চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় যুবলীগ কর্মী পল্টু হত্যাকান্ডের ঘটনায় মামলার এজাহারভুক্ত আসামী মান্নান ও তোতা সহ ৭ জনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন বিজ্ঞ আদালত। কাঠগড়া থেকে নেমে কোর্টের বারান্দায় হুমকির শিকার হয়েছে বাদী পক্ষ।
গত ২৩ আগস্ট দর্শনা পুরাতন বাজার রেল ইয়ার্ডে যুবলীগ কর্মী পল্টুকে প্রকাশ্যে জনসম্মুখে হত্যাকান্ডের ঘটনায় মামলার এজাহারভুক্ত আসামী স্বর্ণ ও মাদক চোরাকারবারী এবং একাধিক মামলার আসামী আঃ মান্নান খাঁন ও শেখ আসলাম আলী তোতা সহ ৭ জনের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য উদঘাটনের জন্য গত ১৬/০৯/১৯ ইং তারিখে বিজ্ঞ আদালতের কাছে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন তদন্তকারী অফিসার। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে গতকাল বুধবার বিচার বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞ আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সাজেদুর রহমান ১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এসময় বাদী পক্ষের হয়ে বিভিন্ন যুক্তি উপস্থাপন করেন সিনিয়র এ্যাডভোকেট মোঃ সেলিম উদ্দীন। কোর্টে শুনানি শেষে কাঠগড়া থেকে নেমেই কোর্টের বারান্দায় বাদী পক্ষের হুমকি দিয়ে বলেছে, এতো বড় সাহস? আমাদের নামে মামলা দেওয়া? আমরা খুব শীঘ্রই আসছি। দেখা হবে, হিসাবও হবে।
উল্লেখ্য, গত ২৩ আগষ্ট-২০১৯ তারিখে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে প্রকাশ্যে ঈশ্বরচন্দ্রপুর গ্রামের মৃত: আব্দুর রউফ এর ছেলে যুবলীগ কর্মী নঈমউদ্দিন আহম্মেদ পল্টু (৩৫) কে প্রকাশ্যে জনসম্মুখে নৃশংস ভাবে কুপিয়ে ও লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে এবং একই গ্রামের মৃত: ফরজ আলীর ছেলে মঞ্জুর আহম্মেদ (৩৪) কে মারাত্মক ভাবে আহত করে।
এ ঘটনায় নিহত পল্টুর বড় ভাই মঈনউদ্দীন বাদী হয়ে গত ২৪ আগষ্ট-২০১৯ তারিখে দামুড়হুদা মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। আসামীরা হচ্ছে, দর্শনা মোবারক পাড়ার আলী হোসেনের ছেলে আব্দুল মান্নান (৪২), মৃত: কবির খালাসীর ছেলে শেখ আসলাম আলী তোতা (৪৩), দর্শনা পুরাতন বাজারের মৃত: জিয়াউল হকের ছেলে দিপু রেজা (৪১), মোবারক পাড়ার আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে সাইফুল ইসলাম ওরফে বাংলা (৪১), বাদল খানের ছেলে মোঃ আলম (৪৩), ডাঃ শামসুল ইসলামের ছেলে মোঃ সোহেল (৪০) ও ইমারত আলীর ছেলে আশিক (২১) এ সাতজন সহ অজ্ঞাত আরো ১০/১২ জনকে আসামী করে দামুড়হুদা থানায় মামলা করা হয়।
গত ১৬/০৯/১৯ তারিখ সোমবার আসামীরা চুয়াডাঙ্গা নিম্ন আদালতে জামিনের জন্য আবেদন করলে বিচারক তাদের জামিন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। এবং তদন্ত কারী পুলিশ অফিসার সত্য উদঘাটনের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে বিজ্ঞ আদালত ১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে বলেছেন, পূর্বেও উক্ত মামলার আসামী মান্নান, তোতা, দিপু, বাংলা ও আলম হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটিয়েও টাকার জোরে ও ক্ষমতার দাপটে বের হয়ে আসে। এবং মোটা টাকার বিনিময়ে বিএনপি থেকে এসে আওয়ামীলীগের মত একটি বড় দলের একাংশ যুবলীগে পদ দখল করে নেয়। ফলে ক্ষমতার দাপট আরো বেড়ে যায়।
দিনে দিনে বাড়তে বাড়তে এতোটাই বেড়ে যায় যে দর্শনার ইতিহাসে যা ছিলোনা ঠিক তাই করে তারা রেকর্ড গড়ে তোলে শুধু ক্ষমতার লোভে। যার বহিঃপ্রকাশ শোকাবহ আগস্টের ২৩ তারিখ বিকাল সাড়ে ৫ টায় পল্টুর তাজা জীবন ও মঞ্জুর এর রক্ত। কি দোষ ছিলো নিহত সেই পল্টুর এবং আহত মঞ্জুরের? কেউ জানে না। শুধুই আধিপত্য বিস্তার করাকে কেন্দ্র করে এই ঘটনা।
এর আগে দর্শনার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলামকে হত্যা করে এই মান্নান গ্যাং। তার পরেও তারা বীর দর্পে প্রকাশ্যে চলাফেরা করে। তবে এবার দিনে-দুপুরে প্রকাশ্যে জনসম্মুখে এই পল্টু হত্যাকান্ডের ঘটনার পরেও যদি ছাড় পেয়ে যায় তাহলে দর্শনায় আর কোন দিন শান্তি ফিরে আসবে না। বরং একের পর এক এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকবে।
তাই বিচার বিভাগের নিকট আকুল আবেদন এই হত্যাকান্ডের সঠিক ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। যাতে করে পরবর্তীতে এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর সাহস কারো না হয়।
দর্শনা প্রতিনিধিঃ