দামুড়হুদায় মজলিসপুর গ্রামের কৃষকেরা এ আর মালিক সীডস্ প্রাইভেট লিমিটেডের নিকট ফুলকপির বীজ কিনে বিপাকে পড়েছেন।
দামুড়হুদা উপজেলার অন্তর্ভুক্ত মজলিসপুর গ্রামের সাধারণ কৃষকরা তাদের জমিতে ফুল কপি লাগানোর জন্য বীজ কিনতে পাশ্ববর্তী মেহেরপুর জেলার বড় বাজারে অবস্থিত আল্লাহর দান বীজ ভাণ্ডার ও তাঈম এগ্রো সীডের দোকানে যান সেসময় এ আর মালিক সীড এর পরিবেশক মেহেরপুর বড়বাজারে প্রোঃ দয়াল রানা এ আর মালিক সীডস্ প্রাইভেট লিমিটেডের WHITE STONE এর SAKATA সীডস্রে বীজ ভালো হবে বলে কৃষকদেরকে বীজ কিনতে উৎসাহী করলে মজলিসপুর গ্রামের প্রায় ২৫/৩৫ জন কৃষক প্রায় ১৪০ প্যাকেট বীজ ৫৫০ টাকা দরে কেনেন।
কৃষকরা তাদের মাঠের জমিতে ঐ কোম্পানির বীজ দিয়ে বেড তৈরির ৩০/৪০ দিনের মধ্যে বেডেই ফুলকপির গুটি বেরহতে দেখেন এবং ফুলকপি ওজন হয় ৫০-১০০ গ্রামের মতো। সাধারণ বেডে থাকার ৬০ দিন পর চারা রোপণ করার কথা কিন্তুু দেখা গেছে ৩০-৪০ দিন পরই কপি বেরিয়ে যায়। বীজ কিনে ফুল বেরোনোর পর ফলন না হওয়ায় দিশেহারা কৃষকেরা।
উপজেলার মজলিসপুর গ্রামের কৃষক রিপন ৫, হয়রত ৫, আশা আলী ৪, আনাস ৩, ছাদ আলী ৬, সুরুজ ১৩, আবু সাঈদ ৪, মাহাফুজ ২, শান্তি ৩, মামুন২, আজাদ ৩, কালা চাঁদ ২, রাজন ৬, রাকিব ২ প্যাকেট সহ আরো ১০ জন কৃষক বীজ কিনে চরম বিপাকে পড়ে কৃষি অফিসার বরাবর ২৯ ডিসেম্বর, অভিযোগ করেন। এর প্রেক্ষিতে এ আর মালিক সীডস্ প্রাইভেট লিমিটেডের এরিয়া ম্যানেজার (মার্কেটিং ডেভেলপমেন্ট) আব্দুল হালিম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর দামুড়হুদায় কৃষি অফিসে উপস্থিত থেকে আসস্ত করে বলেন, কৃষকদের সাথে মাঠে গিয়ে সরেজমিন তদন্ত করে দেখার পর প্রকৃতি কৃষকদের সাথে কথা বলে ডিলারের মাধ্যমে সমাধানর করা হবে। কিন্তু বিভিন্ন ভাবে কাল ক্ষেপণ করে কোম্পানির প্রতিনিধিরা জানান, আমাদের কোম্পানির বীজ কৃষকরা যে পরিমাণে ক্রয় করেছেন সে পরিমাণের দাম ক্ষতি পূরণ হিসেবে দেওয়া হবে। কৃষকরা তাতে রাজি হয়নি।
কৃষকদের দাবি আমরা নিজ ও পরের জমিতে চাষ করি, সেখানে দেখা যাচ্ছে আমাদের সার – তেল, জমির খরচ, শ্রমিক খরচ দিয়ে অনেক খরচ হয়ে যায়। অথচ কোম্পানিটি আমাদের কে শুধু বীজের দাম দেওয়ার কথা বলছে, তাতে আমরা রাজি নয়। আমাদের দামুড়হুদা কৃষক সমাজের অভিভাবক কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মনিরুজ্জামানের কাছে আমাদের অভিযোগ দেওয়া আছে।
আমাদের যে পরিমাণের ক্ষতি হয়েছে তার ক্ষতিপূরণ আমরা পাব বলে আশা করছি। আর কোন কৃষক ভাইদের ক্ষতি যেন না হয় সেজন্য এধরণের বীজ যাতে বাজারজাত না করতে পারে এবং কৃষক ও কৃষি ধ্বংস করে কেউ যেন বেশি মুনাফা অর্জন করতে না পারেন সে বিষয় টি যথাযথ কর্তৃপক্ষের দেখার জন্য দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা।
লক্ষীপুর ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বজলুর রহমান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বরাবর দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত ২৯ ডিসেম্বও, বিকাল ৩ টার দিকে ফুলকপি আবাদ কারী কৃষকদের মৌলিক অভিযোগের ভিত্তিতে কলাবাড়ী মজলিসপুর গ্রামের ১৫ জন কৃষকের জমি পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন কালে দেখেন কপির বয়স পূর্ণ না হওয়ার আগেই ফুল কপির গাছে ফুল এসে গেছে।
কৃষকদের নিকট থেকে জানতে পারি যে, এ আর মালিক সীড কোঃ লিঃ এর হোয়াইট স্টোন জাতের তাঁরা বপন করেছে। বিক্রেতাদের কাছ থেকে বীজ গুলি ক্রয় করে সেপ্টেম্বর মাসের শেষে এবং অক্টোবর মাসের শেষের প্রথম দিকে রোপণ করা হয়। বিক্রেতা তাদের বলে এই বীজ বপন করলে ফুলকপির ভালো ফলন হবে। কলাবাড়ী ব্লকের মজলিসপুর গ্রামের ১৫ জন কৃষকের ৬.৬৬( একর) জমির ফুল কপি সম্পূর্ণ রুপে ক্ষতি গ্রস্থ হয়, যাহার আনুমানিক ক্ষতির পরিমাণ ৮ লক্ষ টাকা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মনিরুজ্জামান বলেন, উপজেলার মজলিসপুর গ্রামের কৃষকরা কপির বীজ ক্রয় করে ফলন না হওয়ায় স্বশরীরে হাজির হয়ে অভিযোগ করেছিলেন, বিষয় টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখেছি। উল্লেখিত বিষয় টি তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বজলুর রহমানকে সরেজমিন তদন্ত পূর্বক রিপোর্ট দেওয়ার জন্য বলা হয়েছিলো।
মজলিসপুর গ্রামের কৃষক ভাইদের কি পরিমাণ জমিতে ফুল কপি রোপণ করা হয়েছিলো তা সরোজিনে গিয়ে তদন্ত পূর্বক গত পরশু রবিবারে আমি তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেয়েছি।
সেখানে দেখা গেছে কৃষকদের ৬.৬৬ একর জমিতে লাগানো ফুল কপির ক্ষতি হয়েছে। কোম্পানির প্রতিনিধিরা আমাদেরকে জানিয়েছিলেন আমরা কর্তৃপক্ষের নিকট কথা বলে ডিলারদের মাধ্যমে কৃষকদের নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করবো। যেহেতু তারা বিষয় টি কৃষকদের সাথে সমাধানে আসতে পারেন নি, এজন্য তদন্ত প্রতিবেদন টি আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করবো।