ইউক্রেন যুদ্ধের তহবিলকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার আইনপ্রনেতাদের ভোটে পদচ্যুত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে এমন ঘটনা প্রথমবারের মতো ঘটলো। সোমবার মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার কেভিন ম্যাকার্থির বিরুদ্ধে আনা এই অনাস্থা প্রস্তাব পাস হয়েছে। অভিযোগটি তুলেছিলেন তার দল রিপাবলিকান পার্টির একজন আইনপ্রণেতা ম্যাট গ্যাটেজ। অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ২১৬ ভোট এবং বিপক্ষে পড়ে ২১০ ভোট।
ইউক্রেনে তহবিল সংক্রান্ত হোয়াইট হাউজের সঙ্গে গোপনে একটি চুক্তিতে যাওয়ার জন্য ম্যাকার্থির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন গ্যাটেজ। যদিও বিষয়টি অস্বীকার করে স্পিকার ম্যাকার্থি বলেন, ইউক্রেন ইস্যুতে আলাদা কোনও চুক্তি হয়নি।
শুধু ম্যাকার্থি নয়, যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতা, সিনেটর সহ অনেকের বিুরদ্ধে ঘুষ দুর্নীতির অভিযোগ আছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নানান অভিযোগে এখন আদালতে চক্কর দিচ্ছেন। বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আছে তাঁর ছেলে হান্টার বাইডেন ও ভাইদের বিরুদ্ধে ট্যাক্স ফাঁকিসহ ক্ষমতার অপব্যবহারের। এসব অভিযোগের তদন্ত চলছে।
গত ২২ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সিনেটর বব মেনেনডেজ ও তাঁর স্ত্রী নাদিন দুর্নীতির অভিযোগ অভিযুক্ত হয়েছেন। মার্কিন সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান মেনেনডেজের বিরুদ্ধে এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো দুর্নীতির অভিযোগ আনা হলো। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি অফিসের সূত্রমতে, মেনেনডেজ ও তাঁর স্ত্রী নিউ জার্সির তিন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে সোনা, নগদ অর্থ, বিলাসবহুল গাড়ি ও অন্যান্য মূল্যবান সম্পদ ঘুষ নিয়েছেন। এসবের পরিমাণ কয়েক লাখ ডলার। নিউ জার্সির ডেমোক্রেটিক পার্টির সিনেটরের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো, তিনি তাঁর পদের ক্ষমতা ব্যবহার করে তিন ব্যবসায়ী ও মিসরের সরকারকে সুবিধা পাইয়ে দিয়েছেন। অভিযুক্ত তিন ব্যবসায়ীর একজনের পৈতৃক বাড়ি মিসরে।
ডেমক্র্যাটিক দলীয় সিনেটর এই বব মেনেনডেজ রিপাবলিকান দলীয় সিনেটর টড ইয়াং এর নেতৃত্বাধীন সিনেটের আটজন সদস্য নিয়ে বাংলাদেশের র্যাবের সিনিয়র কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারির জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে মেনেনডেজ এই কাজ করেছিলেন প্রশাসন। বব মেনেনডেজই র্যাবের বিরুদ্ধে স্যাংশন দেওয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করেন। বিভিন্ন দেশে দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ করে বেড়ানো যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রনেতারা যে অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন কাজ করেন এবং বিভিন্ন দেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বেড়ান, এটিই তার বড় উদাহরণ।
