পারদর্শী গাছিদের নিপুণ হাতের ছোঁয়াতে ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে খেজুর গাছের পরিচর্যা। দামুড়হুদায় বিভিন্ন গ্রামের গাছীরা খেজুর গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
বৈচিত্র্যময় ছয় ঋতুর দেশ আামদের বাংলাদেশ।দেশের ঋতু গুলোর রয়েছে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য। আর এ ঋতু বৈচিত্র্যের পরিবর্তনের জন্য রাতের শেষে জানান দিচ্ছে শীত। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রকৃতিতে বইতে শুরু হয়েছে শীতের আগমনী বার্তা।শিশির ভেজা ঘাস আর হালকা কুয়াশায় প্রস্তুত হচ্ছেন শীত। প্রকৃতি সেজেছে অনিন্দ্য সুন্দর রূপে। প্রাম- বাংলার ঐতিহ্যবাহী অবহেলিত এ খেজুর গাছগুলোকে নতুনরূপে সাজিয়ে তোলার প্রস্তুতি শেরে গাছ থেকে খেজুরের সুমিষ্ট স্বাদের রস আহরণের প্রস্তুতিতে দামুড়হুদায় গাছীরা।
ইতিমধ্যেই উপজেলার সকল গ্রামের গাছিরা হাতে দা কোমরে দড়ি ও হাতের নিপুণ ছোয়াতে গাছ চাঁচাছোলার কাজ শুরু করেছেন।শীতের দিন মানেই গ্রামীণ জনপদের মানুষের মাঝে খেজুর রস আর রস থেকে তার গুড়ের মৌ মৌ গন্ধ। শীতের সকালে খেজুরের তাজা রস যে কতটুকু তৃপ্তির তা বলে বোঝানো যাবে না। পাড়ায় পাড়ায় খেজুর রসের পিঠা এবং পায়েসতো খুবই মজাদার। আর ক’একদিন পরই সংগ্রহ করা হবে রস, রস থেকে শুরু হবে পাটালি ও গুড় তৈরির পর্ব। চুয়াডাঙ্গা জেলার রস ও গুড়ের সুনাম অর্জন রয়েছেন দেশব্যাপী।
দামুড়হুদা উপজেলার হাউলী ইউনিয়নের তারিনী পুর গ্রামের গাছী জসিম উদ্দীন গ্রামের রাস্তার পাশে মাজায় মোটা দড়ি,হাতে কাচি নিয়ে খেজুরের গাছ ঝুড়ার কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এসময় তার কাছে গিয়ে এ বছরের কয়টি খেজুর গাছ রয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,নিজের গাছ রয়েছেন ৫০ টি অন্যের কাছে থেকে নিয়েছি ৭০ টি। এবছর মোট ১২০ টি গাছ থেকে রস সংগ্রহ কারা হবে।
ইতিমধ্যেই গাছের পরিচর্যা শেষের পথে।অন্যের কাছ থেকে ৭০টি গাছ নেওয়ার জন্য প্রতিটি গাছের জন্য ১ কেজি করে মোট ৭০ কেজি গুড় দেওয়া লাগবে।রস সংগ্রহের জন্য গাছের সকল পরিচর্যা শেষের পথে। শীতের এ মৌসুমিতে পুরোদমে চলবে রস সংগ্রহ শেষে গুড় তৈরির প্রস্তুতি। গুড় থেকে তৈরি করা হবে পাটালি। রস থেকে গুড় তৈরির এ পর্ব চলবে ফ্লাল্গুন মাস অবধি। একই গ্রামের গাছী জিয়ারুল হক বলেন আমার ৯০টি খেজুর গাছ রয়েছে, গাছীরা এবার মজুরী নিচ্ছে ১০০০টাকা মজুরীর দাম বেশি হওয়ায় আমি নিজের গাছ নিজেই চাঁচাছোলা করছি। হেমন্তের প্রথমে দামুড়হুদা উপজেলার ঐতিহ্যবাহী গুড়ের হাট জয়রামপুর ষ্টেশন বাজার ও সরোজগঞ্জ বাজার সহ বিভিন্ন স্থানে গাছিরা তাদের গুড় নিয়ে আসবেন বাজারে বিক্রি করতে।এসকল গুড়ের হাট থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানের গুড় ব্যবসায়ীরা পাইকারি দরে গুড় কিনে ট্রাক,আলামসাধুর মাধ্যমে চলে যাবেন তাদের গন্তব্য স্থলে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চুয়াডাঙ্গা কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জেলার চারটি উপজেলার মোট ২ লাখ ৪৮ হজার ৯৬০ টি খেজুর গাছ রয়েছে।এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ৯৩ হাজর ৪৫০, আলমডাঙ্গায় ৩৫ হাজার ৩১০ টি, দামুড়হুদা উপজেলার ৮৩ হাজার ও জীবননগর উপজেলার ৩৬ হাজার ৫০০ টি খেজুর গাছ রয়েছে। জেলা থেকে এ বছরে ২ হাজর ৫০০ মেট্রিক টন গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, যা অর্জনে আশাবাদী। এ জেলার গুড় সুস্বাদু হওয়ার কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে যেয়ে থাকেন।
যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের “মনিটরিং ও মূল্যায়ন কর্মকর্তা মোঃ মাসুম আব্দুল্লাহ’র সাথে কথা বললে তিনি বলেন, গাছিদের গাছ কাটার কাজটি একটি শিল্প। এ জন্য শীত মৌসুমে আসার সঙ্গে সঙ্গে দক্ষ গাছিদের কদর বেড়ে যায় । গাছের রস গুড়ের ঐতিহ্য ধরে রাখতে খেজুর গাছ রক্ষাসহ নতুনভাবে রোপণের উদ্যোগ নেয়া জরুরি। তিনি আরো বলেন, আমাদের বাংলাদেশে পরিকল্পিত ভাবে খেজুর গাছ রোপন ও সংরক্ষণের দরকার। কারণ এ গাছটি অন্যান্য গাছের তুলনায় অধিক গুরুত্ব বহন করেন, অর্থনৈতিক ভাবে বিশেষ ভূমিকা পালন করে চলেন।তাছাড়া খেজুরের ঐতিহ্য ধরে রাখতে দেশি চারার পাশাপাশি বিদেশি চারাও রোপন করা প্রয়োজন। তবে বর্তমান দেশের বিভিন্ন স্থানে খেজুরের জন্য বিদেশি গাছ লাগানো হচ্ছে।