বুধবার ১৩তম দিনের নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়ে এমন প্রতিশ্রুতি দেন ক্ষমতাসীন দলের উত্তরের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ও দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। আতিক বলেন, ঘরে বসেই হোল্ডিং ট্যাক্স দিতে পারবেন নাগরিকরা। আর তাপস বলেছেন, নাগরিকদের গৃহকর বা হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়বে না বরং কমবে।
নির্বাচিত হলে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনকে দুর্নীতিমুক্ত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ও ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। তারা প্রায় একই সুরে বলেন, নির্বাচিত হলে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে। সিটি কর্পোরেশনে অতিরিক্ত ব্যয় অথবা হয়রানির কোনো অবকাশ থাকবে না।
রায়েরবাজার-জাফরাবাদ এলাকার পুলপাড় মোড় থেকে দিনের নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন আতিকুল ইসলাম। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি বলেন, আকাশের যত তারা, সিটি কর্পোরেশনের তত ধারা। এখানে কাজ করতে গেলে অনেক সমস্যারই মোকাবেলা করতে হয়। তাও আমরা কাজ করে যাব।
দুর্নীতিমুক্ত করে গড়ে তোলা হবে সিটি কর্পোরেশনকে। যদি আপনারা আমাকে এবং আমাদের কাউন্সিলরদের নির্বাচিত করেন তবে সবার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে টাউন হল মিটিংয়ের মাধ্যমে। নৌকা প্রতীকের এই প্রার্থী বলেন, যদি আপনারা আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেন তবে হোল্ডিং ট্যাক্স দেয়ার জন্য আঞ্চলিক কর্মকর্তার কার্যালয়ে যেতে হবে না। ঘরে বসেই হোল্ডিং ট্যাক্স দিতে পারবেন নাগরিকরা।
আতিকুল বলেন, পোস্টারে শহরে সৌন্দর্য নষ্ট হয়। আমি ইসির দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। তাদের কাছে আমার আহ্বান- তারা এমন নির্দেশনা দিক যেন পোস্টার ব্যবহার করা না যায়। যেন এরপর থেকে নির্বাচনে পোস্টার ব্যবহার না করে ডিজিটাল মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচার করা যায়। মেয়র নির্বাচিত হলে পোস্টার লাগানোর জন্য নির্দিষ্ট এলাকা ঠিক করে দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, একটি সুস্থ, সচল ঢাকা গড়ে তুলতে আমাদের মশক নিধন করতে হবে। জলাবদ্ধতা দূর করতে হবে। যানজট নিরসন করতে হবে। আমরা এর সবকিছুই করব। আমি মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হলে ডেঙ্গু নির্মূলে ও এডিস মশা নিধনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব থাকবে। আপনারা জানেন, আগে সিটি কর্পোরেশনে কোনো কীটতত্ত্ববিদ ছিলেন না। ৯ মাসের দায়িত্ব পালনকালে আমি কীটতত্ত্ববিদ নিয়োগ দিয়েছি। আগামী দিনেও এডিস মশা নির্মূলে যা যা করা দরকার, আমরা করব।
এ সময় ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, ৩৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি রবিউল আলম, সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান ভূঁইয়া, ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী শেখ মোহাম্মদ হোসেন, সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১২ (সাধারণ ওয়ার্ড ৩১, ৩৩, ৩৪) এর নারী কাউন্সিলর প্রার্থী রোকসানা আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে দুপুর ১২টার দিকে রায়েরবাজার আসেন আতিকুল। পুলপাড় এলাকার সরু মোড়টির উত্তর ও দক্ষিণে রাস্তার মোড়ে বাঁশ দিয়ে আটকে দেয়া হয়। গাড়ি ও রিকশা অন্য গলি দিয়ে যেতে নির্দেশ দেয়া হয়। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে গণসংযোগ শুরু করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। সেখান থেকে আতিকুল ইসলাম ঢাকা ১৩ আসনের মুক্তি সিনেমা, সাদেক খান রোড, বটতলা, কাঁটাসুর, বাঁশবাড়ি, শিয়া মসজিদ, মোহাম্মদী হাউজিং, বেড়িবাঁধ এলাকায় গণসংযোগ ও পথসভা করেন।
বিকালে ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের আদাবর, মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে মতবিনিময় সভা করেন আতিকুল ইসলাম। এ সময় মোহাম্মদপুরের বৈশাখী মাঠের করুণদশা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক বছরের মধ্যে এটিকে আধুনিক মাঠ করা হবে। এছাড়া মোহাম্মদপুর এলাকায় সাতটি আধুনিক পার্ক করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান। সন্ধ্যায় মহাখালী বাসস্ট্যান্ড মালিক সমিতির সঙ্গে মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করেন ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী।