এ বিষয়ে কলামিস্ট বেলেন ফার্নান্দেজ লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে চালু থাকা একটি মিথ হলো, দুর্নীতি পুরোপুরি অন্য দেশের ব্যাপার। কম সভ্য দেশ, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের শত্রুদের বিষয় এটি। গণতন্ত্রের প্রতি যাদের অঙ্গীকারের ঘাটতি রয়েছে, আইনের শাসনের প্রতি যাদের অশ্রদ্ধা রয়েছে,দুর্নীতি হলো তাদের বিষয়। যুক্তরাষ্ট্রের সবকিছুই পূতঃপবিত্র আর তাদের কর্মকর্তারা সবাই মহান।
সাবেক কুটনীতিকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিধিন মানবাধিকার লঙন হচ্ছে। প্রতিদিনই গুলিতে নিরীহ মানুষ মরছে। তাদের দেশে ঘুষ দুর্নীতি অবাধে চলছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প থেকে শুরু করে বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে। কিন্তু তারা বড় রাষ্ট্র, নিজেদের বিশ্ব মোড়ল, তাই তাদের নিজেদের অপরাধটা দেখার সময় নেই। তারা অন্য দেশ নিয়ে মাথা ঘামায়। এটা কোনোভাবেই কূটনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে না।
সাবেক রাষ্ট্রদূত, এ কে এম আতিকুর রহমান বলেন, দেখেন আমেরিকা তো আমেরিকা। তাদেরকে কেউ কিছু বলতে পারবে না। আপনি যখন ভুল করবেন তখন তারা আপনাকে বলবে। তিনি বলেন, তারা তাদের কথা বলতে থাকুক। এগুলো শুনার দরকার নাই। আমরা যদি রাষ্ট্র পরিচালনায় সমারোচনার উর্ তাকি তাহলে কেউ সমালোচনার সুযোগ পাবে না।
সাবেক এই কূটনীতিক বলেন, আমেরিকা নিজে দেশের বিষয়ে মাতা ঘামায় না। অন্যদের বিষয়ে তাদের মাথা ব্যাথা বেশি। তিনি বলেন, কোথাও কোনো ভুল হলে তারা পরামর্শ দিতে পারে। যেহেতু তারা আমাদের উন্নয়ন সহযোগি তারা এটা দিতে পারে। কিন্ত স্যাংশন, নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে না। আমাদের পক্ষ থেকেই কেউ না কেউ তাদেরকে নানাভাবে সহযোগিতা করছে , এ কারণেই তারা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
আরেক সাবেক কূটনীতিক মুন্সি ফয়েজ আহমেদ বলেন, তারা নিজের দেশেই যেটা মানে না সেটা তারা অন্যের দেশে প্রয়োগ করে। তারা কোনোভাবেই স্যাংশন দেওয়ার অধিকার রাখে না। তারপরও তারা সেটা করেছে। কই, তারা তো পাকিস্তান, মিশরের বিরুদ্ধে কোনো স্যাংশন বা নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। সেসব দেশে তো খুব খারাপ অবস্থা। গণতন্ত্র নেই।
তিনি বলেন, মূলক আমেরিকা ‘‘সংকীর্ণ ও সাময়িক স্বার্থ ’’ এসব কাজ করে। এটা কোন পক্ষের জন্যই ভালো ফল বয়ে আনে না। আর দীর্ঘমেয়াদে তো নয়ই। কোনো পক্ষই উপকৃত হতে পারে।
মুন্সি ফয়েজ আহমেদ আরও বলেন, বাংলাদেশের দোষ দেখার মত তাদের আঙ্গুল দেওয়ার সুযোগ নেই। ভুলভ্রান্তি হলে তারা কূটনৈতিক পদ্ধতিতে পরামর্শ দিতে পারে। ধরিয়ে দিতে পারে। কিন্তু পাবলিকলি এগুলো বলে আমাদের দেশকে তারা করা হয়। এটা মনে রাখতেম হবে তারা নিজেদের স্বার্থই এসব নিষেধাজ্ঞা, স্যাংশন দেয়।
তিনি বলেন, আমেরিকা বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ বাজায়, সেসব দেশে যুদ্ধে সহযোগিতা করতে তাদের সৈন্য পাঠায়। কিন্ত তাদের সৈন্যদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙনের বিচার করা যাবে না। ঘুষ দুর্নীতি প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেনের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আছে। ট্রম্পের বিরুদ্ধে তো নানান অভিযোগে বিচার শুরু হয়েছে।