দামুড়হুদা উপজেলার জয়রামপুর কাঠালতলা বাস স্ট্যান্ড নামক স্থানে প্রধান সড়কের পাশে থাকা বড়বড় চটকা গাছের তরতাজা পাতা আনমনে ঝরে পড়ছে। এতে সাধারণ মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে শংকা। গাছের আবার কি হলো? তাজা গাছের পাতা কিভাবে ঝরে পড়ছে। প্রচুর পরিমানে পাতা ঝরে পরাই ঘটনাটি গত দুইদিন ধরে এলাকাবাসী পর্যবেক্ষণ করছে। আগে কখনো এমনটি ঘটেনি বলে জানান স্থানীয়রা।
সরজমিনে ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দামুড়হুদা উপজেলার হাউলী ইউনিয়নের জয়রামপুর কাঠালতলা বাজার এলাকায় মহাসড়কের পাশে থাকা সরকারি মোটা মোটা চটকা গাছ আছে। সেই গাছ থেকে তরতাজা পাতাগুলো আপন মনে সব ঝরে পড়ছে। এতে করে এলাকার মানুষের মনে সন্দেহের বেড়াজাল বুনছে যে, গাছের আবার কি হলো? অবশেষে সন্দেহের জট কাটিয়ে দিল এলাকাবাসী।
স্থানীয় এলাকাবাসী বলছেন, কাঠালতলা বাস স্ট্যান্ড থেকে মাত্র কয়েক গজ দূরে তারিনীপুর গ্রামে যেতেই ডুগডুগি প্রাইমারি স্কুলের সামনে অবস্থিত আছে পরপর দুই দুইটি ইটভাটা। নিয়মনীতি উপেক্ষা করেই একই জায়গায় দুইটি ইটভাটা গড়ে উঠেছে, যা সকলেই জানে এবং দেখছে তাতে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের কারো কোন মাথাব্যথা নেই। ইটভাটা দুইটির একটি নিউ শেখ ইটভাটা এবং অপরটি হেড ব্রিক্স। এই দুইটা ইটভাটার ইট প্রস্তুত করা হয় হাওয়ার মাধ্যমে কয়লা দিয়ে অর্থাৎ হাওয়ার ভাটা। একসাথে কয়েকদিন আগে বন্ধ করা হয় এই ইটভাটা। উক্ত ইটভাটা দুটির মধ্যে আটকে থাকা বিষাক্ত কালো ধোঁয়া হঠাৎই হাওয়ার সাথে বের হয়ে আসে। বিষাক্ত এই কালো ধোয়া যে গাছের উপর দিয়ে যাবে সেই গাছের পাতা সব অটোমেটিক ভাবে তাজা পাতা ঝরে পড়বে এমনটাই জানালেন স্থানীয় এলাকাবাসী। এই ইটভাটার মধ্যে আটকে থাকা এমনই বিষাক্ত কালো ধোঁয়া যে, এই ধোঁয়া যে গাছের উপর দিয়ে যাবে সেই গাছের সমস্ত তাজা পাতাই ঝরে পড়বে।
সরজমিনে দেখা গেছে তারিনীপুর ও জয়রামপুর কাঁঠাল তলা এলাকায় বেশ কিছু পুইশাকের বান আমড়া গাছসহ সবুজ গাছপালার পাতা সব শুকিয়ে ঝরে যাচ্ছে। প্রধান সড়কের পাশে থাকা উপরে কালো ধোয়ার কারণে গাছগুলোকে আক্রমণের শিকার হতে হয়েছে। তাতে করে গাছের পাতা সব ঝরে পড়ছে এবং এখানেই বেধেছে বিপত্তি। চলছে বর্ষার মৌসুম ঝুমঝুম করে পড়ছে বৃষ্টি আর এই বৃষ্টি হওয়ার কারণে এই মহাসড়কের উপর পড়ে থাকা গাছের পাতায় রাস্তা এত পিচ্ছিল হয়েছে যে, যেকোনো সময় সড়কে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। আর দুর্ঘটনা ঘটলে এর দায় কে নেবে প্রশ্ন এলাকাবাসীর।
এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ডুগডুগি প্রাইমারি স্কুলের সামনে পাশাপাশি দুইটা ইটভাটা হওয়ার কারণেই এমন ক্ষয়ক্ষতি সম্মুখীন হচ্ছেন তারা। এই বিষাক্ত কালোধোঁয়া হাওয়ার কারণে মানুষ সহ জীবজন্তু গাছপালা সবাই প্রচন্ড আকারে ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে পরছে। ইটভাটার কারণে এমন ক্ষয়ক্ষতি পরিবেশের বিপর্যয় টেনে আনছে। দুইটি ইট ভাটার বর্জ এক সাথে নির্গত হওয়ায় এমটি ঘটেছে বলে জানান এলাকাবাসী। তারা আরও বলেন একই স্থানে দুটি ইটভাটা থাকা মারাত্মক। একটি থাকলেই সেই এলাকায় টিকা যাইনা, তার উপর রয়েছে দুটো তাও আবার পাশাপাশি। এতে সকলেই স্বাস্থ্য ঝুকির মধ্যে রয়েছে। এর থেকে কিভাবে পরিত্রাণ পাবে এলাকাবাসী। কাঁঠালতলা মহাসড়কে এমন ভাবে রাস্তার উপর গাছের পাতা ঝরে পড়েছে যে রাস্তার পিচ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। আসপাশের কোথাও ভাঙ্গাচোরা রাস্তা বোঝা যাচ্ছে না ফলে ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে।
এ বিষয়ে দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি অফিসার শারমিন আক্তার বলেন, অতিরিক্ত মাত্রায় কালো ধোঁয়া বের হলে কার্বন নাইট্রোজেন চেন্জ হয়ে যায়, ফলে ওই কালো ধোঁয়ায় এসিডের পরিমাণ বেড়ে যায়। অতিরিক্ত এসিড গাছ এবং মাটির জন্য খুবই ক্ষতিকর। ভূমির উর্বরতা কমায় এবং গাছপালা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
এবিষয়ে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ হেলেনা আক্তার নিপা বলেন, অতিরিক্ত কালো ধোঁয়ায় বাতাসে কার্বনডাইঅক্সাইড বেরে যাই। ফলে বৃদ্ধ ও বাচ্চারা সহ সকলেরই শ্বাসকষ্ট হতে পারে, এছাড়া ব্রংকাইটিসহ অন্যান্য মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে।
এবিষয়ে দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোকসানা মিতা বলেন, বিষয়টি সরজমিনে তদন্ত পূর্বক ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।