তাপস যা বললেন : বুধবার দুপুরে পুরান ঢাকার কারা কনভেনশন হলে ‘সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের-ব্যবসায়ী সম্মেলন ২০২০’ অনুষ্ঠানে যোগ দেন ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনকে সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত সংস্থা হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তাপস বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আক্ষেপ করে বলেছেন, ‘আমি একটি স্বল্পোন্নত দেশকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত করলাম। ৬০ হাজার কোটি টাকার বাজেটকে ৫ লাখ কোটি টাকায় উন্নীত করলাম। ৫৬০ ডলার থেকে মাথাপিছু আয় থেকে ১৯শ ডলারে উন্নীত করলাম। কিন্তু এতগুলো প্রকল্প করছি।
পদ্মা সেতু করছি। কিন্তু আমি দুঃখের সঙ্গে দেখছি আমার প্রকল্পের টাকা উইপোকায় খেয়ে নেয়।’ তাপস বলেন, আমি আপনাদের সমর্থনে নির্বাচিত হতে পারলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে কোনো উইপোকার জায়গা হবে না। এটাকে সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত সংস্থা হিসেবে গড়ে তুলব। আধুনিক সংস্থা হবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। কোনো রকম উৎকোচ, অতিরিক্ত ব্যয় অথবা হয়রানির কোনো অবকাশ সেখানে থাকবে না। মেয়র নির্বাচিত হলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নাগরিকদের গৃহকর বা হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়বে না বরং কমবে বলেও জানান তাপস।
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিমের সভাপতিত্বে ব্যবসায়ী সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ব্যবসায়ী নেতা কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, একে আজাদ, শফিউল আলম মহিউদ্দিন, আনোয়ারুল আলম চৌধুরী পারভেজ, রেজাউল করিম রেজনু, সিদ্দিকুর রহমান প্রমুখ ।
সম্মেলনে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের নেতারা তাদের বক্তব্যে অপর্যাপ্ত পার্কিং, ব্যবসায়ীদের ট্রেড লাইসেন্স এফবিসিসিআই থেকে দেয়া, পুরনো জেলখানার স্থানে আধুনিক সুপরিসর পার্কিং, চকবাজার সংযোগ সড়ক প্রশস্ত করা, কাঁচাবাজার আধুনিক ও প্রশস্ত করা, পুরান ঢাকায় আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হয়রানি রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা, কেমিক্যাল কারখানা, গোডাউন সিটি কর্পোরেশনের জায়গা বরাদ্দের ভিত্তিতে সরিয়ে নেয়ার প্রতিশ্রুতিসহ ২৮টি দাবি উপস্থাপন করেন।
এ বিষয়ে তাপস বলেন, এখানে মাত্র ২৮টি সমস্যার কথা বলা হয়েছে। আমি বিচলিত নই। আমি ভেবেছিলাম ২৮শত সমস্যা হয়তোবা দেবেন। তিনি আরও বলেন, আমি নিজেও একজন ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ীদের সমস্যা আমি অনুধাবন করতে পারি। একজন ব্যবসায়ী কী চিন্তা চেতনা করেন এবং তার দৈনন্দিন কী চিন্তাচেতনা থাকে, কী সমস্যা থাকে, সেটা আমি অনুধাবন করি। সুতরাং এটুকু আপনাদের আমি বলি, আমার কাছে কোনো জাদুর কাঠি, কিংবা কোনো জাদুর টুপিও নেই। আমি একজন বাস্তবভিক্তিক ব্যক্তি।
ছোটকাল থেকেই নিরলস পরিশ্রম, একাগ্রতা সততা দিয়ে এই পর্যন্ত এসেছি। আপনাদের কোনো জাদুকরী স্বপ্ন দেখাব না, দেখাইওনি। আমার দেয়া পাঁচটি ধাপের মধ্যে কোনো স্বপ্ন নেই। পঞ্চমের বাস্তবতা আছে। আমি এটুকু বলতে পারি, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন হবে একটা বাস্তব ব্যবসায়ীদের সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান। এ সময় ব্যবসায়ীদের জন্য দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে হেল্প ডেক্স করা হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে এদিন রাজধানীর হাজারীবাগ ২২নং ওয়ার্ড থেকে শুরু করে ১৪, ১৫, ১৬, ১৭ এবং ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেন তাপস। এ সময় সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থী ছাড়াও আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সুত্র-যুগান্তর