দামুড়হুদায় বিলুপ্তির পথে বাবুই পাখির বাসা। দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে বাবুই পাখি ও তার সুদর্শন বাসা। এক সময় এসব বাসা শুধু শৈল্পিক নিদর্শনই ছিল না, মানুষের মনে চিন্তার খোরাক জোগাত এবং আত্মনির্ভশীল হতে উৎসাহ দিত। কিন্তু কালের বিবর্তনে ও পরিবেশে বিপর্যয়ের কারণে পাখিটি আমরা হারাতে বসেছি। একসময় গ্রাম-গঞ্জের তাল, নারিকেল ও খেজুর গাছে এরা বাসা বেঁধে থাকতো। প্রকৃতি থেকে তাল আর খেজুর গাছ বিলুপ্ত হওয়ায় বাবুই পাখিও হারিয়ে যেতে বসেছে।
একসময় দামুড়হুদা তিন প্রজাতির বাবুই পাখি দেখা যেত। দেশি বাবুই, দাগি বাবুই ও বাংলা বাবুই। তবে বাংলা ও দাগি বাবুই এখন বিলুপ্তির পথে। বর্তমানে কিছু দেশি বাবুই দেখা যায়,তবে বাসা তৈরির জন্য বাবুই পাখির প্রথম পছন্দ তাল গাছ। তাল গাছ প্রায় বিলুপ্তর সাথে সাথে দেশি বাবুই পাখি প্রায় বিলুপ্ত। বাবুইপাখি নারিকেল, সুপারি ও খেজুর পাতা, খড়ের ফালি, ধানের পাতা, তালের কচিপাতা, ঝাউ ও কাশবন দিয়ে বাসা বাঁধে। বাসার গঠনও বেশ জটিল, তবে আকৃতি খুব সুন্দর। বাসা যেমন দৃষ্টিনন্দন, তেমনি মজবুত।
বাসা তৈরির শুরুতেই বাসায় দুটি নিম্নমুখী গর্ত রাখে। অর্ধেক বাসা বাঁধার পর তার সঙ্গীকে খোঁজে। স্ত্রী বাবুইটির পছন্দ হলে মাত্র চার দিনে বাসা বাঁধার কাজ শেষ করে। বাসার নিম্নমুখী একটি গর্ত বন্ধ করে ডিম রাখার জায়গা করে নেয়। অন্যটি খোলা রাখে প্রবেশ ও প্রস্থানের জন্য। বাসার ভেতরে-বাইরে কাদা লাগিয়ে রাখে। ফলে প্রবল ঝড়ে বা বাতাসেও টিকে থাকে বাসা। রাতে বাসা আলোকিত করার জন্য জোনাকি পোকা ধরে এনে রাখে। সাথী বানানোর জন্য কত কিছুই না করে পুরুষ বাবুই। স্ত্রী বাবুইকে নিজের প্রতি আকর্ষিত করতে খাল-বিল ও ডোবায় গোসল সেরে ফূর্তিতে নেচে বেড়ায় গাছের ডালে ডালে।
সাধারণত মে থেকে আগস্ট বাবুই পাখির প্রজনন মৌসুম। একটি পুরুষ পাখির একাধিক বাসা ও পরিবার থাকতে পারে। বাবুই পাখি দুই থেকে চারটি ডিম দেয়। স্ত্রী বাবুই ডিমে তা দেয়। দুই সপ্তাহের মধ্যে বাচ্চা ফোটে। তিন সপ্তাহ পর বাচ্চা উড়ে যায়। এরা মূলত বীজভোজী পাখি। তাই এদের ঠোঁটের আকৃতি সহজে বীজ ভক্ষণের উপযোগী চোঙাকার। আর ঠোঁটের গোড়ার দিকটা মোটা। এরা সাধারণত খুঁটে খুঁটে বিভিন্ন ধরনের বীজ, ধান, ভাত, পোকা, ঘাস, ছোট উদ্ভিদের পাতা, ফুলের মধু-রেণু ইত্যাদি খেয়ে জীবন ধারণ করে।
দামুড়হুদার স্থানীয় দুই সাংবাদিক তানজীর ফয়সাল ও শমসের আলী জানান, আগে সোনালি ও সবুজ রঙের বাবুই পাখির কিচিরমিচির ডাক শোনা যেত সন্ধ্যা ও সকালে। এ পাখি যেমন শিল্পী; তেমন ঘুম জাগানিয়া।বাবুই চমৎকার সুরে মানুষের ঘুম ভাঙাতো। এখন সে ভাবে আর বড় তাল আর নারিকেল গাছ দেখা যায় না। বাসা বাঁধার জায়গা না থাকায় এ পাখি বংশ বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়না,বংশ রক্ষার্থে পারি জমিয়েছেন অন্যত্র। সরকারের কৃষি ও বন বিভাগের উদ্যোগে পরিবেশ ও পাখি সংরক্ষণের জন্য তাল, নারিকেল গাছ রোপণ করা জরুরি।এছাড়াও অবৈধভাবে পাখি স্বীকার করে এ পাখি বিলুপ্ত করে থাকেন।
উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা জানান,উপজেলাতে ব্যাপকভাবে তালবীজ রেপন করা হয়েছে। এসকল বীজ যখন তাল গাছে পরিনত হবে। তখন বাবুইপাখি আবাসস্থল তৈরির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।এছাড়া সমাজের সকলের উচিত জমির চারপাশে বা বাড়ির আঙ্গিনায় বেশি করে খেজুর ও নারিকেল গাছ রেপন করা। গাছগুলো রেপন করলে একদিকে যেমন আর্থিক সহায়তা অন্যদিকে শরীরের পুষ্টি চাহিদা যোগাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকবে।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মশিউর রহমান দৈনিক মেহেরপুর প্রতিদিনকে বলেন, ‘এখন কৃষকরা ক্ষেতে ও বীজতলায় কীটনাশক ব্যবহার করায় বাবুই পাখি মারা যায়। বংশ রক্ষার্থে তারা এলাকা ত্যাগ করেছে। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় বাবুই পাখির বংশ বিস্তারে তাল, খেজুর ও নারকেল গাছ রোপণ করতে হবে। সেই সাথে কীটনাশকের অপব্যবহার রোধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।’