বিরোধী অভিযানে গ্রেফতারের পাশিপাশি উদ্ধার করা হয়েছে ভারতীয় ফেনসিডিল, ইয়াবা, বিদেশী মদ, চোলাই মদ, টেপেন্ডাল ট্যাবলেট, গাঁজা, গাঁজার গাছ, বিদেশী সিগারেটসহ আরও অনেক ধরেন মাদকদ্রব্য।
এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে বসে মাদকের আড্ডা। দর্শনা মদনা গ্রামের টাওয়ারের পাশে দোকানের পিছনে প্রতিনিয়ত চলছে মাদকের আড্ডা। পরাণপুর স্কুল মাঠে সন্ধায় চলছে গাঁজা সেবন, দর্শনা রেলগেট সংলগ্ন এলাকায় প্রতিদিন বিকালে ইয়াবা ও ফেন্সিডিল বিক্রি।
এছাড়াও দর্শনার আকন্দবাড়িয়া রামনগর, জয়নগর, ঈশ্বরচন্দ্রপুর, আজমপুর ও শ্যামপুর গ্রামসহ থানাধীন বিভিন্ন স্থানে মাদক সেবন যেন ওপেন সিকরেট। দর্শনায় রয়েছে বৃহত্তম চিনিশিল্প, রয়েছে রেলওয়ে শুল্ক ষ্টেশন ও আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট। এ উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত কোলঘেঁষা এলাকা দর্শনা। এই দর্শনায় হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে মরন নেশা ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরনের নেশাজাত দ্রব্য। এসব সেবন করছে উঠতি বয়েসের যুবকরা ও স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছেলারাসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। প্রতিদিন দেখা যাচ্ছে চুয়াডাঙ্গা জেলাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহনে করে দর্শনা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় আসে মাদক সেবন করতে। পুলিশ প্রশাসন দুএকটি ছোট মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করলেও ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে মাদকের শীর্ষ গডফাদারা। প্রশাসন এখনই লাগাম টেনে না ধরলে ভয়াল মাদকের ছোবলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিঃশেষ হয়ে যাবে।
এ আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে এ এসপি জাকিয়া সুলতানা বলেন, দর্শনা বাসস্ট্যান্ড মাস্টপাড়া ব্যুরো বাংলাদেশ অফিসের ছিনতাই চেষ্টা ঘটনা তড়িৎ পদক্ষেপ নিয়েছি পাশাপাশি গতরাতে অস্ত্র উদ্ধার এবং মাদক উদ্ধার সহ সর্বক্ষেত্রের তাৎপর রয়েছে। আমরা যদি সুনির্দিষ্ট উপায় তথ্য থাকে আমাদেরকে জানাবেন আমরা দ্রত পদক্ষেপ নেব। আমরা সব সময় তৎপর আছি। শুনি চারদিকে মাদক আছে তার কোন নির্দিষ্ট তথ্য পায়নি যার কারনে মাদক আটক করা সম্ভব হয় না আপনাদের কাছে কোন সুনির্দিষ্ট তত্ত্ব থাকলে আপনারা জানাবেন আমরা সাথে সাথে পদক্ষেপ নেব।
এ বিষয়ে দর্শনা থানার নবাগত ইনচার্জ শহীদ তিতুমীর বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি। এলাকা সম্পর্কে ধারণা কম আগামীতে আইনশৃঙ্খলা উন্নয়নে পদক্ষেপ নেব। এছাড়া আমার প্রয়োজনীয় ফোর্স কম যার কারণে অনেক পদক্ষেপ নিতে পারছি না। এছাড়া বদলি প্রক্রিয়া চলছে এবং পূজা পরবর্তীতে আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেব।