দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম (৩৫) ও তার বাবা ওমর আলীকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেছে দুর্বৃত্তরা। আহত ইউএনও বর্তমানে রংপুর ডক্টরস ক্লিনিকে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। তার বাবাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দুই জনকেই ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) রাত আড়াইটার দিকে সরকারি বাসভবনের ভেন্টিলেটর ভেঙে এই ঘটনা ঘটিয়েছে দুষ্কৃতকারীরা। জানা গেছে, উভয়ে শরীর ও মাথায় আঘাত পেয়েছেন।
ইউএনওর বাবা ওমর আলী প্রতিদিন সকালে হাঁটাহাঁটি করেন। কিন্তু আজ সকালে তিনি বাড়ি থেকে হাঁটার জন্য বের না হওয়ায় তার সঙ্গীরা খোঁজ নিতে বাড়িতে যান। পরে বাড়িতে ডাকাডাকি করেও কোনও সাড়া না পেয়ে পুলিশকে খবর দেন তারা। পরে পুলিশ এসে ইউএনও ও তার বাবাকে আহতাবস্থায় দেখে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। ঘটনার সময় প্রহরীকে একটি ঘরে বেঁধে রাখা হয়েছিল বলে জানা গেছে।
এখন পর্যন্ত বাড়ির কোনও কিছু খোয়া গেছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এই ঘটনা ঘটেছে।
এই ঘটনা জানার পরপরই দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মাহমুদুল আলম, পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেনসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গেছেন।
ঘোড়াঘাট থানার ওসি আমিরুল ইসলাম বলেন, এই ঘটনায় একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ঘটনাটি বিস্তারিতভাবে তদন্ত করা হচ্ছে।
ঘোড়াঘাট পৌরসভার মেয়র আব্দুস সাত্তার মিলন বলেন, প্রশাসনের কর্মকর্তারা এখনও বিষয়টি তদন্ত করছেন। এখনও সঠিকভাবে কিছুই বলা যাচ্ছে না, ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। এখানে প্রশাসনের কর্মকর্তারা আছেন। হত্যার উদ্দেশ্যে ডাকাতির মতো একটি বিষয়। আহতরা খুবই গুরুতর এবং রংপুরে পাঠানো হয়েছে। তাদের ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হতে পারে।
পরে জানা গেছে, ঘোড়াঘাট উপজেলার ইউএনও ওয়াহিদা খানমের মাথায় আঘাতের কারণে হাড় ভেঙে সেটা মস্তিষ্কে ঢুকে গেছে। তার এক সাইড অবশ হয়ে আছে।
ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের পরিচালক ও প্রখ্যাত নিউরোসার্জন অধ্যাপক ডা. কাজী দীন মোহাম্মদ সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ইউএনও ওয়াহিদাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। আমরা একটি অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। রাত ৯টার দিকে এটা করা হতে পারে।
দুর্বৃত্তদের হামলায় গুরুতর দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানমকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বৃহস্পতিবার বিকাল সোয়া ৩টার দিকে তাকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় আনা হয়। ওই হামলায় ইউএনও ওয়াহিদা খানমের বাবাও গুরুতর আহত হন।
ইউএনও ওয়াহিদা খানম নিজের সরকারি বাসভবনে দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হন। বুধবার দিবাগত রাত ২টার পর দুর্বৃত্তরা তার বাসায় ঢুকে ধারালো অস্ত্র ও হাতুড়ি জাতীয় কিছু একটা দিয়ে ইউএনও এবং তার বাবার ওপর হামলা চালায়। ইউএনওর মাথায় গুরুতর আঘাত এবং তার বাবাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়।
পুলিশ জানায়, ইউএনওর বাসভবনের ভেন্টিলেটর দিয়ে বাসায় ঢুকে ওয়াহিদা ও তার বাবা ওমর আলীর ওপর হামলা হয়।
আহত ওয়াহিদা খানমকে প্রথমে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে তাকে এয়ার অ্যাস্বুলেন্সে করে ঢাকার আনা হয়। ওয়াহিদার বাবাকে ঘোড়াঘাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ওয়াহিদার বাবা নওগাঁ থেকে মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। তার স্বামী মেজবাহুল হোসেন রংপুরের পীরগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। তাদের তিন বছর বয়সী এক ছেলে রয়েছে।